মার্কিন উড়োজাহাজের চাকায় পাওয়া দেহাবশেষ আফগান ফুটবলারের

আনওয়ারিছবি: ফেসবুক

‘তোমার জীবনের চিত্রশিল্পী তুমি নিজে। অন্য কারও হাতে তুলিটা তুলে দিয়ো না।’

এটাই ছিল জাকি আনওয়ারির শেষ ফেসবুক পোস্ট। নিজের জীবনের গতিপথ আফগানদের হাতে তুলে দিতে রাজি ছিলেন না এই আফগান কিশোর। কিন্তু সে চেষ্টা কী অসহায়ের মতোই না করলেন! মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও শেষ চেষ্টা করেছিলেন আনওয়ারি।

কাবুল থেকে উড়ে যাওয়া মার্কিন বিমানবাহিনীর সি-১৭ সামরিক বিমানের চাকার মধ্যে আশ্রয় নিয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিমানের চাকায় আটকে পড়েন আনওয়ারি। জীবনকে নিজের মতো করে আর আঁকার সুযোগ পাননি আনওয়ারি।

আফগান বয়সভিত্তিক দলে যখন খেলতেন আনওয়ারি
ছবি: ফেসবুক

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজ কাবুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য আফগানিস্তানের হাজার হাজার মানুষ সেই উড়োজাহাজে ওঠার জন্য ভিড় করেন। উড়োজাহাজ রানওয়ে ধরে চলা শুরু করার পরও সবাই উড়োজাহাজের সঙ্গে দৌড়াচ্ছিলেন। কেউ ওই অবস্থাতেও দরজা আঁকড়ে ধরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বেশ কয়েকজনকে ডানা ও চাকার ওপর ওঠার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছিল।

কাবুল ছেড়ে গেলেও উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার (চাকা) বন্ধ করতে সমস্যা হওয়ায় জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন পাইলট। কাতারের আল উদেইদ এয়ারবেসে ল্যান্ড করার পর দেখা যায়, ল্যান্ডিং গিয়ারে একজনের দেহাবশেষ। গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মার্কিন বিমানবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়েছিল। আজ জানা গেছে, এই দেহাবশেষ জাকি আনওয়ারির। তাঁর আরেক পরিচয়, তিনি ফুটবলার। আফগানিস্তানের হয়ে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর।

আনওয়ারি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ইন্টার মিলানের সমর্থক ১৯ বছর বয়সী জাকি তালেবান শাসনামল দেখেনি। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া এই কিশোর কাবুলের বিখ্যাত এস্তেকলাল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেখানে কূটনৈতিক পাড়ার সন্তানেরা পড়াশোনা করতেন তাঁর সঙ্গে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজ থেকে অন্তত তিনজনকে ছিটকে যেতে দেখা গিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, ছিটকে পড়া ব্যক্তিদের একজন আনওয়ারি।

পরে নতুন এক তথ্য জানা গেছে, প্লেন থেকে ছিটকে পড়া ব্যক্তিদের দুজন কাবুলের কেন্দ্রীয় মার্কেটের দুই তরমুজ বিক্রেতা সহোদর। ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী এ দুই ভাই অসুস্থ মায়ের জন্য কাবুলের রাস্তায় রাস্তায় ময়লা ঘেঁটে খাবার খুঁজে বেড়াত বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানা গেছে।

এদিকে আফগানিস্তান শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিভাগের মহাপরিচালকের অফিসের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে পাওয়া দেহাবশেষ যে আনওয়ারির সেটা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পরই এই তরুণ ফুটবলার বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছিলেন। ১৬ বছর বয়সে জাতীয় পর্যায়ে বয়সভিত্তিক দলে ডাক পাওয়া এই ফুটবলারের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশটির ফুটবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে।

আনওয়ারির এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সে আমার ভাই ছিল, যার সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে আমার। এমন অপূরণীয় ক্ষতি আমাকে দুঃখে ভাসিয়ে দিয়েছে।’ আফগানিস্তান জাতীয় দলের সহকারী ম্যানেজার আলি আস্কর লালি বলেছেন, ‘তার আত্মা শান্তি পাক, তাকে সবাই মনে রাখুক।’

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী মঙ্গলবার বলেছে, আনওয়ারিসহ ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করবে তারা।