বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনেও খেলতে নেমেছিলেন রোনালদো
জোসে দিনিস আভেইরো। ভদ্রলোক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বাবা। রোনালদো যখন ছোট, বয়স সাত বা আট হবে, দিনিস আভেইরো আনদোরিনহা নামে পর্তুগিজ একটি ক্লাবে চাকরি করতেন। রোনালদোকে তিনি সেই ক্লাবেই খুদে ফুটবলার হিসেবে নাম লিখিয়ে দেন। তিন বছর আনদোরিনহায় খেলে রোনালদো নাম লেখান নাসিওনালে। সেখান থেকে স্পোর্তিংয়ের যুব দলে যোগ দেন। তা রোনালদো যেখানেই গেছেন, বাবা ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে। ছেলেকে বড় ফুটবলার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন দিনিস আভেইরো।
কিন্তু দিনিস আভেইরো যেদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান, খবরটি শুনেও সঙ্গে সঙ্গেই কান্নাকাটি করে রোনালদো ছুট দেননি বাড়ির উদ্দেশে। পর্তুগালের হয়ে খেলার জন্য তিনি ছিলেন তখন টিম হোটেলে। ২০০৫ সালে বাবার মৃত্যুর খবরটি তিনি পেয়েছিলেন সে সময়ে পর্তুগালের কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারির কাছ থেকে। সেদিন কী ঘটেছিল আর কীভাবেই–বা রোনালদোকে খবরটি দিয়েছিলেন স্কলারি, এত দিন পর ব্রাজিলিয়ান কোচ ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি মেইলে এক সাক্ষাৎকারে তা জানিয়েছেন।
রোনালদো যখন বাবাকে হারিয়েছেন, তখনো এত বড় তারকা হয়ে ওঠেননি। ক্যারিয়ারটা বলতে গেলে কেবল শুরু করেছেন। ২০ বছর বয়সী কাঁচা মন। এই বয়সী একটা ছেলেকে বিদেশ–বিভুঁইয়ে বসে তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্ধের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলেন স্কলারি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কাজটা খুব কঠিন ছিল। তবে সে সময়ে আমাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। বন্ধনটা এমন হয়েছিল, যেটা কোচ আর খেলোয়াড়ের সম্পর্ককে ছাপিয়ে গেছে।’
স্কলারি বলে চলেন, ‘রাশিয়ার বিপক্ষে একটি ম্যাচের আগে আমরা খবরটি পাই। কেউ বুঝতে পারছিল না, খবরটি তাকে কীভাবে দেবে। তাকে খবরটি জানানোর সাহসও কেউ করতে চাইল না। তাই আমি তাদের বললাম যে আমিই খবরটি তাকে জানাব। আমি জানতাম বাবা বা মাকে হারানোর কষ্টটা কেমন। কারণ, আমি ওই ঘটনার কয়েক বছর আগেই এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি।’
এরপর কীভাবে রোনালদোকে খবরটি জানিয়েছেন, সাক্ষাৎকারে সেটা বলেছেন এভাবে, ‘এটা খুবই কষ্টের ছিল। পরের দিন ক্রিস্টিয়ানো অসাধারণ একটি ম্যাচ খেলেছে। এরপর সে পর্তুগালে ফিরে গেছে। সে নিজে থেকেই খেলতে চেয়েছে। আমাকে সে বলেছিল, “আমি তো বাবার জন্য আজ কিছুই করতে পারব না। তাই আমি আগামীকাল ম্যাচটি খেলব এবং এরপর বাড়ি যাব।”’
সাক্ষাৎকারে রোনালদোর খেলা এবং তিনি কেমন খেলোয়াড়, তা নিয়েও কথা বলেছেন স্কলারি, ‘সে তো একটা গোলমেশিন। অসাধারণ একজন মানুষ। আমি তাকে ২০০৩ সালে স্পোর্তিংয়ে দেখেছি। ভালো খেলার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুর চেয়ে এখন আরও বেশি ক্ষুধার্ত সে।’ মানুষ রোনালদো নিয়ে স্কলারি বলেছেন, ‘সে অসাধারণ এক মানুষ। মাঠের বাইরে সে কত ভালো মানুষ, সেটা আমরা অনেক সময়ই দেখতে পাই না।’
নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনিওর মতো খেলোয়াড়কে নিয়ে কাজ করেছেন স্কলারি। সবকিছু বিবেচনা করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই তাঁর সবচেয়ে প্রতিভাবান শিষ্য কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্কলারি বলেছেন, ‘হয়তো সে সবচেয়ে প্রতিভাবান নয়। তবে সে সবার চেয়ে বেশি নিবেদিতপ্রাণ। রোনালদোর কথা ভাবলে প্রতিভা কখনোই প্রথম আসবে না। কিন্তু আজকের রোনালদোকে গড়ে তুলেছে তার নিবেদন।’