২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মাহরেজের পেনাল্টি-ব্যর্থতায় অপূর্ণ সিটির ফেরা

মাহরেজ পেনাল্টি থেকে ব্যর্থ না হলে হয়তো জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ত সিটিছবি: প্রিমিয়ার লিগ ওয়েবসাইট

প্রথমার্ধ শেষে পেপ গার্দিওলার মুখ অন্ধকার। অনেক হিসেব-নিকেশ, উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা পড়ে নেওয়া যাচ্ছিল ম্যানচেস্টার সিটি কোচের মুখে। ওয়েস্ট হামের মাঠে যে তখন সিটি ২-০ গোলে পিছিয়ে!

৮৬ মিনিটে আবার গার্দিওলার মুখ অন্ধকার। এবার সেখানে রাজ্যের হতাশা। জয়টা বুঝি হাতছাড়া হয়ে গেল! এত প্রয়োজনের মুহূর্তেই কিনা পেনাল্টি কাজে লাগাতে ব্যর্থ রিয়াদ মাহরেজ!

প্রথমার্ধের শেষ থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শেষ হওয়ার চার মিনিট আগের সময়টুকুতে গার্দিওলার মুখে হাসি জেগেছিল। বিরতিতে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা সিটি যে ততক্ষণে ম্যাচে সমতা নিয়ে এসেছে! কিন্তু মাহরেজের পেনাল্টি ব্যর্থতায় আর সিটির ফেরার গল্পটা পূর্ণতা পেল না। ওয়েস্ট হামের মাঠ থেকে ২-২ গোলের ড্র নিয়েই ফিরেছে গার্দিওলার সিটি।

দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ প্রত্যাবর্তনের কারণে গার্দিওলাকে অন্তত হারের হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়নি
ছবি: প্রিমিয়ার লিগ ওয়েবসাইট

লিভারপুলের লিগ জয়ের স্বপ্নে কি তাতে হাওয়া লাগল? কিছুটা! এই মুহূর্তে সিটির পয়েন্ট ৩৭ ম্যাচে ৯০, এক ম্যাচ কম খেলে লিভারপুলের পয়েন্ট ৮৬। সিটি আজ ওয়েস্ট হামের মাঠে একটা পয়েন্ট পেয়ে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়ে গেল, গোল ব্যবধানের হিসাব আর কাজে আসছে না। সিটি শেষ ম্যাচে পয়েন্ট না হারালে তারাই শিরোপা জিতবে।

নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সিটির শেষ ম্যাচটা কার বিপক্ষে? লিভারপুলেরই কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ডের অধীন দল অ্যাস্টন ভিলা! আর লিভারপুলের বাকি দুই ম্যাচের একটি আগামী পরশু সাউদাম্পটনের মাঠে, শেষটি ২২ মে নিজেদের মাঠে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে। অবশ্য মঙ্গলবার সাউদাম্পটনের মাঠে লিভারপুল হেরে গেলে সেখানেই শিরোপার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

আজ ওয়েস্ট হাম-ম্যান সিটি ম্যাচের ৪৫ মিনিট পর সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলেন সম্ভবত লিভারপুলের সমর্থকেরাই। লিগের শেষ কয়েকটি ম্যাচের মধ্যে যে ম্যাচগুলোতে সিটির পয়েন্ট হারানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল, তার মধ্যে ওয়েস্ট হাম ম্যাচটিই সম্ভবত ছিল তালিকার শীর্ষে। তাতে সিটির আক্রমণের পর আক্রমণ সামলে জ্যারড বাওয়েনের দুই গোলে ৪৫ মিনিটে সিটি পিছিয়ে ২-০ ব্যবধানে, লিভারপুল সমর্থকদের আশার সলতে জ্বলে ওঠারই কথা!

