বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে এমবাপ্পের জন্য প্রস্তাব খুঁজে আনছে পিএসজি
বরুণা কথা রাখেনি। বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে ১০৮ নীলপদ্ম খুঁজে আনার পরও কবিকে হতাশ করেছিল। কথা যে রাখবে না, সেটা অবশ্য জানা ছিল। কবিতার নামই যে ‘কেউ কথা রাখেনি’। কিলিয়ান এমবাপ্পে কি বরুণা হবেন, পিএসজি হবে সুনীল? নাকি সুনীল যা পারেনি, তাই করতে পারবে পিএসজি?
রিয়াল মাদ্রিদ নাকি পিএসজি, আগামী মৌসুমে এমবাপ্পের দল কোনটি—দলবদলের এই জমজমাট থ্রিলার ধীরে ধীরে সোপ অপেরায় রূপ নিচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, পিএসজি চুক্তি নবায়ন করতে চাইছে, ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে টেনে আনতে চাইছে। নাটকের এই দৃশ্যেই ক্যামেরা ঘুরপাক খাচ্ছে গত কয়েক মাস। একবার পিএসজির নতুন প্রস্তাবের খবর আসছে, আবার শোনা যাচ্ছে রিয়ালই তাঁকে পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। এ তো সোপ অপেরা বা তার ভারতীয় সংস্করণ মেগা সিরিয়ালেরই দৃশ্য।
সে দৃশ্যে নতুন কিছু যোগ হয়েছে কাল। একজন ফুটবলারকে ধরে রাখার জন্য যা যা দেওয়া সম্ভব, সব প্রস্তাবই দিয়ে ফেলেছে পিএসজি।
আগামী জুনে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে এমবাপ্পের। মৌসুমের শুরু থেকেই তাঁর চুক্তি নবায়নের চেষ্টা চলছে ফরাসি ক্লাবটির। একে একে সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে রিয়ালের আশা বাড়িয়েছেন এমবাপ্পে। রিয়ালও সেটার প্রতিদান দিতে চাইছিল। শোনা গেছে, আগামী মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলে স্প্যানিশ ক্লাবটি চুক্তি স্বাক্ষরের বোনাস বাবদ এমবাপ্পেকে ৭ থেকে ৮ কোটি ইউরো দেবে। এর মধ্যেই গত এপ্রিলে সাংবাদিক গিয়েম বালাগ জানান নতুন খবর।
পিএসজিতে থেকে গেলে এমবাপ্পেকে চুক্তি স্বাক্ষরের বোনাস হিসেবে ১৮ কোটি ইউরো দেওয়া হবে। সেটাও মাত্র দুই বছরের চুক্তিতে! সে সঙ্গে তাঁর পরিবারকেও দেওয়া হয়েছে লোভনীয় প্রস্তাব। এমবাপ্পেকে যদি পিএসজিতে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করাতে পারেন, তবে তাঁর মা–বাবাকে আরও ৫ কোটি ইউরো দেওয়া হবে। আর বেতনের ব্যাপারটা তো আছেই। পিএসজিতে সবচেয়ে বেশি বেতন পান নেইমার, বার্ষিক বেতন ৪ কোটি ইউরো। এরপর বেতন পান মেসি, ৩ কোটি। এমবাপ্পেকে নতুন চুক্তিতে নাকি করপূর্ব ৫ কোটি ইউরো দেওয়া হবে।
এ তো গেল গত মাসের খবর। এমবাপ্পের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে, দিন দিন গুঞ্জন আরও বাড়ছে। বাজারে গুঞ্জন উঠেছে, রিয়াল মাদ্রিদও প্রস্তাব বাড়িয়েছে। এমবাপ্পেকে চুক্তি স্বাক্ষরের বোনাস একবারে ১০ কোটি ইউরো দেওয়া হবে। ইমেজ স্বত্ব, যা নিয়েই এমবাপ্পের মূল আপত্তি সেটা নিয়েও নরম হয়েছে রিয়াল।
সাধারণত বড় তারকাদের ক্ষেত্রে ইমেজ স্বত্বের ৫০ ভাগ ক্লাবের থাকে, বাকি ৫০ ভাগ খেলোয়াড়ের। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ষেত্রেও যা করেনি রিয়াল, এমবাপ্পের জন্য সেটাও করছে। রোনালদোর ক্ষেত্রে ইমেজ স্বত্বের ৬০ ভাগ রোনালদোর ছিল। এমবাপ্পের ক্ষেত্রে নাকি ৭৫ ভাগ দেওয়া হবে।
