২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বায়ার্নে শেষ হচ্ছে ফ্লিক-যুগ

বায়ার্নের দায়িত্ব ছাড়ছেন ফ্লিক।ছবি : রয়টার্স

১৮ মাসে একজন কোচ ঠিক কতগুলো শিরোপা জিততে পারেন?

প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। নতুন ক্লাবে এসে নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে দলকে নিজের দর্শনে খেলাতে খেলাতে অনেকে অনেক সময় নিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে এসেই নতুন ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিতে নেন একটা-দুটো। আবার কেউ কেউ নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়ার পরেই মেশিনের মতো ক্লাবকে উপহার দেওয়া শুরু করেন একের পর এক শিরোপা।

হান্সি ফ্লিক নিঃসন্দেহে শেষ দলের যাত্রী। দেড় বছর আগেও যে ভদ্রলোকের পদবি ছিল বায়ার্ন মিউনিখের সহকারী কোচ, মূল কোচের দায়িত্বে আসার পর থেকেই সেই লোক শিরোপা জেতা শুরু করলেন একের পর এক। এ যেন এক স্বপ্নযাত্রা! গত দেড় বছরের মধ্যে মোটামুটি একটা মৌসুম পুরোপুরি কাটাতে পেরেছেন, এখন পর্যন্ত অর্জনের ঝুলিতে ভরেছেন একটা করে জার্মান লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, জার্মান কাপ, জার্মান সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপ। বায়ার্ন তাদের ইতিহাসের প্রথম ‘সেক্সটাপল’ বা শিরোপা-ষষ্ঠক (মৌসুমে সম্ভাব্য ছয় ট্রফির সব কটি জেতা) জিতেছে এই ফ্লিকের অধীনেই। চলতি মৌসুম শেষে যে তালিকাটা আরও লম্বা হবে, তা নিশ্চিত।

প্রশ্ন উঠতে পারে, হুট করে ফ্লিকের অর্জন নিয়ে আবার বসে পড়া কেন। ওঠাই স্বাভাবিক। বায়ার্নের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই কোচ জানিয়ে দিয়েছেন, বাভারিয়ানদের হয়ে আর নয়। সময় এখন নতুন লক্ষ্যে মন দেওয়া। কোচিং–জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে পা রাখার। গতকাল ভলফসবুর্গকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন। ম্যাচ শেষেই ফ্লিক জানিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তের কথা, ‘আমি আজকে আমার দলকে জানিয়ে দিয়েছি, মৌসুমের শেষে আমি বায়ার্নের দায়িত্ব ছাড়তে যাচ্ছি। এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি ক্লাবের কর্তাদের গত সপ্তাহেই জানিয়েছি, প্যারিসের (পিএসজি) বিপক্ষে ম্যাচটার পর। আমি আমার চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আমি যেন খবরটা দলের খেলোয়াড়দের নিজ মুখে দিতে পারি, এই ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, এমনিতেই অনেক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আমরা দুই বছর অসাধারণ কাজ করেছি। এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর বিষয়টা ছিল আমার কাছে অনেক কষ্টের।’

বায়ার্ন তাদের ইতিহাসের প্রথম ‘সেক্সটাপল’ বা শিরোপা-ষষ্ঠক (মৌসুমে সম্ভাব্য ছয় ট্রফির সব কটি জেতা) জিতেছে এই ফ্লিকের অধীনেই।
ফাইল ছবি

যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সময়টাতেও নিজের শিষ্যদের নিয়ে প্রশংসাই ঝরেছে ফ্লিকের কণ্ঠ থেকে, ‘এই দল নিয়ে আমি গর্বিত। এই দলের প্রত্যেকের মান, মনোভাব—সবকিছু নিয়েই আমি সন্তুষ্ট। এই দলকে সাহায্য করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ, গর্বিত। এর সঙ্গে ক্লাবকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাকে এই অসাধারণ দলটার কোচ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’

কিন্তু হুট করে ফ্লিক চলে যেতে চাইছেন কেন? যেখানে মাত্র গত বছরই দলের কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ন করেছিলেন? বায়ার্নের সঙ্গে ফ্লিকের নতুন চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। জার্মানরা তো কখনো না ভেবেচিন্তে হুট করে সিদ্ধান্ত নেয় না, নিঃসন্দেহে ফ্লিকেরও বায়ার্নের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের এই সিদ্ধান্তের পেছনে তখন যৌক্তিকতা ছিল। কিন্তু এই এক বছরে এমন কী হয়ে গেল যে সেই যৌক্তিকতার আর কোনোই দাম থাকল না?

