বার্সেলোনা-এসি মিলানকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বসুন্ধরা কিংস
>
এএফসি কাপের জন্য বসুন্ধরা কিংসে জায়গা হয়নি তাজিকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক আকতাম নাজারভের।
এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংসের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তাজিকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক আকতাম নাজারভের। ধাক্কা খাওয়ার মতো খবরই বটে। অবশ্য বাদ না দিয়েও কোনো উপায় ছিল না বসুন্ধরার কাছে।
এএফসি কাপের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্লাব চারজনের বেশি বিদেশি নিবন্ধন করাতে পারবে না। বসুন্ধরায় নাজারভ ছাড়াও আছেন আক্রমণভাগের মূল প্রাণভোমরা, কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা স্ট্রাইকার দানিয়েল কলিনদ্রেস। এ ছাড়া দলে আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার, লিওনেল মেসির এককালের সতীর্থ হার্নান বার্কোসকে। এ ছাড়াও রয়েছেন দুই কুশলী মিডফিল্ডার কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুশবেকভ ও আর্জেন্টিনার নিকোলাস দেলমন্ত। ফলে কপাল পুড়েছে নাজারভের। এই এএফসি কাপে তাকে দেখা যাবে না। দলের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে নাজারভকে ছেঁটে ফেলতে হয়েছে বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে।
বেশ কয়েক বছর ধরে তাজিকিস্তান জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাজারভ। জাতীয় দলের জার্সিতে ৫০ ম্যাচে ৫টি গোলও করেছেন এই লেফটব্যাক। ২০১৭ সালে ইসতকললের হয়ে এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। খেলেছেন এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচও। এবার এই অভিজ্ঞ তারকাকে ছাড়াই এএফসি কাপ-মিশনে নামছে বসুন্ধরা।
এমন পাঁচজনের মধ্যে থেকে চারজনকে বেছে নেওয়ার যে কোনো কোচের জন্যই মধুর সমস্যা। সে বিষয়টিই সামনে আনলেন বসুন্ধরার কোচ অস্কার ,‘কোন কোচই বা চায় নাজারভের মতো খেলোয়াড়কে দলের বাইরে রাখতে! তবে চারজনের বেশি নেওয়ার তো সুযোগ নেই।’
কলিনদ্রেস, বার্কোস, বখতিয়ার ও দেলমন্তেকে বেছে নেওয়ার কারণ তুলে ধরলেন অস্কার ,‘আমার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রয়োজন। সুতরাং দেলমন্তের বিকল্প নেই। আমার এমন আরেকজন মিডফিল্ডার প্রয়োজন ছিল যে মাঠে প্রচুর শ্রম দিতে পারে। সে হিসেবে বখতিয়ার দুশবেকভ। আর কলিনদ্রেস ও বার্কোস তো বিশ্বমানের খেলোয়াড়।’
বসুন্ধরার এই 'মধুর সমস্যা' মনে করিয়ে দিচ্ছে ইউরোপের দুই শক্তিশালী ক্লাব বার্সেলোনা ও এসি মিলানের দুটি ঘটনাকে। নব্বইয়ের দশকে মূল একাদশে তিনজনের বেশি বিদেশি খেলানোর নিয়ম ছিল না। ইউরোপীয় ফুটবলের অভিভাবক উয়েফা ক্লাবগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল এই নিয়ম। যে কারণে একাধিক প্রতিভাবান বিদেশি খেলোয়াড় থাকলেও তিনজনের বেশি মাঠে নামাতে পারতেন না বার্সেলোনার কোচ ইয়োহান ক্রুইফ ও এসি মিলানের কোচ ফাবিও ক্যাপেলো।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে বার্সার সেই 'ড্রিম টিম' এর বিদেশি সদস্য ছিলেন - মাইকেল লাউড্রপ (ডেনমার্ক), রোমারিও (ব্রাজিল), রোনাল্ড কোম্যান (নেদারল্যান্ডস), গোরান ভুকসেভিচ (ক্রোয়েশিয়া), রিস্টো স্টইচকভ (বুলগেরিয়া) ও রনি একেলান্ড (ডেনমার্ক)। উয়েফার নিয়মের কারণে সে মৌসুমে প্রায়ই মূল দলে সুযোগ হতো না লাউড্রপের। ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ করতেন না তিনি। ফলাফল, পরের মৌসুমে বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন ডেনমার্কের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকা। পেপ গার্দিওলার তখন বার্সেলোনার খেলোয়াড় ছিলেন, ছিলেন লাউড্রপের সতীর্থ। হাজারো কেঁদে কেটে লাউড্রপকে ধরে রাখতে পারেননি গার্দিওলা।
একই সময়ে এসি মিলানও ভুগছিল ওই সমস্যায়। দলে 'ডাচ ত্রয়ী' - মার্কো ফন বাস্তেন, রুড খুলিত ও ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড ছাড়াও ছিলেন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার কিংবদন্তি খেলোয়াড় দেয়ান সাভিসেভিচ, ক্রোয়েশিয়ার জোনিমির বোবান, ফ্রান্সের কুশলী স্ট্রাইকার জ্যাঁ-পিয়েরে পাপাঁ। রেড স্টার বেলগ্রেডের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জেতা দেয়ান সাভিসেভিচকে তাই প্রায় সময় বেঞ্চে বসে থাকতে হতো। যদিও পরে লাউড্রপের মতো ক্লাব ছাড়েননি তিনি, নিজেকে মূল একাদশের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন আস্তে আস্তে।
নাজারভকে নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের এই কাহিনি তাই মনে করিয়ে দিল বার্সা-মিলানের দুটি ঘটনাকে। নাজারভকে ছাড়া চার বিদেশি (বার্কোস, কলিনদ্রেস, দেলমন্ত, দুশবেকভ) নিয়ে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে আজ এএফসি কাপে অভিষেক হচ্ছে বসুন্ধরার। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা সাড়ে তিনটায়।