বিদায়ই বলে দিলেন আর্জেন্টাইন ‘যোদ্ধা’
আর্জেন্টিনার হয়ে আক্রমণভাগে বল পায়ে বছরের পর বছর লিওনেল মেসি জাদু দেখিয়ে গেলেও, তিনি রক্ষণভাগে থেকে নিশ্চিত করতেন মেসিরা যেন নিজের প্রতিভা দেখানোর সর্বোচ্চ সুযোগটুকু পান।
সেটা প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে হোক, নিখুঁত কোনো ট্যাকলের মাধ্যমে হোক, কিংবা পেছন থেকে বল বের করে এনে সামনে পাঠানোতে হোক। তারায় ভরা আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম নেতা ছিলেন এই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার।
সেই হাভিয়ের মাচেরানো এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, আর নয়। ক্যারিয়ারে ইতি টানার সময় চলে এসেছে। পাকাপাকিভাবে বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
২০১৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনার হয়ে অবসর নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, ক্লাবে খেলা চালিয়ে গেছেন। ইউরোপ ছেড়ে মাঝে পাড়ি জমিয়েছিলেন চীনের হেবেই চায়না ফরচুনে। সেখান থেকে গত জানুয়ারিতে ফিরেছিলেন জন্মভূমি আর্জেন্টিনায়, এস্তুদিয়ান্তেসের হয়ে খেলতে। এই বয়সেও ক্লাবটির অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় ছিলেন।
হয়তো বুঝেছিলেন, আর শতভাগ দিতে পারছেন না দলকে। অবসরের সিদ্ধান্তটা এসেছে তাই। মাচেরানোর মতো ফুটবলাররা যে মাঠে শতভাগ না দিতে পারলে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না!
সংবাদ সম্মেলনে সে কারণটার কথাই উল্লেখ করেছেন মাচেরানো, ‘কয়েক মাস ধরে ব্যক্তিগত জীবনে আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে, এরপর আমার কাছে পাকাপাকিভাবে অবসর নেওয়াটাই সবচেয়ে সঠিক বলে মনে হয়েছে। আমি আমার পেশাগত জীবনে সব সময় শতভাগ দিয়েছি। আমার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে আমার দলকে সাহায্য করেছি সব সময়। কয়েক দিন ধরেই মনে হচ্ছিল সেরাটা দেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর আমি এস্তুদিয়ান্তেসকে অসম্মান করতে চাইনি। অসম্মান করতে চাইনি সেই সতীর্থদের, যারা আমাকে আর্জেন্টিনায় ক্যারিয়ার শেষ করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
করোনার কারণে বন্ধ হওয়া ফুটবল আবার চালু হলে নিজের হারানো আগ্রহটা ফিরে পাবেন মনে করলেও অমনটা হয়নি মাচেরানোর, ‘মহামারির পর খেলতে নেমে আমার মনে হয়েছিল হয়তো আগের সেই উচ্ছ্বাসটা অনুভব করতে পারব। সত্যি বলতে কি, আগের ওই তেজ পাচ্ছিলাম না। তাই সবার প্রতি সম্মান রেখে আমার মনে হয়েছে, এবার সরে দাঁড়ানো উচিত। যেসব ক্লাবের হয়ে খেলেছি, যাদের সঙ্গে খেলেছি, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। এস্তুদিয়ান্তেস কর্তৃপক্ষ ও লিয়ান্দ্রোর (এস্তুদিয়ান্তেসের কোচ লিয়ান্দ্রো দেসাবাতো) প্রতি কৃতজ্ঞ আমি আমাকে এখানে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। যেভাবে বিদায় নিতে চেয়েছিলাম, সেভাবে হয়তো হলো না। কিন্তু অনেক সময় আপনি যেভাবে চান, সেভাবে সবকিছু হয় না।’
আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা মাচেরানো এক বছর খেলেছেন ব্রাজিলের করিন্থিয়ানসে। সেখানে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজের সঙ্গে খেলতে আসেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হামে। সেখানে দুর্দান্ত খেলে নজরে পড়েন লিভারপুলের।
তিন বছর লিভারপুলে কাটানোর পর যোগ দেন গার্দিওলার বিশ্বজয়ী বার্সেলোনায়। আট বছরে সেখানে সম্ভাব্য সবকিছু জিতে পাড়ি জমান চীনে, হেবেই চায়না ফরচুনের হয়ে খেলার জন্য। শেষমেশ ফিরে আসেন জন্মভূমিতে, প্রিয় বন্ধু হুয়ান সেবাস্তিয়েন ভেরনের ক্লাব এস্তুদিয়ান্তেসের হয়ে খেলার জন্য।