মালদ্বীপে ‘শিক্ষাসফর’ শেষে জামালদের চোখ সিলেটে
মালদ্বীপ সফরে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার রাতে মালেতে ফিফা প্রীতি ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে ২–০ গোলে হেরেছেন জামাল ভূঁইয়ারা।
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে হাভিয়ের কাবরেরার শুরুটা ভালো হলো না। তবে ২৯ মার্চ সিলেটে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে ভালো কিছু করার আশা নিয়ে আজই দেশে ফিরছে বাংলাদেশ। আগামীকাল বাংলাদেশ দল সিলেট যাবে।
মালদ্বীপের মাঠে বাংলাদেশের হারে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দ্বীপদেশটিতে সব সময়ই হেরেছে বাংলাদেশ। গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও মালদ্বীপ জেতে ২-০ গোলে। ২০১৬ সালে টম সেন্টফিটের অধীনে বাংলাদেশ দল ৫–০ গোলে উড়ে গিয়েছিল মালদ্বীপের কাছে।
তবে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচে গত নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্টে মালদ্বীপকে ২–১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই জয় আসে ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপকে হারানোর ১৮ বছর পর।
তাই নতুন কোচের আশা ছিল জয় নিয়ে ফিরবেন মালে থেকে। কিন্তু জয় দূরে থাক, বাংলাদেশ ড্র করার মতো ফুটবলও খেলতে পারেনি। প্রথমার্ধ বাজে কেটেছে। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকলেও সেটা মালদ্বীপের মতো দলকে তাদেরই মাঠে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো ছিল না।
হারের চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ কেমন ফুটবল খেলেছে? নতুন কোচের পরিকল্পনার সঙ্গে কি মানিয়ে খেলতে পেরেছে? খেলা দেখে অবশ্য মনে হয়নি কোচ যেভাবে চেয়েছেন, খেলাটা হয়েছে সে রকমই। কোচ চেয়েছে ‘বিল্ডআপ ফুটবল। নিচ থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ।’
কিন্তু সেটা হয়নি। বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ মাসুদ কায়সার মালে থেকে আজ প্রথম আলোকে বললেন, ‘কোচের পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আসলে সময় লাগবে। কোচও একই কথা বলেছেন।’
ম্যাচের সব বিভাগেই বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। তবে কায়সার মনে করেন, বাংলাদেশ দল সমানতালেই খেলছে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। টেকনিক্যাল দিক থেকে কায়সারের চোখে হারের কারণ, ‘প্রতিপক্ষকে প্রেসিংয়ের টাইমিংটা ভালো হয়নি আমাদের। ফলে প্রথমার্ধে ওরা আমাদের ব্লক সহজে ভাঙতে পেরেছে। দ্বিতীয়ার্ধে ব্লক ভালো ছিল। যে কারণে এই অর্ধে খেলাটাও প্রথমার্ধের তুলনায় ভালো হয়েছে।’
বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে হাভিয়ের কাবরেরার প্রথম একাদশে ছিল না বড় কোনো চমক। গত কয়েক বছরে মোটামুটি নিয়মিত খেলেন যাঁরা, তাঁদের নিয়েই দল সাজিয়েছেন তিনি। ৪–৪–২ ছকে দুই স্ট্রাইকার ছিলেন সুমন রেজা ও রাকিব হোসেন। সুজন রেজা ঘরোয়া ফুটবলে প্রথাগত নাম্বার নাইন হিসেবে খেললেও রাকিব খেলেন উইং ফরোয়ার্ড হিসেবে। সেই রাকিবকে কোচ নিয়ে আসেন সেন্টার ফরোয়ার্ডে। কিন্তু দু–তিনটি বিচ্ছিন্ন সুযোগ ছাড়া বাংলাদেশের আক্রমণভাগ সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি মালদ্বীপের রক্ষণকে।
জাতীয় দলের গোলকিপার কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য এই হার নিয়ে বললেন, ‘প্রথম গোলটা আমাদের অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে করেছে মালদ্বীপ। সহকারী রেফারি অফসাইড দেননি। এ ছাড়া গোটা ম্যাচে আরও কয়েকটি অফসাইড দেননি সহকারী রেফারি। দ্বিতীয় গোলটির আগে আমাদের স্টপার বাদশার (টুটুল হোসেন) পায়ে লাগে বল।’
ফল যা–ই হোক, বিপ্লব ও মাসুদ কায়সার দুজনই মনে করেন, বাংলাদেশ খারাপ খেলেনি। গোলও আসতে পারত। প্রথম গোল খাওয়ার আগে সুমন রেজার হেড বাইরে যায়। তবে আক্রমণে আরও ধার বাড়ানোর সুযোগ দেখছেন দুজনই। পরের ম্যাচেই দল ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশাই দুই সাবেকের।
নতুন কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে ম্যাচ শেষে হতাশই মনে হয়েছে। খেলার ফলাফলে খুশি নন জানিয়ে তরুণ স্প্যানিশ কোচ বলেছেন, ‘আমরা জিততে এসেছিলাম মালদ্বীপ। কিন্তু সেটা হলো না। প্রথমার্ধটা আমাদের জন্য একটু কঠিন ছিল। মালদ্বীপ এই সময় ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। আমাদের সীমানায় তারা বেশি খেলেছে। সম্ভবত এই জায়গায় আমাদের ঘাটতি ছিল। তবে আমি বলব, খেলোয়াড়েরা তাদের সেরাটা দিয়েছে মাঠে। আমি যা চাই এবং সেভাবে খেলাতে চাই, সেটার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে খেলোয়াড়দের। তবে আশা করি, সিলেটে আমরা আরও ভালো ফুটবল খেলব।’