বিলবাও আবারও এক করে দিল মেসি–ম্যারাডোনাকে
দুজনই আর্জেন্টাইন ফুটবলের প্রধানতম সারথি। দুজনের পায়েই লুটিয়ে পড়ে ফুটবলীয় সৌন্দর্য। লিওনেল মেসিকে ডিয়েগো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি তো আর এমনি এমনি বলা হয় না!
অনেকের মতে, ফুটবলীয় অর্জনের দিক দিয়ে মেসি ছাপিয়ে গিয়েছেন ম্যারাডোনাকেও। যদি জাতীয় দলের হয়ে মেসির অর্জনের ভাঁড়ারটা ম্যারাডোনাকে অনেকটা পথই এগিয়ে রাখে দুজনের মধ্যে।
লিওনেল মেসিও যেন নিজেকে ‘পরবর্তী ম্যারাডোনা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজ করে গেছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে এমন কিছু ব্যাপার-স্যাপার ঘটিয়েছে বার্সেলোনার অধিনায়ক, যে দর্শকের মনে উচ্ছ্বাস জেগেছে, ‘আরে, এ তো দেখি আসলেই ম্যারাডোনার মতো!’ এর মধ্যে কিছু ঘটনা কাকতালীয়, আবার কিছু ঘটনা তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
যেমনটা মনে হতে পারে কাল অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে মেসির লাল কার্ড দেখাও। এই বিলবাওয়ের বিপক্ষেই তো ১৯৮৪ কোপা দেল রে-র ফাইনালে বার্সারই জার্সি গায়ে বিখ্যাত (নাকি কুখ্যাত) সেই মারামারি করেছিলেন ম্যারাডোনা!
দুজনের ক্যারিয়ারের দিকে লক্ষ করে দেখুন। মেসির শৈশবের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে খেলে গিয়েছেন ম্যারাডোনা। যে বার্সেলোনায় মেসির মহাতারকা হয়ে ওঠা, সে বার্সেলোনাই সাড়ে তিন দশক আগে বিশ্ব রেকর্ড ফি–তে দলে টেনেছিল ম্যারাডোনাকেও। এমনকি যে দুই ঘটনা ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় দুই ‘হাইলাইট’, সে দুই ঘটনাও নিজের ক্যারিয়ারে করে দেখিয়েছেন মেসি।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি অবিশ্বাস্য গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা—একটা খেলোয়াড়ি কারণে অবিশ্বাস্য, আরেকটা অখেলোয়াড়সুলভ। গোল দুটো নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই, পাঠকমাত্রই জানেন। প্রথম গোলটা করতে গিয়ে হাতের সাহায্য নিয়েছিলেন, আর দ্বিতীয় গোলটাকে তো ফুটবল ইতিহাসেরই সুন্দরতম গোলের তকমা দেওয়া হয় অনেক জায়গায়।
২০০৭ সালে এসপানিওলের মধ্যে মেসি নিজেও ওই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের মতো বিতর্কিত গোল করে দেখিয়েছেন, হেতাফের বিপক্ষে দেখিয়েছেন ম্যারাডোনার মতো সাত-আটজনকে ছিটকে একই স্টাইলে তিনিও গোল করতে পারেন। প্রায় দেড় দশকের সফল ক্যারিয়ার শেষে মেসি এখন যখন বার্সা ছাড়বেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এমন সময় এমন আরেকটা ‘উপলক্ষ’ এসে হাজির মেসির সামনে!
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমের কোপা দেল রের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিক বিলবাও। ম্যাচ হেরেছিল বার্সেলোনা। গোটা ম্যাচে ম্যারাডোনাকে বাজে ট্যাকল আর উত্ত্যক্ত করে ছেড়েছিলেন বিলবাওয়ের আন্দোনি গয়েকোয়েচিয়া। শেষমেশ আর নিজেকে আটকাতে পারেননি ম্যারাডোনা। ম্যাচ শেষে বিলবাও তারকাদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করে দিয়েছিলেন।
ঘটনাটা মাঠের লাখো মানুষ তো দেখেছিলেনই, মাঠে বসে দেখেছিলেন খোদ স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোস। এরপর বার্সেলোনা কর্তাব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, আর নয়। ম্যারাডোনাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় নাপোলির কাছে। ব্যস, ম্যারাডোনার বার্সেলোনার অধ্যায়ের গল্পের শেষ সেখানেই।
গত রাতে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেছেন মেসি। প্রতিপক্ষ সেই অ্যাথলেটিক বিলবাও। এমন সময় লাল কার্ড দেখলেন, যখন মেসি বার্সা ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে সরগরম চারদিক। বার্সা অধিনায়ককে কী শাস্তি দেওয়া যায়, তা ঠিক করতে এ সপ্তাহেই বসবে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কমিটি। সর্বোচ্চ চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন মেসি, এমন খবরই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। অনেকে এমন সন্দেহও করছেন, বার্সা থেকে মেসির বিদায়টাও ওই ম্যারাডোনার মতোই হবে!
আসলেই কী হবে? উত্তরটা মেসিরই জানা আছে ভালো!