বেতন না কমালে মেসিকে রাখতে পারবে না বার্সা
প্রথমে বেতন স্থগিতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। খেলোয়াড়েরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর বেতন কমানোর চেষ্টা চলছে। বেশির ভাগ খেলোয়াড় তাতেও রাজি নন। এদিকে বেতন না কমালে আসছে জানুয়ারিতে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে বার্সেলোনা।
বেতন কমানো নিয়ে লিওনেল মেসি-আঁতোয়ান গ্রিজমানদের যে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বার্সেলোনা পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা কার্লেস তুসকেতস। এবার বার্সার সভাপতি হওয়ার দৌড়ে থাকা টনি ফ্রেইজা কথা বললেন মেসিকে নিয়ে। আর্জেন্টাইন তারকাকে তাঁর বর্তমান পারিশ্রমিকে ক্লাব ধরে রাখতে পারবে না—মন্তব্য করেন ফ্রেইজা।
বার্সা সভাপতির পদ ছেড়েছেন জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ। ফ্রেইজা সভাপতি পদপ্রার্থী। সংবাদমাধ্যম ‘এল কুরুবিতো’কে তিনি বলেন, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হলে মেসিকে বেতন কমাতে হবে। এ মৌসুম শেষেই মেসির চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। এরপর তিনি বার্সায় থাকবেন কি না তা নিয়ে গুঞ্জন আছে।
গত আগস্টেই বার্সা ছাড়ার ইচ্ছার কথা ক্লাবকে বুরোফ্যাক্স করে জানিয়েছিলেন মেসি। তখনকার ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর সঙ্গে মোটেই বনিবনা হচ্ছিল না তাঁর।
কিন্তু ‘রিলিজ ক্লজ’ আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে মেসিকে ধরে রাখতে সমর্থ হয় বার্সা। মেসি পরে নিজেই চুক্তির মেয়াদ শেষ করার কথা জানিয়েছেন। চুক্তির মেয়াদ শেষে তিনি ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়তে পারবেন। কিন্তু এর আগে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, বার্তোমেউ সভাপতির পদ ছাড়লে বার্সায় চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারেন মেসি।
বার্তোমেউ যেহেতু সরে দাঁড়িয়েছেন তাই সম্ভাবনাটা থাকলেও বেতন নিয়ে ঝামেলাও মেসির বার্সায় থেকে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। মেসি বার্সা ছাড়ার ইচ্ছা জানানোর পর তখন তাঁকে কিনতে আগ্রহী ছিল ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজির মতো ক্লাব।
এদিকে বার্সা পড়েছে প্রকট আর্থিক সমস্যায়। এ মুহূর্তে ক্লাবটির ঋণের পরিমাণ ৭০ কোটি পাউন্ড। খরচের অধিকাংশ যেহেতু খেলোয়াড়দের বেতনেই ব্যয় হয়, এ খাতেই খরচ কমানোর সর্বোচ্চ সুযোগ তাদের। ১০০ কোটি পাউন্ড তারা বেতনের পেছনেই খরচ করে। করোনাভাইরাসের মধ্যে মাঠে দর্শক ফেরাতে না পারায় ক্লাবকে যেকোনোভাবেই হোক ৩০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে আনতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্রেইজা চান মেসিকে বার্সায় ধরে রাখতে। সে জন্য পারিশ্রমিক কমাতে হবে। চলতি বেতনে মৌসুম শেষে মেসিকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন ফ্রেইজা।
সংবাদমাধ্যমকে ফ্রেইজা বলেন, ‘মেসির সঙ্গে আমরা এ মুহূর্তে বার্সেলোনার সেরাদের নিয়ে ঠান্ডা মাথায় মুখোমুখি কথা বলব। তাকে এবং যারা চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর অপেক্ষায় কিংবা সই করানো হবে—সবাইকে আমরা নতুন প্রস্তাব দেব যা এত দিন পর্যন্ত পেয়ে আসা পারিশ্রমিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না।
কারণ আয়ের পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে তাই নতুন পথ বের করতে হবে। এ জন্য মেসিকে জয় করা কিংবা পটানোর দরকার নেই। তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে এবং জানতে হবে দুই পক্ষ কি চায়। সে কি চায় এবং বার্সেলোনা কি চায়। আমরা মনে করি মেসির ফুটবলে আরও অনেক কিছু দেওয়ার বাকি।’
সাম্প্রতিক সময়ে বার্সা-মেসি দ্বন্দ্বে বেশ বড় ইমেজ সংকটেও পড়েছিল কাতালান ক্লাবটি। তবে ফ্রেইজা এসব উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি সামনে এগিয়ে যেতে চান, ‘বার্সেলোনার রয়েছে ১২১ বছরের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা। আমরা সামনে এগিয়ে যাব।’
তবে পারিশ্রমিক কমানো নিয়ে মেসিরা যে ক্লাবের ডাকে এর আগে সাড়া দেননি তা নয়। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই নিজেদের বেতন ৭০ শতাংশ কমিয়ে নিয়েছিলেন মেসিরা। কিন্তু সে সময়ও তাঁদের খেপিয়ে দিয়েছিল ক্লাব।
বেতন কতটুকু কমালে ক্লাবের সঙ্গে জড়িত সবার চাকরি বাঁচানো সম্ভব, সেটা বের করার জন্য সময় নিচ্ছিলেন মূল দলে থাকা খেলোয়াড়েরা। এদিকে কাতালান কিছু পত্রিকার মাধ্যমে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কিছু সূত্র খবর ছড়িয়ে দিয়েছিল, করোনাতেও বেতন কমাতে রাজি নন মেসিরা! এভাবে অপপ্রচার করে খেলোয়াড়দের সম্মান নষ্ট করায় এর কড়া জবাব দিয়েছিলেন মেসি ও লুইস সুয়ারেজ।