বার্সেলোনাকে কখনো যে টুর্নামেন্টে খেলতে দেখেননি গাভি
২০০৪ সালের সে ম্যাচ কারও মনে রাখার দরকার ছিল না। ২৫ মার্চ ঘরের মাঠে বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল সেল্টিক। নিষ্প্রাণ হোক না হোক, ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। গোলশূন্য ড্রতে শেষ হওয়া এক ম্যাচ এখন আবার আলোচনায়।
সে ম্যাচে মাঠে ছিলেন জাভি, বর্তমান বার্সেলোনা কোচ। ইনিয়েস্তা বেঞ্চে বসে থাকলেও, মাঠে ছিলেন রোনালদিনিও। ডান প্রান্তে ছিলেন লুইস এনরিকে; পরে জাভি-ইনিয়েস্তার কোচ পরিচয়ও জুটেছিল যাঁর। এনরিকে এখন দ্বিতীয় মেয়াদে স্পেনের কোচ। পেশাদার ফুটবলে ২৮৮ মিনিট খেলতে দেখেই যিনি জাতীয় দলে ডেকে নিয়েছেন গাভিকে। গাভির কিন্তু দুই কোচের স্মৃতিধন্য ২০০৪–এর মার্চের সে ম্যাচের কোনো স্মৃতি নেই। তাঁর স্মৃতিশক্তির দোষ নেই, তাঁর জন্মই হয়েছে আরও পাঁচ মাস পর। ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট জন্মেছেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার গাভি।
আজ নাপোলির বিপক্ষে ইউরোপার শেষ ষোলোর প্লে–অফ খেলবে বার্সেলোনা। এক আর্জেন্টাইনের বিদায়ের প্রভাবে এই প্রতিযোগিতা খেলতে এসে আরেক আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বার্সেলোনা। নাপোলি-বার্সেলোনাকে ম্যাচকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘ম্যারাডোনা ডার্বি’ বলেই ডাকা হচ্ছে। নাপোলির সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার আগে তো বার্সেলোনাতেই খেলেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
আজকের আগে সেল্টিকের বিপক্ষেই বার্সেলোনা সর্বশেষ ইউরোপা লিগে খেলেছিল। এরপর ক্লাবটি তাদের স্বর্ণ যুগ পার করেছে। রোনালদিনিও স্বপ্নের মতো দুটি বছর কাটিয়েছেন। জাভির সঙ্গে ইনিয়েস্তাও একাদশে নিয়মিত হয়েছেন এবং মেসি নামের এক মোহর আবির্ভাব ঘটেছে।
১৭ বছরে বার্সেলোনাকে তাই আর কখনো ইউরোপা খেলতে হয়নি। উল্টো চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে দলটি। জাভি-ইনিয়েস্তার বিদায়েও বার্সেলোনাকে ইউরোপা খেলতে হয়নি। কিন্তু এই মৌসুমে মেসির বিদায় একটা তিতকুটে স্বাদ এনে দিচ্ছে। আবারও মহাদেশীয় ফুটবলের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে বার্সেলোনাকে।
গাভির জন্য তাই এ ম্যাচটি একটু অন্য রকম। এ মৌসুমেই বার্সেলোনা অভিষেক তাঁর। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্ন পূরণ হতে না হতেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন, স্পেনের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকের রেকর্ড গড়েছেন, বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বার্সেলোনার মতো ক্লাবের একাদশে নিশ্চিত হয়ে গেছেন। এমন এক মৌসুমেই কিনা তাঁর দলকে ১৮ বছরে প্রথমবারের মতো খেলতে হচ্ছে ইউরোপা লিগে। যে টুর্নামেন্ট জেতার কথা কখনো ভাবনায় আনেননি, সে টুর্নামেন্টে এখন দলকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব পেয়েছেন।
এমন ম্যাচেও অবশ্য চাপ অনুভব করার কথা নয় গাভির। ১০ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। রিয়াল বেতিসের অনূর্ধ্ব-১০ দলের হয়ে গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। সাবেক বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ও এজেন্ট ইভান দে লা পেনিয়ার নজর পড়ে তাঁর ওপর। তখন তাঁকে পেতে চেষ্টা চালাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও ভিয়ারিয়ালের মতো ক্লাব। কিন্তু পেনিয়া তাঁকে বার্সেলোনাতেই যেতে বলছিলেন। সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত গাভিই নিয়েছিলেন। কারণ, ২০১৪ সালের বার্সেলোনায় ছিলেন মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা ও নেইমার।
আজ শুধু জাভিই আছেন বার্সেলোনাতে, ডাগআউটে। মাঠে দলকে পরীক্ষায় উতরানোর দায়িত্ব গাভির। এই মিডফিল্ডারের সে ক্ষমতা আছে। পায়ের কাজ, মাঠে ফাঁকা জায়গা খুঁজে নেওয়া ও সতীর্থকে সময়মতো বল সরবরাহ—বার্সেলোনার মিডফিল্ডারের কাছে যে প্রত্যাশা থাকে সবার, সবই আছে তাঁর। ফলে মাঝমাঠেই খেলুন কিংবা উইংয়ে, গাভি নজর কাড়েন সবার। সে সঙ্গে মাঠে হার না মানা আগ্রাসন তো আছেই। জাভি দায়িত্ব পেয়েই আক্ষেপ করেছিলেন, ক্লাবে বার্সেলোনার খেলার ছন্দই বোঝেন না, এমন খেলোয়াড়ও আছে।
গাভির মতো তরুণেরা জাভির সে আক্ষেপ কমিয়ে দিচ্ছে। এ মৌসুমে অন্তত একটি শিরোপা জেতার স্বপ্নে জাভির অন্যতম অস্ত্র তাই গাভি। তবে এমন এক টুর্নামেন্ট জিততে নামবেন গাভি, যে টুর্নামেন্টে কখনো নিজের দলকে খেলতে দেখেননি।