২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশকে জিততে দেন না ছেত্রী

১১৫ ম্যাচে ৭২ গোল সুনীল ছেত্রীর।ছবি: টুইটার

ফুটবলে ভারত-বাংলাদেশ লড়াই সব সময়ই অন্য রকম আবহ ছড়ায় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। ফলে মানের দিক থেকে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এই দুই দল মাঠে নামলে সেই পার্থক্য যেন আড়ালে চলে যায়। দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সাফল্যের পাল্লা ভারতের দিকে অনেকটা হেলে থাকলেও বাংলাদেশ কিন্তু কখনোই ছেড়ে কথা বলেনি। হারা ম্যাচগুলোয় লড়াই হয়েছে, অনেক ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে জিততে ড্র করেছে। আগামীকাল দোহায় বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আরও একটি ভারত-বাংলাদেশ লড়াই। এ ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাংলাদেশ কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে আলাদা করেই ভাবছে। সেটি ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর কারিশমা। এই তারকা ফুটবলার যে সাম্প্রতিক অতীতে অন্তত দুটি ম্যাচে জয়-বঞ্চিত করেছেন বাংলাদেশকে।

২০১৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ মুহূর্তে ফ্রিকিক–কারিশমায় বাংলাদেশকে জয়–বঞ্চিত করেছিলেন সুনীল ছেত্রী।
ফাইল ছবি

কেবল বাংলাদেশ নয়, ছেত্রীকে নিয়ে ভাববে যেকোনো দলই। ১১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৭২ গোল করে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে ছেত্রীর রেকর্ড নিয়ে আলোচনায় চলে আসেন লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের মতো মহাতারকারাও। তিনি ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। তাঁর ৭২ গোল, এ মুহূর্তে ফুটবল বিশ্বে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম নামটা জুভেন্টাস তারকা রোনালদোর!

ছেত্রী হয়ে উঠবেন বাংলাদেশ–রক্ষণের সবচেয়ে বড় হুমকি।
ছবি: টুইটার

তাঁর এই ৭২ গোলের মধ্যে বাংলাদেশের বুকে বিঁধেছে দুটি। ২০০৭ সালে দিল্লিতে নেহরু কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম খেলেছিলেন এই তারকা ফরোয়ার্ড। সেবার বাইচুং ভুটিয়ার গোলে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হারলেও রক্ষণে ঠিকই আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন তরুণ ছেত্রী। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, বাইচুংয়ের পর ভারতীয় ফুটবলের বড় তারকা হয়ে উঠবেন তিনি। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম গোল তিনি পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে কাঠমান্ডু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সে ম্যাচে আতিকুর রহমানের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত করেন ছেত্রী। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে বাংলাদেশের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া এক ফ্রি-কিক দারুণভাবে কাজে লাগান তিনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ড্র করেই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। একইভাবে ২০১৪ সালের মার্চে গোয়াতে এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশকে জয় বঞ্চিত করেছিলেন ছেত্রী। সে ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ছেত্রীর গোলে ২-২-এ ড্র হয় ম্যাচটি।

এই দুটি ম্যাচের ইতিহাস তো আছেই, ছেত্রীকে নিয়ে জেমি ডে আলাদা করে ছক কষবেন আরও অনেক কারণে। ছেত্রী ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার, ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা; এর বাইরেও ছেত্রীর আরও কিছু কীর্তি আছে, যেটি তাঁকে বাকি সবার চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক করেছেন, আই লিগে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলও তাঁর। হালের আইএসএলেও একইভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতার কীর্তি নিজের করে রেখেছেন তিনি।

ছেত্রীকে ‘বোতলবন্দী’ করে রাখতে হবে বাংলাদেশকে।
ছবি: টুইটার

২০১৯ সালের অক্টোবরে কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্রথম পর্বের বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে ‘বোতলবন্দী’ ছিলেন ছেত্রী। এর মধ্যেও ম্যাচে যে কয়বার সুযোগ পেয়েছিলেন, বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। দোহার ফিরতি পর্বে ছেত্রী যেকোনোভাবেই চাইবেন কলকাতার সে ম্যাচের অপূর্ণতা ঘোচাতে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ফুটবল থেকে অনেক দিন দূরেই ছিলেন। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কাতারের সঙ্গে খুব বেশিক্ষণ তাঁকে মাঠে রাখেননি ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ। তাই নিজেকে ফিরে পেতে ছেত্রী যে বাংলাদেশ ম্যাচকে পাখির চোখ করবেন, এটা বলাই যায়।

ছেত্রী দোহার ম্যাচে বাংলাদেশের রক্ষণের জন্য হতে যাচ্ছেন অগ্নিপরীক্ষা। কলকাতার ম্যাচের মতো এ ম্যাচে বাংলাদেশি রক্ষণসেনারা ছেত্রীকে কতটুকু বন্দী করতে পারেন, তার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। এটা নিশ্চিত কোচ জেমি ডে’ও ব্যাপারটি ভাবছেন ঠিক এভাবেই।