বিনা বেতনে খেলা নিয়ে বার্সা সভাপতির কথায় কষ্ট পেয়েছেন মেসি
বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির শেষ সংবাদ সম্মেলন মনে আছে? কান্নাভেজা চোখে সেই যে বিদায় বলেছিলেন বার্সাকে। শৈশবের ক্লাব, প্রাণের ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো বলেছিলেন ভালোবাসি।
তখন জানা গিয়েছিল, লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতনকাঠামো নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে না পারায় আর্জেন্টাইন তারকাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বার্সা।
কিন্তু এর কিছুদিন পর বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার মুখ থেকে বের হলো, মেসি চাইলে থেকে যেতে পারতেন। দুটো কথা তো আর এক হলো না!
চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে থাকা বার্সা মেসিকে আগের বেতনে রাখতে পারত না। সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছিল, বার্সায় থাকার জন্য আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড নিজের বেতন অর্ধেক কমিয়েছেন।
তাতেও হিসাব না মেলায় তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কাতালান ক্লাবটি। তাহলে মেসি কীভাবে চাইলেই বার্সায় থেকে যেতে পারতেন? কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই খেলতে রাজি হলে? কিন্তু বার্সার তরফ থেকে তো এই প্রস্তাবও মেসিকে দেওয়া হয়নি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’–এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেছেন ছয়বারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
লাপোর্তার কথায় ‘আঘাত’ পেয়েছেন মেসি। সাক্ষাৎকারে তাঁর কথার সুরে বোঝা গেল, তাঁকে ধরে রাখতে বার্সার পক্ষ থেকেও সেভাবে জোরাজুরি করা হয়নি। চাইলে থেকে যেতে পারতেন—লাপোর্তার এ কথায় মেসির পাল্টা যুক্তি, বার্সাও তো তাঁকে সপ্তাহান্তে বিনা পারিশ্রমিকে খেলার অনুরোধ করেনি। ক্লাবের তরফ থেকে অনুরোধ এলে না হয় ভেবে দেখতেন—মেসির কথার সুর এমনই।
এমন কোনো অনুরোধ না আসায় গত আগস্টে বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবে পিএসজিতে যোগ দেন ৩৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
এর মধ্যে এক মাস পর অক্টোবরে কাতালান রেডিও ‘আরএসি১’–কে লাপোর্তা বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, মেসি (চলে যাওয়ার) সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। ভেবেছিলাম, সে হয়তো বিনা বেতনে খেলার কথা বলবে। তাহলে ভালো হতো এবং লা লিগাও মেনে নিত বলে মনে করি। কিন্তু মেসির পর্যায়ের খেলোয়াড়কে আমরা এমন অনুরোধ করতে পারি না।’
লাপোর্তার সে কথার জবাবটা এখন সাক্ষাৎকারে দিলেন মেসি, ‘সত্যিটা হলো থাকার জন্য আমি যা যা করা সম্ভব, সবই করেছি। আমাকে কখনোই বিনা বেতনে খেলার কথা বলা হয়নি। ৫০ শতাংশ বেতন কমানোর কথা বলা হয়েছিল, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তাতে রাজি হয়ে গেছি। আমরা ক্লাবকে আরও সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি এবং আমার পরিবার বার্সেলোনায় থাকতে চেয়েছিলাম।’
বার্সা সভাপতির কথায় আঘাত পাওয়ার বিষয়টি লুকাননি মেসি। তাঁর ভাষায়, ‘কেউ আমাকে বিনা বেতনে খেলার কথা বলেনি। সভাপতি যে কথা বলেছেন, তার ভিত্তি নেই। কষ্ট পেয়েছি কথাটা শুনে। কারণ, তাঁর এসব কথা বলার দরকারই ছিল না। এমন কথা লোকের মনে অযথা সন্দেহ তৈরি করে, যা আমার প্রাপ্য ছিল না।’
স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমানোর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন মেসি। পিএসজির দারুণ স্কোয়াড, আরও বড় ক্লাব হওয়ার ক্ষুধা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের চেষ্টা—এ তিন কারণেই পিএসজিতে যোগ দেন তিনি, ‘পিএসজিতে আসার একটা কারণ হলো, স্কোয়াডটা দারুণ। ক্লাব হিসেবে আরও ভালো করতে চায় এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের চেষ্টা করছে।’