বার্সেলোনার ঘরের ছেলেকে নিয়ে গেল লিভারপুল
বার্সেলোনা তাঁকে ঘরে ফেরাতে চায় বলে গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু নতুন কোচ রোনাল্ড কোমানের সঙ্গে বোঝাপড়ায় মেলেনি বার্সার। কাতালান ক্লাবটাতে নতুন দিনের ডাক দিয়ে, নতুন ঘরানার ফুটবল ফেরাতে চান কোমান, সেখানে নাকি ডি ইয়ং-বুসকেটস-পিয়ানিচদের ভিড়ে থিয়াগো আলকানতারাকে খেলানোর জায়গা খুঁজে বের করতে পারছিলেন না কোমান। অবশ্য থিয়াগো বার্সায় আর ফিরতে চান, এমনটাও কখনো শোনা যায়নি।
বার্সা না পারলেও লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ অনেক আগে থেকেই তাঁর দলের বিকাশের পরের ধাপে থিয়াগোকেই লাগবে বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। পূরণ হলো ক্লপের চাওয়া। অনেক দিন ধরে চলা দলবদল গুঞ্জনটার সমাপ্তি হলো, লিভারপুল পেল বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারকে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি, তবে ইউরোপজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করছে, বায়ার্ন মিউনিখ থেকে লিভারপুলে যোগ দিচ্ছেন থিয়াগো। ইউরোপজুড়ে ক্লাবগুলোর দলবদলের হাঁড়ির খবর জানিয়ে বেশ বিশ্বস্ত হয়ে যাওয়া সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো টুইটে জানিয়েছেন, দলবদলটা শতভাগ নিশ্চিত। থিয়াগোর সঙ্গে লিভারপুলের চুক্তি ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
আর যদি রোমানোর টুইটেও আস্থা না থাকে, সে ক্ষেত্রে জার্মান ক্লাবের কিংবদন্তি ও চেয়ারম্যান কার্ল-হেইঞ্জ রুমিনিগের কথাও জানিয়ে দেওয়া যাক। জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে রুমিনিগে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি লিভারপুলের সঙ্গে অবশেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বায়ার্ন। থিয়াগোর ইচ্ছা ছিল ক্যারিয়ার শেষ করার আগে নতুন করে বড় কিছু করার।’
তাঁকে পেতে বর্তমান ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের খরচ কত হচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্য দুই ধরনের খবর মিলছে। বায়ার্নের সঙ্গে থিয়াগোর চুক্তির আর এক বছর বাকি ছিল, তাঁর বয়স ২৯ চলছে, দাম এমনিতেই আকাশছোঁয়া হতো না। এত দিন খবর এসেছিল, কদিন আগেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা বায়ার্ন থিয়াগোর জন্য ৩ কোটি ইউরো (২ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড) চায়। করোনার কারণে বেশ ক্ষতির মুখে পড়া লিভারপুল সেটি কমানোর অনেক চেষ্টা করেছে এত দিন, পাশাপাশি নিজেদের দলে অনিয়মিতদের বিক্রি করে অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করেছে। অবশেষে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে।
তবে দলবদলের অঙ্কটা নিয়ে দুই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। বিবিসি ও স্কাই স্পোর্টস বলছে, বায়ার্নকে ২ কোটি পাউন্ড নিশ্চিত দেবে লিভারপুল, সঙ্গে বিভিন্ন পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাস মিলিয়ে অঙ্কটা ২ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডই হবে। আবার লিভারপুলভিত্তিক নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক পল জয়েস বলছেন, ২ কোটি পাউন্ড নিশ্চিত, তবে পারফরম্যান্স বিষয়ক বোনাস মিলিয়ে অঙ্কটা হবে ২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড।
