বার্সা-রিয়াল-জুভের স্বপ্ন ধাক্কা খেল ইউরোপীয় ইউনিয়নে
উয়েফা। ফিফা। এর সঙ্গে এবার যোগ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)।
ইউরোপিয়ান সুপার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছেই। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের কুলীন ১২টি ক্লাব মিলে গত এপ্রিলে বিতর্কিত এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল, এর মধ্যে ৯ ক্লাব সরেও গেছে। যদিও গোপনে তারাও সুপার লিগের পরিকল্পনায় আছে বলেই খবর। তবে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ‘সুপার লিগ’-এর এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো এগিয়ে চলছে সুপার লিগের মূল হোতা তিন ক্লাব—রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস।
কিন্তু আজ ইইউর আদালতে এক কার্যবিবরণী পাস হলো, যেখানে ‘বিদ্রোহী টুর্নামেন্ট’গুলোর বিরোধিতা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে উয়েফা সেটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। আর উয়েফার প্রভাবকে ‘একচেটিয়া’ জানিয়ে বার্সা, রিয়াল ও জুভ জানাচ্ছে, ইইউর ‘ন্যায্য ও মুক্ত টুর্নামেন্টের’ পথ খোলা রাখা উচিত।
রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে জুভেন্টাসের সভাপতি আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি তো ছিলেনই, বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর পর বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাও যুক্ত আছেন ইউরোপিয়ান সুপার লিগের মূল পরিকল্পনায়।
এই তিন ক্লাবের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের ছয়টি (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, টটেনহাম, চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি), স্পেনের আতলেতিকো মাদ্রিদ এবং ইতালির ইন্টার মিলান ও এসি মিলান যোগ দিয়ে গত এপ্রিলে সুপার লিগ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু ভক্তদের বিরোধিতা ও উয়েফা-ফিফার শাস্তির হুমকির মুখে ৯টি ক্লাব সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় দুই দিনের মধ্যেই। থেকে যায় শুধু রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাস।
উয়েফার বিরুদ্ধে আদালতেও যায় তিন ক্লাব। মাদ্রিদের আদালত থেকে তারা সুখবরই পেয়েছিল মে মাসে। মাদ্রিদের আদালত তখন উয়েফাকে নির্দেশ দেন সুপার লিগের সঙ্গে জড়িত ক্লাবগুলোকে কোনো জরিমানা-শাস্তি না দিতে। পাশাপাশি সুপার লিগ আয়োজনে বাধা তৈরি করে উয়েফা ও ফিফা কোনো নিয়মের লঙ্ঘন করছে কি না, সেটি দেখতে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসকেও অনুরোধ করেন মাদ্রিদের আদালত।
এর মধ্যে আজ ইইউ সংসদে ৫৯৭-৩৬ ভোটে (৫৫ জন অনুপস্থিত) পাস হওয়া কার্যবিবরণী এল রিয়াল-বার্সা-জুভের জন্য ধাক্কা হয়ে। এরপর ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলসহ জাতীয় সরকারগুলোর কাছে পাঠানো হবে বিবরণী।
এই বিবরণীতে একটি ‘ইউরোপিয়ান স্পোর্টস মডেল’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়, যে মডেলে ‘একাত্মতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা, সবার জন্য উন্মুক্ত এবং মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্রীড়াক্ষেত্রে মেধা ও ন্যায্যতা’ নিশ্চিত করা হবে।
বিবরণীতে ইইউ জানিয়েছে, ‘এসব নীতিকে অবজ্ঞা করা এবং সব মিলিয়ে ইউরোপের ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিবেশ নষ্ট করা যেকোনো বিদ্রোহী টুর্নামেন্টেরই বিপক্ষে থাকবে ইইউ।’
তবে সুপার লিগকে আর্থিক সমর্থন দিয়ে যাওয়া মাদ্রিদের কোম্পানি এটুটু স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের আনাস লাগরারি ও জন হান বলছেন, তাঁদের পরিকল্পনা (সুপার লিগ) ইইউ সংসদে পাস হওয়া নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তাঁদের দাবি, উয়েফা নিজেই একটা একচেটিয়া ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন বলেছেন, ‘ইউরোপিয়ান ফুটবলকে বাঁচাতে’ তাঁর সংস্থা ইইউর সঙ্গে মিলে কাজ করবে।