এমবাপ্পেকে বেতনও নাকি মৌসুমে ৫ কোটি ইউরো দেবে রিয়াল মাদ্রিদ! অঙ্কগুলো মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। এরপর তাই এমবাপ্পে রিয়ালে যাচ্ছেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। সপ্তাহের শুরুতে এমবাপ্পের কথায়ও সে সুর শোনা গেছে। কিন্তু গতকাল সব সমীকরণ নাকি উল্টে গেছে।
রিয়াল মাদ্রিদ সম্পর্কে হাস্যকর সব তথ্য দেওয়ার জন্য বিখ্যাত এল চিরিঙ্গিতো টিভি ও এর সঞ্চালক জোসেপ পেদ্রেরল। বাজারে গুঞ্জন আছে, রিয়াল সভাপতি নিজের অস্ত্র হিসেবে পেদ্রেরল ও চিরিঙ্গিতোকে ব্যবহার করেন। তাই গতকাল চিরিঙ্গিতোতে এদু আগিরের দেওয়া চমক কেউ বিশ্বাস করতে চাননি। অনুষ্ঠানের টিআরপি বাড়ানোর কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ফ্রেঞ্চ ফুটবলের ভেতরের খবর দেওয়ার জন্য বিখ্যাত সাংবাদিক রোমেইন মলিনা বিস্মিত করেছেন সবাইকে।
এল চিরিঙ্গিতোর তথ্য প্রসঙ্গে টুইট করে বলেছেন, ‘এই প্রথম তারা যা বলছে সেটা ভুল না!’
তো, এদু আগিরে কী এমন বলেছেন, যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও মলিনার মতো সাংবাদিকও সেটাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না? আগিরের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে, ফুটবল নিয়ে সবার ধ্যানধারণাই বদলে ফেলতে হবে। একজন ফুটবলার ধরে রাখতে কোনো ক্লাবই কখনো এমন কিছু করেনি। রোনালদোর ক্ষেত্রে রিয়াল তো নয়ই, মেসির ক্ষেত্রে বার্সেলোনাও নয়।
এত দিন শুধু উচ্চ বোনাস ও বেতনের কথা শোনা গেছে। কাল আগিরে বলেছেন, এমবাপ্পেকে রীতিমতো ক্লাবের ‘ক্রীড়া পরিচালক’ই বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে? ক্রীড়া প্রকল্পের পুরোটাই নাকি এমবাপ্পের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কোচ বদলানোর ক্ষমতা দেওয়া হবে তাঁকে, যে খেলোয়াড় পছন্দ তাঁকে আনা হবে, যাঁকে এমবাপ্পের অপছন্দ, তিনিই বাদ পড়বেন! সেসঙ্গে চোখ কপালে তোলা আর্থিক প্রলোভন তো আছেই।
দুই দিন আগেই পরিবার নিয়ে কাতারে যাওয়া এমবাপ্পেকে এক অর্থে তাই ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় কাম ক্রীড়া পরিচালক বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। মেসি বার্সেলোনায় থাকার সময় দলে খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে মেসির পছন্দ-অপছন্দ অনেক গুরুত্ব পেত বলে শোনা যায়। রোনালদোকে ঘিরেও এমন গুঞ্জন আছে। কিন্তু মেসি বা রোনালদোকে সরাসরি এভাবে ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্বের ‘মুলা’ কখনো ঝোলায়নি কেউ।
এই খবর যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এমবাপ্পেকে ধরে রাখার জন্য যা যা দেওয়া সম্ভব, সব প্রস্তাবই দিয়ে ফেলেছে পিএসজি। না ভুল হলো, আরেকটি প্রস্তাব সম্ভবত এখনো দেওয়া হয়নি এমবাপ্পেকে—পিএসজির মালিকানাই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া।