‘বিশ্বকাপ জিততে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা প্রাণও দিয়ে দেবে’

এই দলটাকে ঘিরে কাতার বিশ্বকাপে স্বপ্নে বুক বাঁধছে আর্জেন্টাইনরাছবি: ইনস্টাগ্রাম

বায়ার্ন মিউনিখকে বিদায় করে দিয়ে ভিয়ারিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ওঠার আগে তাঁকে নিয়ে আগ্রহ ইউরোপে খুব একটা ছিল না বললেই চলে। জেরোনিমো রুইয়ির সময়টা কিছুদিন ধরে ভালোই কাটছে। ভিয়ারিয়ালে আলো ছড়াচ্ছেন, এর মধ্যে অন্য গোলকিপারদের চোট-নিষেধাজ্ঞায় কদিন আগে ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচটিতে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ, সব মিলিয়ে তৃতীয়। আগের দুটি ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচ।

এই দারুণ সময় কাটাতে থাকা গোলকিপারই আগামী নভেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দলে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু নিজে থাকার স্বপ্নই নয়, আকাশি-নীলদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নও দেখছেন ২৯ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন গোলকিপার! তাঁর চোখে, মেসি-দি পল-দি মারিয়াদের এই আর্জেন্টিনার মধ্যে ‘রোমাঞ্চিত হওয়ার মতো একটা ব্যাপার আছে’। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে সুযোগ পাওয়া সবাই-ই যে বিশ্বকাপ জিততে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দেবেন, সে বিশ্বাসও আছে রুইয়ির।

ভিয়ারিয়ালের জার্সিতে বায়ার্ন মিউনিখকে হারানোর পর উচ্ছ্বাস রুইয়ির
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কেন এই আর্জেন্টিনার মধ্যে রোমাঞ্চিত হওয়ার মতো কিছু আছে? আর্জেন্টাইন দৈনিক টিওয়াইসি স্পোর্টসে সে ব্যাখ্যায় কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা নিয়ে রুইয়ির বিশ্লেষণ, ‘আর্জেন্টিনার অসাধারণ অনেক খেলোয়াড় আছে। আপনি কোন ধরনের খেলোয়াড় চান, সে অনুযায়ী অনেক মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ই বেছে নিতে পারবেন। প্রতিটি পজিশনেই বৈচিত্র্য এনে দেওয়ার মতো অনেক খেলোয়াড় আছে, আর এটাই আপনাকে আশা দেখাবে।’

লিওনেল মেসি নামের এক জাদুকরের শেষ বিশ্বকাপ বলে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কাতারে আলাদা আকর্ষণ থাকবেই, কিন্তু এই আর্জেন্টিনা শুধুই মেসি নয়। আনহেল দি মারিয়ার মতো তারকা তো আছেনই, রদ্রিগো দি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদের, জিওভান্নি লো সেলসোরাও নিজের পুরোটুকু উজাড় করে দেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। শুধু প্রতিভাই নয়, লিওনেল স্কালোনির অধীন দলটার এক সুতোয় গেঁথে যাওয়া, সতীর্থ থেকে বন্ধু বনে যাওয়াও নজর কাড়ে।

এই আর্জেন্টিনা দলে থাকতে ভালো লাগে রুইয়িরও, ‘এমন সতীর্থদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ ভাগ্যে মেলে। এই মুহূর্তে দলে সুযোগ পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, এই বছর তো সবার জন্য সেটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এই বছরটা যে বিশ্বকাপের বছর!

আর্জেন্টিনা দলে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছেন রুইয়ি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রুইয়িও তা–ই বলছিলেন, ‘আর্জেন্টিনার প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য আর্জেন্টিনা দলই অন্য সবকিছুর চেয়ে আগে। আমরা এখন একটা বিশ্বকাপের বছরে আছি আর এ বছরে আমরা সবাই কাজ করব, যাতে সেখানে (বিশ্বকাপে) থাকতে পারি।’

রুইয়ির অবশ্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়তে হয়। এমিলিয়ানো মার্তিনেজই এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার প্রথম পছন্দের গোলকিপার, কিন্তু বিশ্বকাপের দলে বাকি দুই গোলকিপার হওয়ার দৌড়েই রুইয়িকে লড়তে হবে হুয়ান মুসো, ফ্রাঙ্কো আরমানি, এস্তেবান আনদ্রাদা, ওয়াল্টার বেনিতেজের সঙ্গে।

শেষ পর্যন্ত নিজে সুযোগ না পেলে অন্য যেকোনো সমর্থকের মতোই মেসিদের জন্য গলা ফাটাবেন রুইয়ি। কাতারে মেসিদের জন্য গলা ফাটানোর মানুষের অবশ্য অভাব হবে না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এর আগের দু-তিন বিশ্বকাপে যাওয়া দলটা আর্জেন্টিনার সোনালি প্রজন্ম হতে পারে, কিন্তু বর্তমান দলটাই আর্জেন্টিনার মানুষের মনের বেশি কাছের। কেন এমনটা হচ্ছে?

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেতে রুইয়িকে মুসো-মার্তিনেজদের সঙ্গে লড়তে হবে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সেটি শুধু এই দলটা ২৮ বছরের আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা ঘুচিয়ে গত বছর আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা এনে দিয়েছে বলে? নাকি দলের খেলোয়াড়দের একে অন্যের জন্য লড়াইয়ের চেতনা নজর কাড়ছে বেশি?

রুইয়ির ব্যাখ্যা, ‘আর্জেন্টিনার সবারই যেন মনে হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে কিছু হলেও হতে পারে। কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে যাচ্ছে, এটাও একটা আলাদা প্রেরণা জোগায়। তবে এটাকেও যা ছাপিয়ে যায় তা হলো গত কিছুদিনে জাতীয় দলের খেলায় প্রাণের ছোঁয়া, যেটির মধ্যে হয়তো আর্জেন্টিনার মানুষ নিজেদের খুঁজে পায়। দলটাই এমন যে এটি আপনাকে দলটাকে সমর্থন দিতে, অনুসরণ করতে, অনুপ্রেরণা জোগাতে বাধ্য করে। এমনকি অনেকে হয়তো ধারদেনা করেও কাতারে জাতীয় দলকে দেখতে যাবে।’

আরও পড়ুন

১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার মধ্যে নিজেদের খুঁজে পাওয়া আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ নিজেই। এবার এই খেলোয়াড়দের মধ্যে নিজেদের খুঁজে পাওয়া আর্জেন্টাইনরা আবার আশায় বুক বাঁধছে।

রুইয়ির রোমাঞ্চ, ‘আর্জেন্টিনার জার্সিতে যারা খেলতে আসে, মানুষ তাদের মধ্যে নিজেদের খুঁজে নেয়। বিশ্বকাপ আমাদের সবার সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত শিরোপা, আর এবার মানুষের মনে আশা কাজ করছে, কারণ মানুষ জানে, আর্জেন্টিনা দলে যারাই সুযোগ পাবে, সুন্দর ট্রফিটাকে দেশে নিয়ে আসতে প্রয়োজনে জীবনও দিয়ে দেবে!’