সিটি সমর্থকেরা তখন হয়তো নিজেদের রক্ষণকেই দুষছেন! একে তো ওয়াকার, স্টোনসদের চোটের কারণে সিটি রক্ষণে শক্তি হারিয়েছে। তার ওপর নির্ভরযোগ্য বাকি দুই সেন্টারব্যাক এমেরিক লাপোর্ত ও নাথান আকের দুজনই বাঁ পায়ের।

সে কারণেই কি না, দুজনকে একসঙ্গে খেলান না সিটি কোচ গার্দিওলা। তারওপর আকের ফিটনেস নিয়েও শঙ্কা আছে। লাপোর্তের সঙ্গে তাই রক্ষণে জুটি বাঁধেন ৩৭ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনিও। কিন্তু সেন্টারব্যাকে দুজনের ভঙ্গুর জুটি আর লেফটব্যাকে হড়বড়ে ওলেক্সান্দর জিনচেঙ্কো—প্রথমার্ধে সিটির পিছিয়ে পড়ার কারণ এটিই।

প্রথমার্ধে ওয়েস্ট হামের দুই গোলই এসেছে বাওয়েনের (ডানে) সৌজন্যে
ছবি: প্রিমিয়ার লিগ ওয়েবসাইট

২৪ মিনিটে প্রথম গোল, ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয়টি—দুবারই ডানদিক থেকে ঢুকে গোল করেছেন ওয়েস্ট হামের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বাওয়েন, দুবারই জিনচেঙ্কোকে এড়িয়ে লাপোর্ত ও ফার্নান্দিনিওর ফাঁক গলে ঢুকেছেন সিটি বক্সে। তবে ২৪ মিনিটে তাঁর উদ্দেশ্যে মাঝমাঠ থেকে যে দারুণ পাস বাড়িয়েছেন ফোরনালস, সেটিও বাওয়েনের গোলের মতোই মুগ্ধতা জাগানিয়া।

সিটির জন্য হতাশার আর লিভারপুলের জন্য প্রেরণার এক পরিসংখ্যান নিয়ে তখন হাজির ফুটবলের পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট অপটা। প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ যে ৫২ ম্যাচে বিরতিতে দুই বা তার বেশি গোলে পিছিয়ে ছিল সিটি, তার একটিও তারা জেতেনি। ৫১টিতেই হেরেছে, একটি শুধু ড্র করেছিল। আজ দুই বা তার বেশি গোলে পিছিয়ে পড়ার ৫৩তম বারে এসে ড্রয়ের সংখ্যাটা ২-এ উঠিয়ে নিয়ে গেল সিটি।

গ্রিলিশের এই ভলিতে সিটির ফিরে আসার শুরু
ছবি: প্রিমিয়ার লিগ ওয়েবসাইট

দুটি গোলেই ভাগ্যের ছোঁয়া! ৪৯ মিনিটে জ্যাক গ্রিলিশের দারুণ ভলি ওয়েস্ট হামের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফাঁকি দিয়ে হ্যামার্স গোলকিপার ফাবিয়ানস্কিকে, ৬৯ মিনিটে সিটির দ্বিতীয় গোলটি ওয়েস্ট হাম ডিফেন্ডার ভ্লাদিমির কুফালের আত্মঘাতী।

এতে যদি ‘ভাগ্য বিজয়ীদেরই সঙ্গে থাকে’ ভেবে তৃপ্তি হয় সিটি সমর্থকদের, ৮৬ মিনিটে তৃপ্তি শেষ। বক্সে সিটির স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল জেসুসকে ওয়েস্ট হাম ডিফেন্ডার ডসন বাধা দিয়েছেন, এই অভিযোগে পেনাল্টি দেন রেফারি, তা-ও ভিএআরে দেখার পর। কিন্তু নিজের বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে মাহরেজের পেনাল্টি দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন হ্যামার্স গোলকিপার ফাবিয়ানস্কি।

সিটির আর জেতা হলো না। তাতে নিশ্চিত হলো, মঙ্গলবার সাউদাম্পটনের মাঠে লিভারপুল হেরে না গেলে ইংলিশ লিগের শিরোপাদৌড় গড়াচ্ছে শেষ দিনে।