বার্সেলোনার সঙ্গে তুলনায় অপমানিত বোধ করলেন কোচ
সর্বজয়ী রূপটা বহু আগে হারিয়ে ফেলেছে তারা, ইউরোপে ইদানীং একটি পর্যায়ে যাওয়ার পর পরাশক্তি মনে হয় না তাদের। তবু বার্সেলোনা তো বার্সেলোনাই। স্কোয়াডের শক্তি ও খেলার ধরন এখনো অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। মেসি-কুতিনিও-পেদ্রিরা নিজেদের দিনে উপহার দেন দুর্দান্ত ফুটবল। চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসের বিপক্ষে বেশ প্রতাপশালী দেখিয়েছে তাদের। এই দলের সঙ্গে তুলনায় খুশি হয়ে উঠতে পারে যে কোনো দল।
জোর্জে জেসুস আবার এ কাতারে পড়েন না। কোচিং ক্যারিয়ারে ট্রফির সংখ্যা কম নয়। বেনফিকা ও স্পোর্টিং সিপির পর ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে ইতিহাস গড়ে এসেছেন গত মৌসুমে। এ মৌসুমে আবার ঘরে ফিরেছেন। নতুন করে গুছিয়ে তুলছেন বেনফিকাকে। তাঁর অধীনে এ মৌসুমে দারুণ খেলছে পর্তুগিজ পরাশক্তিরা। তাই একটু প্রশংসা করতে গিয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর দলের তুলনা টেনেছিলেন এক খেলোয়াড়। কিন্তু সে তুলনায় একদমই খুশি নন জেসুস। বলেই দিয়েছেন বর্তমান বার্সেলোনা দলের মতো অবস্থা হোক, এমনটা কখনোই চাইবেন না।
এ মৌসুমের শুরুটা বার্সেলোনার হয়েছে ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে। প্রথমে মেসি ক্লাব ছাড়তে চেয়েও পারেননি। তাঁকে আইনের মারপ্যাঁচে ক্লাবে রয়ে যেতে হয়েছে। ওদিকে বার্সেলোনায় থাকতে চেয়েও থাকা হয়নি লুইস সুয়ারেজের। প্রথমে জুভেন্টাসে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে চেষ্টা করেন আতলেতিকো মাদ্রিদে যাওয়ার। সাবেক ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ আবার সে দলবদল আটকানোর চেষ্টা করেন। এবার আইনি ঝামেলায় ফেলার হুমকি খেলোয়াড়ের কাছ থেকেই আসে। তাই প্রায় মুফতেই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে চলে গেছেন বার্সেলোনার ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এক স্ট্রাইকার।
মৌসুমের শুরুতেই এত নাটক দলে প্রভাব ফেলেছে। নতুন কোচ রোনাল্ড কোমান তাই এখনো খেলাটা গুছিয়ে আনতে পারেননি। লিগে সর্বশেষ তিন ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট পেয়েছে বার্সেলোনা। লিগে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ১২তম অবস্থানে আছে তারা। যদিও হাতে দুটি ম্যাচ আছে তাদের। লিগে ছন্দ না পেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালো খেলছে তারা। টানা দুটি জয় তো পেয়েছেই, খেলার মধ্যে আছে আগ্রাসনও। এর সঙ্গে ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়াটাও ক্লাবের খেলায় চাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে।
ইউরোপা লিগে স্ট্যান্ডার্ড লিগকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বেনফিকা। ইউরোপে টানা দুই জয়ের সঙ্গে প্রিমেরা লিগেও প্রথম পাঁচ ম্যাচে জয় পেয়েছে জেসুসের দল। এতটাই দাপুটে ছিল তারা যে ম্যাচে কোনো পাত্তা পায়নি স্ট্যান্ডার্ড লিগ। এ কারণে দলটির মিডফিল্ডার মেহদী কারসেলা-গঞ্জালেজ মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করতে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বেনফিকাকে দেখে প্রথমার্ধে বার্সেলোনা মনে হচ্ছিল। কতটা দাপটে খেলেছে প্রতিপক্ষ সেটা বোঝাতে এর চেয়ে ভালো আর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাননি বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার।
জোর্জে জেসুস এমন তুলনায় কিন্তু খুশি হতে পারেননি। এমন প্রশংসাকে তাঁর দলের জন্য মানানসই বলে মনে হচ্ছে না, ‘আমার মনে হয় না, আমরা বর্তমান বার্সেলোনার মতো খেলি। আমি চাইও না যে বর্তমান বার্সেলোনার মতো খেলুক দল। কয়েক বছর আগের বার্সেলোনার মতো হলে, হ্যাঁ... কিন্তু বর্তমান বার্সেলোনা দলে কিছু নেই। বর্তমান দলটার মতো হতে চাই না (তাঁর দল), তাদের আগের দলটার মতো হলে আমার আপত্তি নেই।’
জেসুসের কথা শুনে কোমানের কেমন লাগবে কে জানে! তবে পর্তুগিজ কোচের কথায় যুক্তি আছে। প্রতিটি ম্যাচে দাপটের সঙ্গে জেতার চেষ্টা করছে বেনফিকা। ওদিকে এখন পর্যন্ত লিগে বার্সেলোনা ম্যাচ প্রতি যে কটি শট নিয়েছে বা সুযোগ সৃষ্টি করেছে কিংবা পাস দিয়েছে, গত আট বছরের কখনো এত কম ছিল না। তাই এ দলের সঙ্গে আপাতত তুলনায় হয়তো যেতে চাইবেন না অনেক কোচই।