ভিনিসিয়ুসকে ১১ গুণ বেশি বেতনের লোভ দেখিয়েছে পিএসজি
দড়ি–টানাটানি তাহলে দুই পক্ষই করেছে। দলবদলের বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পিএসজির কিলিয়ান এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার সম্ভাবনায়। পাঁচ বছর ধরে বহু চেষ্টার শেষটা হয়েছে ব্যর্থতায়। আকাশচুম্বী বেতন ও বোনাস দিয়ে এমবাপ্পেকে আরও তিন বছরের জন্য ধরে রেখেছে পিএসজি। শুধু নিজেদের খেলোয়াড়কেই অর্থের টানে ধরে রাখেনি, রিয়াল থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নেওয়ার জন্য চোখ কপালে তোলা বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিল ফ্রেঞ্চ ক্লাব।
দলবদলের বাজারে এমবাপ্পের জন্য রিয়ালের আগ্রহ সবার জানা। ২০১৩ সালে একবার চেষ্টা করেছিল রিয়াল। তখন মোনাকোর একাডেমি বেছে নিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ২০১৭ সালে মোনাকো ছেড়ে পিএসজিকে বেছে নিয়েছেন। আর এক বছর ধরে রিয়ালে যোগ দিচ্ছেন, এমন এক বার্তা ছড়িয়েছেন এমবাপ্পে নিজেই। সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন রিয়ালে যাওয়ার জন্য ক্লাবের কাছে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর নিজের আত্মজীবনীমূলক কমিকসের পাতায় পাতায় রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন।
সেই এমবাপ্পে চুক্তির মেয়াদ শেষ মুহূর্তে আবার নবায়ন করেছেন। এ জন্য পিএসজির অবশ্য অনেক অর্থ খসেছে। চুক্তি নবায়নের বোনাস হিসেবে নাকি ৩০ কোটি ইউরো (মতান্তরে ১৮ কোটি) পেয়েছেন। বেতন নিয়েও দুই রকম কথা শোনা যায়। কেউ বলছেন, ১০ কোটি ইউরো পাচ্ছেন এমবাপ্পে। কেউ অবশ্য সেটাকে সহনীয় মাত্রায় টেনে ৫ কোটি ইউরো বলছেন। সে সঙ্গে নিজের ছবিস্বত্বের পুরোটাই নিজের কাছে রাখার অধিকার আদায় করে নিয়েছেন এমবাপ্পে।
শেষ মুহূর্তে পিএসজি এমন পাগলাটে এক প্রস্তাব দেওয়ার আগে মনে হচ্ছিল, রিয়ালেই যাচ্ছেন এমবাপ্পে। ওদিকে হাত থেকে বর্তমানের সেরা খেলোয়াড়কে এভাবে চলে যেতে দেখে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছিল পিএসজি। এমবাপ্পের বদলে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে টেনে আনতে চাইছিল তারা। ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারের প্রতি বেশ আগে থেকেই আগ্রহ ক্লাবটির। গত মৌসুম পর্যন্ত রিয়ালে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলেও ফ্রেঞ্চ ক্লাব তাঁর প্রতি আগ্রহী ছিল। এমনকি এমবাপ্পেকেও বিক্রি করতে রাজি ছিল তারা, যদি উল্টো দিকে ভিনিসিয়ুসকে দিতে রাজি হতো রিয়াল।
তবে ১৬ বছর বয়সেই সাড়ে ৪ কোটি ইউরো দিয়ে যাঁকে কেনা হয়েছে, সেই ভিনিসিয়ুসকে কোনোভাবেই বিক্রি করতে রাজি হননি রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। এ মৌসুমে সে প্রতিদান মিলেছে। এবার ৪২টি গোলে অবদান ছিল ভিনিসিয়ুসের। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে শিরোপা এনে দেওয়া গোলটিও তাঁর। মৌসুম শেষেই তাই তাঁর চুক্তি নবায়নের কাজ শুরু দিয়েছে রিয়াল।
এখন পর্যন্ত যে খবর, তাতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি করতে চেয়েছিল রিয়াল। তবে ভিনিসিয়ুস অনুরোধ করেছেন সময়টা আরেকটু কমাতে। তাই ২০২৬ বা সর্বোচ্চ ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন হবে বলেই গুঞ্জন। তবে মার্কা বলছে, পিএসজি যে চেষ্টা করেছিল, তাতে ২০২৩ সালেই রিয়ালে ভিনিসিয়ুসের যাত্রা থামতে পারত।
মৌসুমের প্রথমার্ধেই বদলে যাওয়া ভিনিসিয়ুসের দেখা মিলেছে। একের পর এক গোল আর গোলে সহায়তা করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার, যা দেখে পিএসজির পক্ষ থেকে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, রিয়ালের পক্ষ থেকে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব এলে সেটা যেন ফিরিয়ে দেন ভিনিসিয়ুস। আর সে ক্ষেত্রে আগামী মৌসুম শেষে বিনা মূল্যে পিএসজিতে যেতে পারতেন। গত নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকেই এ চেষ্টা চালিয়েছে পিএসজি।
এমন এক প্রস্তাবের পেছনের অঙ্কটাও অনেক বড়। পিএসজিতে গত মৌসুমে সর্বোচ্চ বেতনভোগী ছিলেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকার বেতন ৪ কোটি ৮০ লাখ ইউরোর বেশি। মেসির বার্ষিক বেতন ৪ কোটি ৫ লাখ ইউরো। আর তিনে ছিলেন এমবাপ্পে, তিনি এবার দুজনকেই ছাড়িয়ে গেছেন।
মার্কার প্রতিবেদক মারিও করতেগানা বলছেন, ভিনিসিয়ুসকে বছরে ৪ কোটি ইউরো বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সঙ্গে কাতারে বিনিয়োগের সুযোগ। বলা হচ্ছে, গত মার্চ পর্যন্ত ভিনিসিয়ুসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে পিএসজি। ভিনিসিয়ুসকে কথা দিয়েছে, ব্রাজিলের এই উইঙ্গার প্যারিসের ক্লাবে নাম লেখালে সাইনিং বোনাস বাবদ আকাশচুম্বী অর্থ দেওয়া হবে। তবে সাইনিং বোনাসের অঙ্কটা জানায়নি মার্কা।
এমন এক প্রস্তাবে চাইলেই রাজি হতে পারতেন ভিনিসিয়ুস। কারণ, তাঁকে পেতে কিশোর ফুটবলারদের দলবদলের রেকর্ড ভাঙলেও বেতন খুব কমই দিত রিয়াল। বছরে ৩৫ লাখ ইউরো বেতন পান ভিনিসিয়ুস। তাঁর পর রিয়ালে যোগ দেওয়া এক বছরের ছোট আরেক ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগো যেখানে পান ৬০ লাখ ইউরো। অর্থাৎ ভিনিসিয়ুসকে বর্তমান চুক্তির ১১ গুণের বেশি বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল পিএসজি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এত বেতন পান না।
কিন্তু ভিনিসিয়ুস আপাতত অর্থে নয়, ক্যারিয়ারেই চোখ রেখেছেন। রিয়ালের সঙ্গে নতুন যে চুক্তি করছেন, সেখানে বার্ষিক এক কোটি ইউরো বেতন নিয়েই সন্তুষ্ট হচ্ছেন। পিএসজির চোখ কপালে তোলা বেতনের চার ভাগ।