২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ কার

জামাল ভূঁইয়া দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন?ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার কে? প্রশ্নটার সঠিক উত্তর সম্ভবত কেউই দিতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের কে কত ম্যাচ খেলেছেন, তার যেকোনো সঠিক হিসাবই নেই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও এ নিয়ে কোনো তথ্য সংরক্ষণ করেনি।

তবে দুই দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে যে জামাল ভূঁইয়া এখন বাংলাদেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার। ১১ জুন তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিকে তাঁর ৬৫তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ বলা হচ্ছে। জামালের নিজের হিসাবও তা-ই। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রামাণ্য কোনো দলিল নেই।

জাহিদ হাসান এমিলির খেলা ম্যাচের সংখ্যা কত?
ফাইল ছবি

জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলির আন্তর্জাতিক ম্যাচও ৬৪টি—এমনটিই জানা যায়। একইভাবে জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামের ম্যাচ ৬৩টি। আলফাজ আহমেদের ম্যাচ দেখানো হচ্ছে ৫৫টি। তবে মামুনুল, আলফাজের দাবি, তাঁদের ম্যাচ আরও বেশি। এমন দাবি করতে পারেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক রাইটব্যাক ও বর্তমানের সহকারী কোচ হাসান আল মামুনও। এমন হলে জামাল ভূঁইয়াকে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার বলা যাবে না। এ ব্যাপারে বাফুফের কাছেও কোনো তথ্য নেই।

জামাল নিজেও জানেন না তিনি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন কিনা
ছবি: সংগৃহীত

এ নিয়ে জামালের কী প্রতিক্রিয়া? তিনি খুশি, কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত নন, রেকর্ডটা গড়েছেন বা গড়তে চলেছেন। নিজেও আছেন বিভ্রান্তিতে। আগামীকাল মালয়েশিয়ার বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে শেষ ম্যাচ খেলার আগে আজ টিম হোটেল সংবাদ সম্মেলনে শেষ জামাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। অনেকে বলছেন তাঁরা সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের হয়ে। কিন্তু আসলে আমি কতগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি সেই হিসাব আমার কাছে নেই। আমি এগুলো কাউন্ট করি না।’

জাতীয় দলের সহকারী কোচ হয়েছেন হাসান আল মামুনও জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলেছেন। তাঁর খেলা আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যাও কম নয়
ছবি: সংগৃহীত

কেন ‘কাউন্ট’ করেন না—জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি শুধু ম্যাচ খেলি। সেটাই আমার মূল কাজ। ম্যাচের হিসাব রাখি না। এমনকি ক্লাবের হয়ে কতগুলো খেলেছি, সেটাও আমার জানা নেই। এগুলো মানুষ হিসাব করবে, এটা আমার কাজ না।’

ধরে নেওয়া যাক জামালই দেশের হয়ে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়তে চলেছেন বা গড়েছেন। ভাবতে কেমন লাগছে—জানতে চাইলে বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তর, ‘যদি আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার ফুটবলার হই, তাহলে সেটা হবে দারুণ ব্যাপার। ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে। বাংলাদেশের বা বাংলাদেশের বাইরের যেকোনো খেলোয়াড়ের স্বপ্ন দেশের হয়ে খেলবে। আমি সৌভাগ্যবান যে অনেক ম্যাচ খেলেছি। অবশ্যই আমি সম্মানিত বোধ করছি।’

জাতীয় দলে জামালের অভিষেক ২০১৩ সালে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে খেলছেন। কিন্তু ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কি ভেবেছিলেন যে এতগুলো (বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে বেশিই) আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলবেন?

মামুনুলও জামালের কাছাকাছিই ম্যাচ খেলেছেন
ছবি: প্রথম আলো।

টিম হোটেলের সুইমিংপুলে বসে প্রথম আলোকে ডেনমার্কে বেড়ে ওঠা ৩২ বছর বয়সী ফুটবলার বলেন, ‘আমি কখনো চিন্তা করিনি, এতগুলো ম্যাচ খেলব। আমি ভেবেছি, সালাউদ্দিন ভাইয়েরা অনেক ম্যাচ খেলেছেন। তাঁদের ম্যাচ হয়তো এক শটার ওপরে হবে (উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কাজী সালাউদ্দিনের দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ২৭টি)। কিন্তু এখন শুনছি আমিই নাকি সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছি। সত্যি বলতে এতে আমি বিস্মিত।’

সত্তর-আশি বা নব্বইয়ের দশকে আজকের মতো এত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। সত্তর দশকে ম্যাচ খেলা হতো বছরে হাতে গোনা। পরবর্তী সময়েও ম্যাচ সেভাবে বাড়েনি, যতটা বেড়েছে বর্তমান সময়ে। গত জুন থেকে এক বছরে বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বাদ নিয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা রেকর্ড।

জামালের ম্যাচসংখ্যা বাড়ছে, কারণ তিনি ম্যাচ খেলছেন নিয়মিত। দলের অধিনায়ক যেহেতু, তাঁর নামটা আগেই খেলোয়াড় তালিকায় লেখেন কোচ কাবরেরা বা তাঁর আগের কোচরাও লিখতেন। তবে এখানেই না থেমে সামনে টানা ম্যাচ খেলে যাওয়ার আশা জামালের, ‘আমি সামনে আরও ম্যাচ খেলব। কারণ, এখনো ফিট আছি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করব আরও। শরীর ফিট থাকলে খেলে যাব।’

আলফাজের ম্যাচের সংখ্যা কত তিনি নিজেও নিশ্চিত নন
ফাইল ছবি, এএফপি

সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে অনেক বিতর্কের জবাব দিয়েছেন জামাল। গত মার্চে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রেফারিকে লাথি মারার বিতর্ক, সাইফ স্পোর্টিং থেকে অধিনায়কত্ব হারানো সবকিছুতেই অকপট তিনি।

সাইফের অধিনায়কত্ব হারানো প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নতুন ক্যাপ্টেন এসেছে এবং সেটার দরকারও আছে। তাই অধিনায়কত্ব হারিয়ে আমার মন খারাপ হয়নি।’ তবে পরক্ষণে যেন একটু হতাশাও ব্যক্ত করেন, ‘...কিন্তু খবরটা যেভাবে মিডিয়ার কাছ থেকে প্রথম পেয়েছি, তাতে খারাপ লেগেছে। তবে এটা ফুটবলে হতেই পারে। আমি ফুটবল খেলছি, এতে আমি খুশি।’

রেফারিকে লাথি মারা নিয়ে তাঁর কথা, ‘যখন শুনেছি আমি রেফারিকে লাথি মেরেছি, তখন ভেবেছি, লাথি মারলে অবশ্যই লাল কার্ড পেতাম। কিন্তু লাল কার্ড তো পাইনি। তাহলে আমি লাথি মারলাম কোথায়?’

এসব বিষয় ভুলে গেছেন বলে জানালেন জামাল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরাহা এখনো হয়নি। লাথি-কাণ্ড অধিকতর তদন্তের জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর কথা বলেছে বাফুফে, কিন্তু তিন মাসেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।

তবে জামাল এখন আর এসব ভাবেন না। তাঁর চিন্তায় শুধুই এখন কালকের মালয়েশিয়া ম্যাচ। যে ম্যাচে জিততে চান জামাল।

এমন দিনে দাঁড়িয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে তর্কযোগ্যভাবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা বা খেলতে যাওয়ার আনন্দটাও টের পাচ্ছেন।