বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের যে তিন গোল আলো ছড়িয়েছে
>আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয় কালেভদ্রে। গোল করে আলোচনায় আসার সুযোগ তো তেমন হয়ই না। তবে এ বছর বাংলাদেশের ফুটবলারদের পা থেকে আসা তিনটি গোল আন্তর্জাতিক ফুটবলে আলো ছড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোলের জন্য হাপিত্যেশ করতে দেখা যায় বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের। বহুদিন ধরেই এ দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত সমর্থকেরা। আশার কথা হলো, খারাপ সময়টা পেছনে ফেলে দেশের ফুটবলারদের পায়ে গোলের সুরভি ছড়াচ্ছে। এবারের এএফসি কাপে বাংলাদেশের দুই ফুটবলারের গোল সপ্তাহসেরা গোলের মর্যাদা পেয়েছে। গত সপ্তাহে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে করা আবাহনী লিমিটেডের মিডফিল্ডার সোহেল রানার বুলেটগতি শটের গোল হয়েছে এএফসি কাপের সপ্তাহসেরা গোল। এর আগে জুন মাসে একই খেতাব জিতেছিল দুর্দান্ত ভলিতে করা মামুনুল ইসলামের একটি গোল।
এ তো গেল এশিয়ান মঞ্চে আলো ছড়ানোর কথা। দুর্দান্ত গোলের সুবাদে এশিয়ান মঞ্চ ছাড়িয়ে ফিফার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে নারী ফুটবলার মনিকা চাকমার নাম। অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে ভলিতে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন বাংলাদেশের মনিকা চাকমা। গোলটি জায়গা করে নিয়েছে ফিফার ফ্যানস ফেবারিটের সেরা পাঁচে। ফিফা মনিকাকে সম্বোধন করেছে ‘ম্যাজিক্যাল চাকমা’ নামে।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের ফুটবলারদের পা থেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তিন গোল
সোহেল রানা: (প্রতিপক্ষ এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ, এএফসি কাপ)
গোলটি দেখে বারবার চোখ কচলাতে হয়। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে বুলেটগতির একটি শট জড়িয়ে যাচ্ছে জালে। প্রথম দেখায় মনে হলো পা থেকে নয়, কামান থেকে বলটি বের হয়েছে। গোলের রসায়ন ছিল আরও দুর্দান্ত। নাবিব নেওয়াজের চমৎকার এক ব্যাকহিলে বক্সের বাইরে জায়গা পেয়ে যান মিডফিল্ডার সোহেল। বক্সের বাইরে থেকে মুহূর্তে বাঁ পায়ের এক অবিশ্বাস্য শটে তিনি বল জড়িয়ে দেন এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের জালে।
রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে আবাহনীও শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে পায় ৪-৩ গোলের দুর্দান্ত এক জয়। আর সোহেলের ব্যক্তিগত ভান্ডারে যোগ হয়েছে এএফসি কাপের সপ্তাহসেরা গোলের পুরস্কার।
দেখে নিতে পারেন গোলটি
মামুনুল ইসলাম: ( প্রতিপক্ষ নেপালের মানাং মার্শিয়াংদি, এএফসি কাপ)
এএফসি কাপে নেপালের মানাং মার্শিয়াংদির বিপক্ষে আবাহনীর ৫-০ গোলের জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত গোলটি করেছিলেন মামুনুল। কেমন ছিল মামুনুলের সেই গোলটি? বক্সের ওপর থেকে ব্যাক পাস করেছিলেন সানডে চিজোবা। প্রথম স্পর্শেই বলটা সামনে বানিয়ে নিয়ে পেনাল্টি আর্কের ওপর থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শট সরাসরি জালে। ৫-০ গোলের জয়ের ম্যাচে পঞ্চম গোলটি করেছিলেন মামুনুল। এএফসি কাপে এর আগের ম্যাচেও তাঁর দুর্দান্ত গোলেই ভারতের আইএসএলের ক্লাব চেন্নাইয়িন এফসির বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ও নাটকীয় ম্যাচের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী।
পাল্টাপাল্টি গোলে অনেক নাটকীয়তা শেষে ২-২ গোলে ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। আর ড্র হলে আরও একবার এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই আবাহনীর থেমে যাওয়ার চোখ রাঙানি। ঠিক তখনই ৮৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের ভলিতে গোল করেছিলেন মামুনুল।
দেখে নিতে পারেন গোলটি
মনিকা চাকমা: (প্রতিপক্ষ মঙ্গোলিয়া, অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ)
অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচে চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা। সে গোলটির জন্য ফিফা মনিকাকে ‘ম্যাজিক্যাল চাকমা’ হিসেবে উপাধি দিয়েছে।
প্রথমে একজনকে গতিতে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নম্বর সিক্স আরেক ডিফেন্ডারের মাথার ওপর থেকে হেড করে বলটা নিজের সুবিধামতো জায়গায় নিয়েছেন। বিপদ বুঝে মনিকাকে থামানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন প্রতিপক্ষ দুজন খেলোয়াড়। কিন্তু মনিকা সুযোগ দিলে তো! পেনাল্টি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো ভলিতে বল চলে গেল পোস্টের দুরূহ কোণে। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়েও বলের নাগাল পাননি।
গোলটি জায়গা করে নিয়েছে ফিফার ভক্তদের পছন্দের সেরা তালিকায়। প্রতি সপ্তাহের ফুটবলের সেরা গোল বা মাঠের সেরা মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও চেয়ে থাকে ফিফা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘উই লিভ ফুটবল’ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে যা পৌঁছে যায় ফিফার দরবারে। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় সপ্তাহের সেরা মুহূর্তগুলোকে। ‘ফ্যানস ফেবারিট’ নামের ফিফার এই ক্যাটাগরিতে প্রকাশ পাওয়া পাঁচটি সেরা ঘটনার একটি মনিকার করা বিস্ময়কর গোলটি।
দেখে নিতে পারেন সে গোলটি