বসুন্ধরাকে প্রথম শিরোপা উপহার দিলেন মতিন মিয়া
>প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে এ মৌসুমে দল গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। ফেডারেশন কাপ জেতা হয়নি। আজ স্বাধীনতা কাপ জিতে প্রথম শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতল তারা।
‘আর কীসের কলিন্দ্রেস, প্লেয়ার হলো মতিন!’
খেলা শেষে ভিআইপি গ্যালারি থেকে মাঠে যাওয়ার সময় কথাটি বললেন বসুন্ধরা কিংসের এক কর্মকর্তা। কোস্টারিকার জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলা তারকাকে ছোট করতে নয়, মতিন মিয়ার প্রশংসা করতে গিয়েই কলিন্দ্রেসের সঙ্গে তুলনা। বিশ্বকাপ তারকার সঙ্গে তুলনায় না গেলে যেন স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে মতিনের গুরুত্বটা বোঝানো যেত না। তাঁর জয়সূচক গোলেই শেখ রাসেলকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জয় করেছে বসুন্ধরা। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটিই তাদের প্রথম শিরোপা।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ১-১ গোলে ড্র। প্রথমার্ধের ১৭ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান মার্কাস ভিনিসিয়ুসের কামানের গোলার মতো তীব্র এক শটে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। তবে বসুন্ধরা এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে বিরতিতে যেতে পারেনি। মধ্যাহ্ন বিরতির বাঁশি পড়ার আগ মুহূর্তে বুলেট গতির আরেক শটে গোল করে ম্যাচে শেখ রাসেলকে সমতায় ফেরান নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল অনব্রো। দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ হয়।
অতিরিক্ত সময়ের উত্তেজনার মধ্যেই ৯৫ মিনিটে বাজিমাত করেন মতিন। বক্সের মধ্যে বিপলুর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দূরের পোস্টে প্লেসিং করে বসুন্ধরাকে শিরোপার আনন্দে উদ্বেলিত করেন এই স্ট্রাইকার।
অথচ পাহাড় সমান সমস্যা নিয়ে আজ ফাইনালে নেমেছিল বসুন্ধরা। নিষেধাজ্ঞার কারণে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য নিয়মিত অধিনায়ক তৌহিদুল আলম সবুজ ও ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা নেই। ইনজুরিতে ছিটকে গিয়েছেন দলের সেরা ডিফেন্ডার স্প্যানিশ হোর্হে গোতর ও স্থানীয় নুরুল নাঈম ফয়সাল। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, কিরগিজস্তান জাতীয় দলের মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশবেকভ গিয়েছিলেন জর্ডানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে। গতকাল ম্যাচ খেলে রাতে ফিরে আজই একাদশে নেমে পড়া। এমন একটি ভঙ্গুর দল নিয়ে রাসেলকে বশে আনা কঠিন কাজই বটে। যারা কি না আজই টুর্নামেন্টে গোল হজম করল প্রথম। অর্থাৎ ফাইনালে নামার আগ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে ক্লিন শিট ছিল সাইফুল বারি টিটুর গোলপোস্ট।
আজও দুর্দান্ত খেলেছে সাইফুল বারির দল। দেশের অন্যতম সেরা এই কোচের মূল কারিশমায় আঁটসাঁট রক্ষণভাগ। নাইজেরিয়ান আলিসন উদোকার নেতৃত্বে বিশ্বনাথ-ইয়াসিন-ইয়ামিনদের সলিড রক্ষণভাগ। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়ুস যেভাবে প্রথমবারের মতো রাসেলের গোলের দরজা খুলে নিলেন, তাতে কিছুই করার ছিল না তাঁদের। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে কামানের গতির শট দূরের পোস্টে, ১-০। যেন পা থেকে নয়, বলটা বের হয়েছে কামান থেকে। এমন গোলের পর ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকারের হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরা পুরস্কার।
এর পরে বেশ কয়েকবার ম্যাচে ফেরার মতো সুযোগ তৈরি করে রাসেল। কিন্তু বারবার বাধা হয়ে দাঁড়ান বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। শেষ দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়ে ফাইনালে নিয়ে আসা জিকো যেন আজ পণ করেই নেমেছিল, বল নিজেদের পোস্টে ঢুকতে দেব না। ২৯ মিনিটে ঠেকিয়েছেন রাফায়েলের শট, ৪২ মিনিটে গোল বঞ্চিত করেছেন ইয়ামিন মুন্নাকে। একটা করে গোল ঠেকিয়ে দেন জিকো, আর রাসেলের গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল ‘ইশ্...’
শেষ রক্ষা হয়নি। রাফায়েলের পা থেকে ওই গোলে কোনো গোলরক্ষকেরই কিছু করার থাকে না। কাউন্টার অ্যাটাকে রাফায়েল দা সিলভার এরিয়াল থ্রু ধরতে গতিতে বসুন্ধরার দুই সেন্টারব্যাক বখতিয়ার ও নাসিরউদ্দিনকে পেছনে ফেলে দেন। বক্সের বাইরে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কামান গতির শটে সমতা ফিরিয়েছেন রাফায়েল।
প্রথমার্ধেই এমন দুই দুর্দান্ত গোল দেখার পর মনে হচ্ছিল দ্বিতীয়ার্ধে কি না জানি টগবগে ম্যাচ অপেক্ষা করছে! কিন্তু কিসের কী। রগরগে ট্রেলার দেখে যেমন সব ছবির পুরো রূপ ধরা যায় না, ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধটাও তাই। একপ্রকার ম্যাড়ম্যাড়েই বটে। মাঝে মাঝে দুই একটা বল নিয়ে সলো মুভ করে মতিন উত্তেজনা ছড়িয়েছেন মাত্র।
অতিরিক্ত সময়ে মতিন দেখিয়েই দিয়েছেন তাঁর রূপ। বিপলুর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে সামনে এক ডিফেন্ডার থাকা সত্ত্বেও দূরের পোস্টে বলটা রাখলেন ঠিকঠাক। দারুণ এক গোল। ম্যাচ শেষের বাঁশি পড়তে মতিনকে আর কে পায়। কার আগে কে মাথায় তুলবে সে প্রতিযোগিতাই চলল।