১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের মিডফিল্ডার মাজিনিওর বড় ছেলে থিয়াগো ২০০৫ সালে ফ্লামেঙ্গোর একাডেমি থেকে যান বার্সার একাডেমিতে। চার বছর পর বার্সার মূল দলে অভিষেক পেপ গার্দিওলার সৌজন্যে। থিয়াগোর খেলা কতটা পছন্দ ছিল গার্দিওলার, তার প্রমাণ, ২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখে যাওয়ার পর গার্দিওলা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তাঁর থিয়াগোকে চাই, নয়তো কাউকে নয়। বার্সার অনবধানতার সুযোগে তখন থিয়াগোর চুক্তিতে দামও কমে গিয়েছিল। সুযোগটা নিয়ে সে বছর বার্সা থেকে থিয়াগোকে বায়ার্নে নিয়ে যান গার্দিওলা।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছিল, বার্সার বোর্ড তাঁকে ফেরাতে চায়, সে জন্য কোচ কোমানকে বোঝানোরও চেষ্টা করেছে বার্সা বোর্ড
বার্সা তাঁর প্রতিভার সেভাবে মূল্য দিতে পারেনি, কিন্তু বায়ার্নে গিয়ে মাঝমাঠের প্রাণ হয়ে ওঠেন থিয়াগো। মাঠের চারপাশে দারুণ পাসে খেলা নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিপক্ষের চাপ সামলে বল বের করে নিয়ে যাওয়া, আক্রমণ ঠেকিয়ে দ্রুত পাল্টা আক্রমণ সূচনা করা...বায়ার্নেই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁকে মাঝমাঠে রেখেই পাঁচটি লিগ জিতেছে বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে গত মৌসুমে।
এই মৌসুমে তাঁকে পেতে ক্লপ কতটা উন্মুখ ছিলেন, সেটি সংবাদমাধ্যমে বারবার এসেছে। থিয়াগো নিজেও ক্লপের সঙ্গে কথা বলার পর আর অন্য কোনো প্রস্তাব নিয়ে মাথা ঘামাননি। অথচ স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছিল, বার্সার বোর্ড তাঁকে ফেরাতে চায়, সে জন্য কোচ কোমানকে বোঝানোরও চেষ্টা করেছে বার্সা বোর্ড। আর ইংলিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, থিয়াগোকে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। যদিও ইউনাইটেড কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব করেনি বায়ার্নের কাছে, কিন্তু থিয়াগোরও লিভারপুল ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।
বাবা ব্রাজিলিয়ান হলেও থিয়াগো স্পেন জাতীয় দলে খেলেন, লা রোহাদের দশ নম্বর জার্সিও এখন তাঁর দখলে। তাঁর ছোট ভাই রাফিনিয়া আলকানতারা অবশ্য ব্রাজিলেরই। এখনো বার্সায়ই আছেন রাফিনিয়া, তবে থাকা বলতে প্রতি মৌসুমে এখানে-সেখানে ধারে খেলে বেড়াচ্ছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে থিয়াগোই সময়ের ফুটবলে সেরাদের সারিতে নাম লিখিয়েছেন।
তাঁকে পাওয়ায় লিভারপুলের কতটা লাভ হতে যাচ্ছে, তা কদিন আগে সম্ভবত ওয়েইন রুনির কথায়ই সবচেয়ে ভালো করে ফুটে উঠেছে। লিওনেল মেসির তখন বার্সেলোনা ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার গুঞ্জন বাজার পেয়েছে। রুনির চোখে মেসি সর্বকালের সেরাদের একজনই, এক সময়ে ইউনাইটেডে তাঁর সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়েও মেসিকে এগিয়ে রাখেন। কিন্তু নিজের লেখা কলামে সেসব জানিয়েও রুনি লিখেছিলেন, যদি লিভারপুল থিয়াগোকে কিনে ফেলে, তাহলে সেটা হবে ম্যানচেস্টার সিটির মেসিকে পাওয়ার চেয়েও বড় দলবদল।
লিভারপুল দলটাকে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে অনেক যত্নে গড়ে তুলেছেন ক্লপ। শুধু লিভারপুলের মিডফিল্ডে এত দিন সৃষ্টিশীলতা ছিল না, থিয়াগো যাওয়ায় সেটি নিয়েও আর ভাবতে হবে না ক্লপকে। একটাই দুশ্চিন্তা থাকবে, থিয়াগোর যে ঘন ঘন চোটে পড়ার রেকর্ড আছে। এখন লিভারপুল থেকে কোনো একজন মিডফিল্ডারের চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ল। সেটি জর্জিনিও ভাইনালদাম হতে পারেন, যাঁকে পেতে বার্সা কোচ কোমান আগ্রহী বলে শোনা যায়। আবার দুদিন ধরে অ্যালেক্স অক্সলেইড চেম্বারলেইনের জন্য টটেনহাম, উলভারহ্যাম্পটন ও নিউক্যাসল চেষ্টা করছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।