সালিহামিদজিচ (ডানে) এর সঙ্গে ফ্লিকের রেষারেষি আজকের নয়।
ছবি : রয়টার্স

উঠে আসবে ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে ফ্লিকের রোষের কথা। ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক ও সাবেক খেলোয়াড় হাসান সালিহামিদজিচের সঙ্গে ফ্লিকের মন–কষাকষি আজ থেকে নয়। গত এক বছরে বায়ার্ন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ফ্লিকের সম্মতি ছিল না। ক্লাবের কিংবদন্তি অস্ট্রিয়ান সেন্টারব্যাক ডেভিড আলাবার চুক্তি শেষ হতে যাচ্ছে, ফ্লিক চাওয়া সত্ত্বেও আলাবাকে দলে রাখার জন্য বায়ার্ন চেষ্টা করেনি বলে শোনা গেছে কয়েক দিন আগে। গত মৌসুমে দলের হয়ে ক্রোয়েশিয়ান উইঙ্গার ইভান পেরিসিচ বেশ ভালো খেলেছিলেন, তা সত্ত্বেও তাঁর চুক্তি পাকা করার ব্যাপারে বায়ার্নের আগ্রহ দেখা যায়নি। ঘুরেফিরে ব্রাজিলের উইঙ্গার দগলাস কস্তাকে জুভেন্টাস থেকে ধারে আনা হয়েছে, যে কস্তা বায়ার্নের হয়ে আগেও খেলে গেছেন, তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। দলের বিকল্প রাইটব্যাক হিসেবে মার্শেই থেকে এক কোটি ইউরোর বিনিময়ে ফরাসি ডিফেন্ডার বুনা সারকে আনা হলেও খেলোয়াড়টিকে ফ্লিকের বিশেষ পছন্দ ছিল না, এমনটাও শোনা গেছে। উল্টো ফ্লিকের পছন্দের সের্হিনিও দেস্ত পাড়ি জমিয়েছেন বার্সেলোনায়। মিডফিল্ডে থিয়াগো আলকানতারার যোগ্য বিকল্পও আনা হয়নি বায়ার্নে।

হানসি ফ্লিক।
ছবি: এএফপি

কিছুদিন আগে জার্মান জাতীয় দলের কোচ ইউয়াখিম লুভ ঘোষণা দিয়েছেন, ইউরোর পরেই দায়িত্ব ছাড়বেন। সে ক্ষেত্রে জাতীয় দলে কোচের পদটা খালি হয়ে যাচ্ছে কয়েক মাস পর। সে পদে কে আসবেন, এ প্রশ্নের জবাবে যাঁদের নাম ঘুরেফিরে এসেছে, তাঁদের মধ্যে ফ্লিকের নাম ওপরের দিকেই ছিল। এখন মোটামুটি ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে গেল, ফ্লিকই হচ্ছেন জার্মানের পরবর্তী কোচ। যদিও ফ্লিক নিজে ব্যাপারটা এখনো খোলাসা করতে চাননি, ‘ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আমার সঙ্গে অলিভার বিয়েরহফের (জার্মান জাতীয় দলের পরিচালক) কোনো কথা হয়নি এ ব্যাপারে। অবশ্যই যেকোনো কোচের জন্যই এ পদ লোভনীয়। কিন্তু সবার আগে আমি ধাতস্থ হতে চাই। গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্যও ভালো ছিল না।’

এর আগে জার্মান জাতীয় দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন ফ্লিক। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই লুভেরই সহকারী ছিলেন ফ্লিক। জিতেছেন বিশ্বকাপ।