মতিনকে কেন দৌড়াতে বলেছিলেন 'ফিজিও'

বল পায়ে মতিন মিয়া। ছবি: প্রথম আলো
বল পায়ে মতিন মিয়া। ছবি: প্রথম আলো
>

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জাতীয় দলের ফিজিও হিসেবে কাজ করেছেন কিশোর দলের প্রধান কোচ রব রাইলস। তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

২০১৯ সালের জুনে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নেন রব রাইলস। গত সেপ্টেম্বরে কাতারে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে রবার্টের অধীনে চার দলের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ইংলিশ কোচই সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বনে গিয়েছিলেন জাতীয় দলের ফিজিও! টুর্নামেন্ট চলাকালীন তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্লাবের ফিজিওরাও।

বুরুন্ডির বিপক্ষে সেমিফাইনালের শুরুতেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোড়া গোল করা মতিন মিয়া। ফরোয়ার্ড মতিনকে মাঠের বাইরে নিয়ে এসে জোরে দৌড়াতে বলেছিলেন রব, যা অবাক করেছিল মতিন থেকে শুরু করে রিজার্ভ বেঞ্চের স্টাফ ও খেলোয়াড়দেরও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য বলেছেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে আমাদের প্রতিক্রিয়া ছিল, আরে মতিন “স্প্রিন্ট” টানছে কেন!’ জোরে দৌড় দেওয়ায় তাঁর চোট বেড়ে গেছে বলে মনে করেন মতিন, ‘মাঠে যতটুকু লেগেছিল, হয়তো-বা দ্রুত সুস্থ হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ওই দৌড় দেওয়ার পরেই চোটের জায়গায় বেশি সমস্যা হচ্ছিল। রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে যাওয়ার পরে অনেকেই বলেছিল, আমি আবার দৌড় দিতে গেলাম কেন?’

গত পরশু পাওয়া এমআরআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চার সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে মতিনকে। সমস্যা ধরা পড়েছে মিনিসকাসে। আঘাত নিয়ে মাঠ ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মতিনকে স্প্রিন্ট দেওয়ানোটা মেনে নিতে পারছেন না বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের ফিজিও আবু সুফিয়ান, ‘যখন দেখব কয়েক মিনিট আগে সে ব্যথা পেয়েছে, সে ক্ষেত্রে শারীরিক কোনো কার্যক্রম করানো যাবে না। দ্রুতগতিতে দৌড়ানো তো নয়-ই। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে বা তার আশপাশে চাপ দিয়ে বিশেষ কৌশলে কিছু পরীক্ষা করে দেখতে হবে সে খেলার মতো উপযুক্ত কি না। কিন্তু উনি যে কাজটা করেছেন, এটা কখনোই করা হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চোটটা বড় হয়ে যায়।’

মতিনের বিষয়টি এক পাশে সরিয়ে রাখলেও রব যে ফিজিও হিসেবে দলের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে পারেননি, তো বোঝা যায় নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার চিকিৎসার দিকে তাকালে। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পেশিতে চোট পান মিডফিল্ডার জামাল। সেই চোটের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতেই পারেননি। ফেরেন সেমিফাইনালে। তবে ফাইনালে ওঠার ম্যাচের দুই দিন আগে তাঁকে ‘ম্যাসাজ’ ও ‘কাপ থেরাপি’ দিয়ে ম্যাচ উপযোগী করে তোলেন তাঁর ক্লাব সাইফ স্পোর্টিংয়ের ফিজিও দেবাশীষ নাথ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেই ফিজিওই।

মতিন আর জামালের চোট ছাড়াও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে টুর্নামেন্ট চলাকালীন টিম হোটেল ছেড়ে যান গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল ও ডিফেন্ডার ইয়াসিন। এঁদের মধ্যে ইয়াসিন নিজ উদ্যোগে কোচিং স্টাফের সঙ্গে পরামর্শ করেই ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তিনি কাল বলছিলেন, ‘আমি নিজে আলোচনা করে হাসপাতালে না গেলে আমার তো খবরই হয়ে যেত!’

বর্তমানে জাতীয় দলে নিয়মিত ফিজিও হিসেবে কাজ করেন সিমন মাল্টবাই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বছরব্যাপী চুক্তি না থাকায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সময় তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফিজিওর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় স্বদেশি রবের কাঁধে। একজন প্রধান কোচের হাতে কীভাবে সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ ফিজিওর দায়িত্বটি তুলে দিল বাফুফে? বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের ব্যাখা, ‘যেহেতু তিনি দেশেই ছিলেন, এই সময়টায় একাডেমির কাছ থেকে নিয়ে তাঁকে ব্যবহার করলাম। ফিজিও হিসেবে তাঁর যোগ্যতা ও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। কোচ জেমি ডেও তাঁকে চেয়েছিলেন।’

রব নিজে কী বলছেন? সামাজিক হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁকে এই প্রশ্নটি করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি সাড়া দেননি। মজার ব্যাপার, রব যে ফিজিও, তা জানা নেই রবের অধীনেই কিশোর দলের ফিজিওর দায়িত্ব পালন করা ফুয়াদ হাসান হাওলাদারেরই! আধুনিককালে বেশির ভাগ কোচেরই ‘স্পোর্টস মেডিসিন’ বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু সনদধারী ফিজিওদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ফিজিওদের পার্থক্য যে অনেক, তা তো সবারই জানা!