বার্সেলোনা আশা করেছিল, বিনা বেতনে খেলবেন মেসি
লিওনেল মেসিকে বার্সেলোনা একটি কারণেই ছেড়েছে, বেতন। ৩০ জুন আগের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হতো মেসিকে। প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে বেতন অর্ধেক করতে রাজি হয়েছিলেন মেসি। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয়নি। আর্থিকভাবে এতটাই দুরবস্থা বার্সেলোনার যে আইন না ভেঙে মেসির অর্ধেক বেতনও তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হতো না। ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে তারা ধরে রাখতে পারেনি। বার্সা থেকে কান্নাভেজা বিদায়ের পর মেসি চলে গেছেন পিএসজিতে।
এসবই দুই মাস আগের খবর। আবার নতুন করে তোলা হচ্ছে কেন? কারণ, বার্সেলোনার সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এ প্রসঙ্গে নতুন করে কথা বলেছেন। অপ্রয়োজনীয় ও সেরাটা বহুদিন আগে পার হয়ে আসা খেলোয়াড়দের উচ্চ বেতন দিয়ে নিজেদের খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে বার্সেলোনা। আর তারাই কিনা আশা করছিল, তাদের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করুক মেসি, রাজি হোক বিনা বেতনে খেলতে!
আগের সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর অধীনে ক্লাবের আয়-ব্যয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। অবিশ্বাস্য অঙ্কের বেতন দিয়ে রাখা হয়েছিল স্কোয়াডের সবাইকে। বিশ্ব ফুটবলেই বেতনের খরচে বার্সেলোনার ধারেকাছে কেউ ছিল না। সে সঙ্গে ব্যর্থ দলবদলও ক্লাবটির আর্থিক দুর্দশা ডেকে এনেছিল। এই অবস্থায় মেসিকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বার্সেলোনার পক্ষে। স্প্যানিশ লিগ কমিটির বেঁধে দেওয়া বেতনের সীমার মধ্যে থেকে মেসির চুক্তি নিবন্ধন করানো বার্সার পক্ষে সম্ভব ছিল না। লিগ কমিটির নিয়ম অনুযায়ী যেখানে একটা ক্লাব তাদের আয়ের ৭০ ভাগ বেতনের পেছনে ব্যয় করতে পারে, সেখানে মেসির চুক্তি নিবন্ধনের আগেই বার্সার বেতনের বিল ছিল তাদের আয়ের ৯৫ ভাগ!
আগের মৌসুমেই সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ডের ওপর রাগ করে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। তবে গত মার্চে লাপোর্তা সভাপতি হয়ে আসার পর মত পাল্টেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, করতে চেয়েছিলেন নতুন চুক্তি। কিন্তু লা লিগার নিয়ম মেনে বেতন সীমার মধ্যে মেসিকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এরপরই সবকিছু দ্রুত ঘটে গেছে। বার্সেলোনা জানিয়েছে, চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মেসিও এক সপ্তাহের মধ্যে পিএসজির হয়ে গেছেন।
এসব নিয়েই কাতালান রেডিও আরএসিওয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন লাপোর্তা। বার্সা সভাপতি বলছেন, মেসি একসঙ্গে দুটি কাজ এগিয়ে রাখছিলেন। একদিকে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির কথা বললেও পিএসজির প্রস্তাবও মাথায় রাখছিলেন। এ কারণেই এত দ্রুত প্যারিসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মেসির। তবে এতে মেসির ওপর তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই বলেই জানালেন লাপোর্তা, ‘মেসির ক্ষেত্রে আমার রাগ হয় না; কারণ, ওকে আমি ভালোবাসি। আমি জানি, ওর এখানে থাকার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ওর কাছে যে প্রস্তাব ছিল, সে কারণে চাপেও ছিল। এটা তো বোঝাই যাচ্ছিল, পিএসজি তাকে আগেই প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল। সবাই জানত, খুবই ভালো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাকে। মেসির কাছ থেকেই আমরা জেনেছি, ওরা খুব ভালো প্রস্তাব দিয়েছিল।’
বেতনের কারণে মেসিকে ধরে রাখা যাবে না, এটা জানিয়েও আশায় ছিলেন লাপোর্তা। কীভাবে? তাঁর ধারণা ছিল, বার্সেলোনায় বেড়ে ওঠার সুবাদে, দুই দশকের ভালোবাসার টানে বিনা বেতনেই খেলতে রাজি হবেন মেসি! আরএসিওয়ানে এমন চমকে দেওয়া কথাই শোনালেন লাপোর্তা, ‘(মেসির চুক্তি নবায়নে) একবারও পিছু হটার কথা মনে হয়নি। বার্সার জন্য যেটা ভালো, সেটাই করতে চেয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলতে পারবে না কেউ। আমি যদিও আশা করেছিলাম, শেষ মুহূর্তে মেসি বলবে, সে বিনা মূল্যে খেলবে। এটা হলে আমার ভালো লাগত, এবং আমি এতে বিশ্বাস রাখতাম। আমার ধারণা, লিগও এটা মেনে নিত। কিন্তু এই মানের এক খেলোয়াড়ের কাছে এমন দাবি আমরা করতে পারি না।’
মেসি বিনা বেতনে খেলতে চাইলে সেটি কীভাবে সম্ভব হতো, তা অবশ্য খোলাসা করেননি লাপোর্তা। কারণ, স্প্যানিশ লিগের আইন অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের কোনো খেলোয়াড়ের নতুন চুক্তির ক্ষেত্রে আগের চুক্তির অর্ধেকের বেশি বেতন কমানো যায় না। মেসিও বার্সা থেকে বিদায়ের বেলায় বারবার বলেছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বেতন কমানো সম্ভব বলে তিনি ৫০ শতাংশই কমাতে রাজি ছিলেন। আরও বেশি বেতন কমানো আইন অনুযায়ী সম্ভব হলে এবং বার্সা তেমন প্রস্তাব দিলে তিনি আরও বেতন কমাতে রাজি ছিলেন বলেও তখন জানিয়েছিলেন মেসি।
লাপোর্তার এই মন্তব্যের পর মেসির বার্সা থেকে বিদায় ঘিরে ধোঁয়াশা-বিতর্ক আরও বাড়ল আরকি!