মামলা করেছেন, বার্সেলোনায় আসার জন্য নেইমার চুক্তিও করছেন
সপ্তাহের শেষভাগে বার্সেলোনায় এসেছিলেন নেইমার। তবে বার্সার পক্ষে বা বিপক্ষে খেলতে নয়। বার্সা ও নেইমার দুই পক্ষ ‘আনুগত্য বোনাস’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছিল দুই বছর আগে। সেই মামলার শুনানি চলছে বার্সেলোনার ‘কোর্ট অব জাস্টিস’-এ। মামলার শুনানির জন্য প্রায়ই নেইমারকে প্যারিস থেকে বার্সেলোনায় আসতে হয়। গতকালও এই কারণেই এসেছিলেন। তবে মামলার শুনানিতে শেষমেশ যাননি এই ব্রাজিল তারকা। এমনকি নেইমারের পক্ষ থেকে তাঁর বাবা বা প্রতিনিধিদলের কেউ যাননি। তাহলে কি বার্সার সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক আবারও জোড়া লাগাতে চলেছেন নেইমার?
সবার আগে ‘আনুগত্য বোনাস’ বিষয়টি খোলাসা করা দরকার। ২০১৬ সালের অক্টোবরের ঘটনা। তখন মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে বার্সেলোনাতেই খেলতেন নেইমার। লিগ জিতেছেন, এর আগের মৌসুমে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। মেসির পর দলের হাল নেইমারই ধরবেন, এ আশায় বার্সা সে সময়ে নেইমারের চুক্তি নবায়ন করেছিল। বলা হচ্ছিল, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় থাকবেন নেইমার। চুক্তির একটা শর্ত ছিল, চুক্তির পুরোটা সময় অন্যান্য ক্লাবের আগ্রহ ও ডাক অগ্রাহ্য করে নেইমার বার্সেলোনায় থেকে গেলে তিনি ৪০ মিলিয়ন ইউরো ‘আনুগত্য বোনাস’ পাবেন। অর্থাৎ বার্সেলোনার প্রতি নিজের আনুগত্য প্রমাণ করার একটা পুরস্কার পাবেন নেইমার।
সেই চুক্তি নবায়নের এক বছরের মধ্যেই পাশার দান উল্টে গেল। বার্সেলোনায় থাকতে হলে মেসির ছায়াতেই কাটিয়ে দিতে হবে বাকি ক্যারিয়ার। মেসি যত দিন আছেন, বার্সার প্রধান খেলোয়াড় হতে পারবেন না, সেটা বেশ বুঝেছিলেন নেইমার। তা করতে করতে নিজের ক্যারিয়ারেরও অনেকটা সময় শেষ হয়ে যাবে। ফলে পিএসজির ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি। নিজে চলে গেলেন পিএসজির ‘মেসি’ হতে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে যেহেতু বার্সা ছাড়লেন, স্বাভাবিকভাবেই ‘আনুগত্য বোনাস’ পাবেন না। বার্সাও দেয়নি। আর এতেই চটেছিলেন নেইমার। ৪০ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে বার্সা ছাড়ার আগেই ১৪ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে নিতে পারলেও বাকি ২৬ মিলিয়ন ইউরো নেইমারকে আর দেয়নি বার্সা।
এতেই নেইমারের ক্ষোভ। বার্সেলোনার বিপক্ষে মামলা করে দিয়েছেন কোর্টে। বাকি ২৬ মিলিয়ন ইউরোও চান। বার্সাও কি বসে থাকার পাত্র? নেইমারকে দিয়ে দেওয়া সেই ১৪ মিলিয়ন কড়ায়-গন্ডায় ফেরত পেতে চায় তারাও। এই নিয়েই দুই বছর ধরে বার্সেলোনার আদালতে মামলা চলছে। সে মামলার শুনানিতে হাজিরা দেওয়ার জন্যই নেইমারের বার্সেলোনায় ফিরে আসা।
>গতকাল ‘আনুগত্য বোনাস’ পাওয়ার লড়াইয়ে বার্সেলোনার আদালতে বার্সা ও নেইমারের মুখোমুখি হওয়ার কথা থাকলেও নেইমার বা তাঁর প্রতিনিধিদলের কেউই আদালতে হাজিরা দেননি। পিএসজির এই তারকা বার্সেলোনায় এলেও আদালতে না গিয়ে সারা রাত পার্টি করে বেড়িয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জন, বার্সার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিচ্ছেন নেইমার।
কাল শুক্রবার স্প্যানিশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল, নেইমার ও তাঁর বাবা উপস্থিত থাকবেন। সঙ্গে থাকবে প্রতিনিধিদল। কিন্তু শুনানি শুরু হয়ে গেলেও নেইমার কিংবা তাঁর প্রতিনিধিদলের কাউকে আদালতপাড়ার আশপাশে দেখা যায়নি। উল্টো আগের দিন রাতভর পার্টি করেছেন। সঙ্গে ছিলেন ব্রাজিলের দুই বন্ধু—বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আর্তুর মেলো ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার লিও ব্যাপটিস্টাও। সকালে আর আদালতে যাননি। সারা রাত পার্টি করে ‘ক্লান্ত’ নেইমার নিজে সকাল সকাল আদালতে যেতে পারেননি। কিন্তু তাঁর বাবা কিংবা প্রতিনিধিদল তো ছিল। তাঁরা তো যেতে পারতেন। যেহেতু ২৬ মিলিয়ন ইউরোর ব্যাপার এটা। কিন্তু তাঁদেরও দেখা যায়নি।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে, বার্সেলোনার প্রতি নেইমার কি সব রাগ ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছেন? মামলা তুলে নিচ্ছেন? যদি তা–ই হয়, তাহলে সেটা কেন করবেন? একটাই কারণ হতে পারে, বার্সেলোনা ও পিএসজির সঙ্গে এর মধ্যেই মৌখিক কোনো চুক্তি হয়ে গেছে নেইমারের বার্সায় ফেরার ব্যাপারে! এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
সদ্য শেষ হওয়া দলবদলের বাজারে নেইমার অনেক চেষ্টা করেছিলেন বার্সেলোনায় ফেরার। পিএসজিতে তাঁর মন টিকছিল না। বার্সাও চেয়েছিল অতীতের সব ঝগড়াঝাঁটি ভুলে আবারও ব্রাজিল তারকাকে আপন করে নিতে। কিন্তু পিএসজি এই ‘মহামিলন’ হতে দেয়নি। এদিকে নেইমারের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, নেইমারকে দলে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেনি বার্সা। এমন মত বার্সেলোনার কিছু খেলোয়াড়েরও। নেইমারকে না এনে বরং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আঁতোয়ান গ্রিজমানকে দলে এনেছে তারা।
নেইমার যদি আবারও বার্সেলোনায় যোগ দিতেন, তাহলে হয়তো বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ‘আনুগত্য বোনাস’ দেওয়ার এ মামলা তুলে নিতেন ব্রাজিল তারকা। সেটা না হওয়ার পরও যেহেতু নেইমার আদালতে গেলেন না, তাতে আগামী দলবদলে নেইমারের বার্সায় যাওয়ার গুঞ্জনটাই জোরালো হলো মাত্র। স্প্যানিশ পত্রিকা ‘এএস’ দাবি করেছে, বার্সেলোনার কাছ থেকে নাকি ‘তাঁকে কেনা হবে’ এমন প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন। আর এ কারণেই আর শুনানিতে যাননি নেইমার।