বেলজিয়ান সোনালি প্রজন্মকে হারিয়ে জার্মানির হাসি

১৯৮০ ইউরো চ্যাম্পিয়ন জার্মানিটুইটার
যে সময়ে হওয়ার কথা, করোনা সেই সময়ে ইউরো হতে দেয়নি। এক বছর পিছিয়ে যখন শেষ পর্যন্ত হতে যাচ্ছে, করোনা তখনো বিদায় নেয়নি পৃথিবী থেকে। তাতে কী! করোনার ভয়ে তো সব বন্ধ করে বসে থাকলে চলবে না। ১১ জুন থেকে তাই মাঠে গড়াচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে জাতীয় দলগুলোর সবচেয়ে মর্যাদার আসর। তবে আনুষ্ঠানিক নামটা থাকছে আগের মতোই—ইউরো ২০২০। আরও একবার ইউরোপিয়ান ফুটবলের উন্মাদনায় মেতে ওঠার আগে স্মৃতির ভেলা ভাসিয়ে ফিরে দেখা যাক আগের আসরগুলো—

জার্মানির দুই

কেভিন ডি ব্রুইনা-এডেন হ্যাজার্ডদের এই বেলজিয়াম এখন র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের ১ নম্বর দল। সোনালি এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখছে এবার ইউরো জয়ের, হয়তো সামনে বিশ্বজয়েরও। কিন্তু এই স্বপ্ন দেখার শুরুটা হয়েছিল আরেকটা সোনালি প্রজন্মের হাত ধরে। কোচ গাই থাইসের অধীন সেই সোনালি প্রজন্মের দলে ছিলেন জাঁ-ম্যারি পাফ, এরিক গেরেতস, জাঁ কেলেমানসের মতো খেলোয়াড়; পরে যাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছিলেন এনজো শিফোর মতো কিংবদন্তিও।

বেলজিয়ামের সেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল আসলে ১৯৮০ ইউরোতেই। ইতালি, ইংল্যান্ড ও স্পেনের মতো পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে ওই ইউরোতে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বেলজিয়াম। অসাধারণ এই পথচলার শেষটা অবশ্য রূপকথার মতো হয়নি। ফাইনালে বার্নার্ড ডিয়েৎসের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ জার্মানদের সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি বেলজিয়ানরা। হোর্স্ট রুবেস্টের জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতে শেষ হাসিটা জার্মানরাই হাসে। ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই জার্মানি পায় বার্নড সুস্টার, কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে, হান্সি মুলার ও হান্স-পিটার ব্রিগেলের মতো একঝাঁক তরুণ তারকা। প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার ইউরো জেতার কীর্তিও গড়ে জার্মানি।

ট্রফি হাতে জার্মান অধিনায়ক বার্নার্ড ডিয়েৎস
উয়েফা

তবে একেবারে হতাশ হয়ে ফেরেনি বেলজিয়াম। ১৯৮০ ইউরোর আগে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে যে দলের জয় ছিল মাত্র দুটি, সেই দলই ফাইনাল খেলে তাক লাগিয়ে দেয় ফুটবলপ্রেমীদের। এই সাফল্যই পরে বেলজিয়ামকে উৎসাহ দিয়েছে আরও বড় স্বপ্ন দেখার। যে পথ ধরেই পরে বেলজিয়াম খেলেছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও। দুর্ভাগ্য তাদের, সেই সেমিফাইনালেও প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা দলে ডিয়েগো ম্যারাডোনা নামের একজন ছিলেন।

একনজরে ইউরো ১৯৮০

স্বাগতিক: ইতালি
ফাইনালের ভেন্যু: অলিম্পিক স্টেডিয়াম, রোম
চ্যাম্পিয়ন: জার্মানি
রানার্সআপ: বেলজিয়াম
তৃতীয়: চেকোস্লোভাকিয়া
চতুর্থ: ইতালি

বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম
উয়েফা

ওই বছরই প্রথমবার ইউরোর চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল আটটি দল। গ্রুপ পর্বের দেখাও প্রথম মিলেছিল ওই আসরে। প্রথমবারের মতো স্বাগতিক দল সুযোগ পেয়েছিল সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলার। আগের আসরগুলোর চেয়ে ১৯৮০ ইউরোতে দলগুলো অনেক বেশি রক্ষণাত্মক খেলেছিল বলে একটা সমালোচনা আছে। ফলে স্বাগতিক ইতালির ম্যাচ ছাড়া অন্য কোনো ম্যাচে খুব বেশি দর্শক হয়নি। সত্তরের দশকের শুরুতে উগ্র সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে যে হুলিগানিজম শুরু হয়েছিল, সেটা তত দিনে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বেলজিয়াম-ইংল্যান্ড ম্যাচেই যেমন এসব উগ্র সমর্থকদের দাঙ্গা থামাতে রায়ট পুলিশ নামতে হয়েছিল।
১৯৮০ ইউরোতেই সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী প্লে–অফ।

আরও যত গল্প

কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে
টুইটার

রুমেনিগের ব্যালন ডি’অর
ইউরোতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ওই বছরের ব্যালন ডি’অরেও ছিল জার্মানদের জয়জয়কার। শেষ পর্যন্ত কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগে জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর ট্রফি, রানারআপ হয়েছিলেন বার্নড সুস্টার।


টানা তিন
পরপর তিনটি ইউরোর ফাইনাল খেলেছিল জার্মানি। এরপর আর কোনো দল এ কীর্তি গড়তে পারেনি। এই জার্মানরাই অবশ্য ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত পরপর তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালেও খেলেছিল। তিন ফাইনালের মধ্যে দুবার ইউরো (১৯৭২ ও ১৯৮০) জিতলেও বিশ্বকাপ জিতেছিল শুধু ১৯৯০ সালে।


চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফেরা
১৯৮০ ইউরো দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে অভিষেক হয়েছিল গ্রিসের। কিন্তু পরের দুই যুগে আর ইউরোপ–সেরা আসরেই দেখা যায়নি গ্রিসকে। অবশেষে ২০০৪ সালে আবার ইউরোতে ফেরে গ্রিস এবং সেবার সবাইকে তাক লাগিয়ে শিরোপাও জিতে নেয় অটো রেহাগেলের দল!

আরও পড়ুন