ব্যালন ডি’অর নিষ্পত্তির ম্যাচ লেভানডফস্কির
লিওনেল মেসি গত নভেম্বরে ক্যারিয়ারের সপ্তম ব্যালন ডি’অর জয়ের পর রাগ উগরে দিয়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। অনেকের বিচারে পোলিশ স্ট্রাইকারই যে পুরস্কার জয়ের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন, এবারও আছেন।
তবে আজ রাতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সুইডেনের বিপক্ষে পোল্যান্ডের প্লে-অফ ফাইনাল ম্যাচটি লেভার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কেন? তা বোঝাতে একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। ২০১৩ সালে ব্যালন ডি’অর জেতেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার আগের মৌসুমে ক্লাব পর্যায়ে রোনালদোর পারফরম্যান্স তাঁর খেলার মানের তুলনায় তেমন ভালো ছিল না।
লা লিগায় সেবার সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেবার বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফে সুইডেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে পর্তুগালকে বিশ্বকাপে তোলেন রোনালদো। সে পারফরম্যান্স তাঁর ব্যালন ডি’অর জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আজ রাতে তাই লেভাও হয়তো এমন কিছুর সন্ধানে থাকবেন।
ধরা যাক, সবই হলো, তবু লেভার হাতে ট্রফিটা উঠল না। তাহলে রাগ উগরে দেওয়ার জন্য লেভা আর যা-ই হোক মেসিকে পাচ্ছেন না। শুধু মেসি কেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও কিলিয়ান এমবাপ্পেও তো নেই এবারের দৌড়ে!
নেই—কথাটার অর্থ খুব স্পষ্ট। ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে এ মৌসুমে লেভার ধারেকাছেও নেই এমবাপ্পে, মেসি ও রোনালদো। নেইমার তো আরও পিছিয়ে। কেন?
সে জন্য পুরস্কারটি যে সংবাদমাধ্যম দিয়ে থাকে, সেই ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ১১ মার্চ ব্যালন ডি’অর দেওয়ার নিয়মে কিছু পরিমার্জনা করে। সেগুলো আগে জানা থাকা ভালো।
আগে এক বর্ষপঞ্জিতে পারফরম্যান্স বিচারে বর্ষসেরার এ পুরস্কার দেওয়া হতো। এখন থেকে এক মৌসুম বিচারে পুরস্কারটি দেওয়া হবে। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—এ সময়ের পারফরম্যান্স ধরে পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম পাল্টে জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যকার পারফরম্যান্স বিচারে দেওয়া হবে ব্যালন ডি’অর।
আগের নিয়মে দুটি মৌসুমের অর্ধেক সময় বিবেচনায় আসত। দলগত সাফল্যের চেয়ে এখন থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যকেই আগে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এবার মেয়েদের ইউরো ৩১ জুলাই শেষ হওয়ার সঙ্গে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য পারফরম্যান্স বিবেচনার সময়ও শেষ হবে। অর্থাৎ নভেম্বরে শুরু হওয়া কাতার বিশ্বকাপ চলে যাবে ২০২৩ সালের বিবেচনায়।
এ নিয়ম ধরে বর্তমান মৌসুমের পারফরম্যান্সে একটু তাকানো যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়েছে পিএসজি, অর্থাৎ মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পের দৌড় শেষ হয়েছে শেষ ষোলোতেই।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়ায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও থামতে হয়েছে শেষ ষোলোয়। আর্লিং হরলান্ডের দৌড় শেষ হয়েছে আরও আগে। গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়েছে তাঁর দল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।
অর্থাৎ লেভার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা আগেই বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে। শুধু মোহাম্মদ সালাহর লিভারপুল, করিম বেনজেমার রিয়াল মাদ্রিদ ও লেভার বায়ার্ন মিউনিখ—এই তিন দলই উঠেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। ১২ গোল করা লেভা চলতি মৌসুমের এ পথ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা।
লেভা বুন্দেসলিগার এ মৌসুমেও সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২৭ ম্যাচে ৩১ গোল করেছেন। সালাহ ২০ গোল নিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর গোলসংখ্যা ৮। রিয়াল তারকা বেনজেমা লা লিগায় ২২ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা, চ্যাম্পিয়নস লিগে করেছেন ৮ গোল।
লিগ জয়ের দৌড়ে এ পথ পর্যন্ত সালাহর চেয়ে বেনজেমা ও লেভা এগিয়ে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ১ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে লিভারপুল। বায়ার্ন মিউনিখ নিকটতম দলের সঙ্গে ৬ পয়েন্ট এবং রিয়াল মাদ্রিদ ৯ পয়েন্ট ব্যবধানে ধরে রেখেছে শীর্ষস্থান। অর্থাৎ ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইটা মূলত বেনজেমা ও লেভার মধ্যে।
জাতীয় দলের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স যেহেতু এবার বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে, তাই পোল্যান্ডের বাঁচা-মরার ম্যাচটি লেভার জন্য ব্যক্তিগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ অঞ্চল থেকে বাছাইপর্বে লেভার গোলসংখ্যা ৮। ক্লাব পর্যায়ে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তাঁর গোলসংখ্যা ৫০, গোল বানিয়েছেন ৮টি। ৩৫ গোল করা ও ১৩টি গোল বানিয়ে দ্বিতীয় সেরা বেনজেমাও তাঁর ধারেকাছে নেই। শুধু বাদ আছে প্লে-অফ পর্বটি, আজ যদি সেটা পার করে দেন, তাহলে ব্যক্তিগত লাভ তো কম নয়!
আর যদি পার না করতে পারেন? যতই বলা হোক, এটা ব্যক্তিগত অর্জনের লড়াই। শেষ পর্যন্ত এটা ভোটাভুটির এক পুরস্কার, আর সবার মনেই দলকে বিশ্বকাপে না নিতে পাওয়ার ব্যর্থতা সেখানে প্রভাব ফেলবেই।