মহারণ নিয়ে দুঃখ কাটছে না আর্জেন্টিনার
সুপার ক্লাসিকো নির্ধারণ করে ম্যাচের দর্শকেরা, খেলোয়াড়রা নয়। আর সেই হুলিগানদের কারণেই ম্যাচে পূর্ণ মনোযোগ রাখা সম্ভব হয় না বলে দাবি তেভেজের।
দুই দফা পিছিয়ে কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনাল ঠিক হয়েছে এই রবিবার। দক্ষিণ আমেরিকার ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ’-খ্যাত কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। দ্বিতীয় লেগে ম্যাচের আগে বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়দের বাসে হামলা করেছিল রিভার প্লেট সমর্থকেরা। এরই দায় মেটাতে আর্জেন্টিনা থেকে সরিয়ে নিয়ে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ম্যাচের জন্য সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ইতিমধ্যে চলে এসেছে দুই দলই। হুলিগানদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলায় স্বস্তি পেয়েছেন কার্লোস তেভেজ কিন্তু দেশের মাটিতে এ ম্যাচ খেলতে না পারার দুঃখ এখনো কষ্ট দিচ্ছে তাঁকে।
মাদ্রিদে এ ম্যাচ হওয়া প্রসঙ্গে তেভেজ বলেছেন, ‘এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে খেলায় মনোযোগ দেওয়া কিছুটা কষ্টকর। এখানে সকলের খেলায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হবে। এত বড় বিরতির পর খেলা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সবাইকে বুঝতে হবে যে আমরা এখানে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে নয়, আমরা এখনে কোপা লিবার্তোদোরেস ফাইনাল খেলতে এসেছি। স্পেনকে ধন্যবাদ আমাদের এখানে খেলতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আমি স্পেনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ওরা সব সময় আমাদের সাদরে বরণ করে। আমরা খুশি যে ওরা (কনমেবল) স্পেনকে বেছে নিয়েছে, অন্য কোনো দেশকে নয়। কিন্তু এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক যে আমরা নিজেদের দেশে এ ম্যাচ খেলতে পারছি না। এটা দুঃখজনক কারণ খেলোয়াড়দের অন্য দেশে গিয়ে খেলতে হচ্ছে, এটা আমাদের প্রাপ্য নয়।’ মাদ্রিদে শুধু খেলোয়াড়রা নয়, তাদের সঙ্গে নিজেদের পরিবারকেও আনতে পেরেছেন বোকার খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে অনেকটাই খুশি তেভেজ, ‘খেলোয়াড়দের এটা অনেক অনুপ্রেরণা দেবে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিবার থাকায় তারাও ভালো আছে।’
বলা হয়ে থাকে, সুপার ক্লাসিকোতে মাঠে খেলোয়াড়রা শুধুমাত্র পাপেট হিসেবেই থাকে, পুরো ম্যাচ নির্ধারণ করে ম্যাচের দর্শকেরা। দর্শকদের প্রভাব এতটাই বেশি যে প্রতি ম্যাচেই মারামারি হয়ে থাকে। স্পেনে খেলা বলে দুই দলের সমর্থকদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার সম্ভাবনা নেই। সুপার ক্লাসিকোর ঝাঁজ অনেকটাই কমে যাচ্ছে তাতে। তেভেজ অবশ্য আর্জেন্টিনার সমর্থকদের বাড়াবাড়িতে বিরক্ত, ‘আমরা সকলে এই বিষয়টা নিয়ে বিরক্ত। খেলার মাঝে এই ব্যাপারটা একপাশে সরিয়ে রাখা উচিত। মাঠে ফুটবলাররা কী করছেন তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। স্পেন যা করছে, সেরকম করা উচিত আর্জেন্টিনায়- হুলিগানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তবেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হবে।’ স্পেন হুলিগানদের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক, কোনো দলের ওপর আঘাত করা তো দূরে থাক, মাঠে বাজি পোড়ানো কিংবা মাঠে বাজি ফুটানোর ব্যাপারেও বেশ কড়াকড়ি রয়েছে স্পেনের। যে কারণে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের অন্ধ সমর্থকগোষ্ঠীকে মাঠে দেখা যায় না।
স্পেনে ম্যাচ হওয়াতে রিভার প্লেট ও বোকা খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। রিভারের আপত্তি বেশি ছিল। ঘরের মাঠে নিজেদের দর্শক দিয়ে বোকাকে প্রবল চাপে ফেলার এত বড় সুবিধা কেই-বা হাতছাড়া করতে চায়। সে ক্ষেত্রে মাদ্রিদে খেলা হওয়ায় বোকার সুবিধাই হচ্ছে। কিন্তু তেভেজ এটা মানতে চান না, ‘এটা একটা অদ্ভুত ফাইনাল। বোকা ও রিভারের ম্যাচ মাদ্রিদে খেলব, এটা অদ্ভুত। কিন্তু আমাদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাচে মনোযোগ দেওয়া। রিভার নিজেদের মাঠে খেললেই বেশি চাপে থাকত। এখন দুই দল সমান। লিবার্তোদোরেস ফাইনাল ঘরের মাঠে খেলা মাঝে মাঝে উল্টো ফল বয়ে আনে’।
বোকা জুনিয়র্সের অন্তত একজন ঘরের মাঠের স্বাদ পাবেন রবিবার। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার ফার্নান্দো গাগো যে এখন বোকাতেই খেলেন। রিয়ালে ফেরার আনন্দটা টের পাচ্ছেন গাগো কিন্তু ম্যাচটা প্রতিপক্ষের মাঠে হলেই নাকি বেশি খুশি হতেন এই আর্জেন্টাইন, ‘সত্যিটা হলো, এ ম্যাচটা দক্ষিণ আমেরিকাতে খেলতে পারলেই সবচেয়ে বেশি ভালো হতো, পরিকল্পনা অনুযায়ী রিভারের স্টেডিয়ামেই। এটা লিবার্তোদোরেস ফাইনাল, এটা দক্ষিণ আমেরিকা ও আর্জেন্টিনার জন্য দারুণ একটা উপলক্ষ ছিল। কিন্তু আমাদের এ ম্যাচ খেলতে এখানে আসতে হলো। যাই হোক, আমি এ স্টেডিয়াম চিনি। ক্যারিয়ারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এখানে খেলেছি, তাই আমি এ ব্যাপারে খুশি।’