ফ্রান্সের ঘটনায় মুখ খুললেন ওজিল
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানকে জার্সি উপহার দেওয়া আর তাঁর পক্ষে রাজনৈতিক কথা বলার জেরে জার্মানি দল থেকে বাদ পড়েছেন আগেই। মেসুত ওজিল কাগজে-কলমে এখনো আর্সেনালের খেলোয়াড় হলেও জায়গা পাচ্ছেন না দলে। আর্সেনালের বিষয়টিতে অভিমানে আবেগী একটি টুইট করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার। এবার তিনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন ফ্রান্সের ঘটনায় টুইট করে।
ফ্রান্সে এক শিক্ষককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় কিছুদিন আগে। এরপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির দ্বিতীয় প্রধান ধর্ম ইসলাম। বিপথগামী এক মুসলিম শরণার্থীর কারণে এ ঘটনা ঘটায় ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন মাখোঁ। এভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসলামকে জড়ানোয় দেশটির ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। মাখোঁর সমালোচনা চলছে মুসলমানদের মাঝে। বিশ্বের মুসলিম প্রধান অঞ্চলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সে চলমান এই অস্থিরতা নিয়ে ওজিল টুইট করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো জায়গা নেই।’
জার্মানির সাবেক মিডফিল্ডার ওজিলের জন্ম জার্মানিতে, তবে তুরস্কের এক মুসলিম পরিবারে। মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও নিজেকে সব সময়ই ধর্ম নিয়ে বিতর্কের বাইরেই রেখেছেন ওজিল। নিজেকে তিনি দূরে রাখতেন অন্য সব বিতর্কিত বিষয় থেকেও। কিন্তু এরদোয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও তাই রাশিয়া বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলা হয়নি তাঁর।
বিশ্বকাপের পর থেকে আর দলে জায়গাই পাননি। সাত বছর আগে রিয়াল থেকে আর্সেনালে যোগ দেওয়া মিডফিল্ডার এরপর ব্রাত্য হয়ে পড়েন আর্সেনাল দলেও। গানারদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৫৪ ম্যাচে ৪৪ গোল করা ওজিল উনাই এমেরি কোচ থাকতেই আর্সেনালের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন কোচের অধীনে ফিরেছিলেন দলে। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্থগিত খেলা আবার শুরুর পর থেকে আর্সেনাল দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন ওজিল। এর পেছনে চীনের উইঘুর মুসলমানদের নিয়ে করা তাঁর মন্তব্যের ভূমিকা আছে বলেই মনে করেন ওজিলের ঘনিষ্ঠরা। আজ টুইটে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে সবাইকে পবিত্র কোরানের একটি আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘কেউ কাউকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’
আর্সেনাল দলে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক কথা বলেছেন জার্মানির সাবেক মিডফিল্ডার। ৩২ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের কণ্ঠে ছিল অভিমান। আর্সেনালের সমর্থকদের উদ্দেশ করে একটি টুইট করেছিলেন তিনি। যেখানে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া নিয়ে নিজের অবস্থানটা জানান। আর্সেনাল তাঁকে ব্রাত্য করে দিলেও মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হবে না বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর বলেছিলেন ঠিকঠাকভাবে অনুশীলন করে যাবেন এবং দলে আবার সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন।
সেই ঘটনার পর ওজিল আবার মুখ খুলেছেন ফ্রান্সের ঘটনা নিয়ে। ফ্রান্সের ঘটনা নিয়ে এর আগেই কথা বলেছেন পল পগবা। সব সময়ই নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা ফরাসি প্লেমেকার পগবাকে অবশ্য বিষয়টিতে কথা বলতে হয়েছিল বাধ্য হয়েই। ওই ঘটনার পর হঠাৎই খবর ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্স জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পগবা। ফ্রান্সে চলমান অস্থিরতার মাঝে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর একটি মন্তব্যে সে দেশের মুসলমানদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ছড়িয়েছে। পগবা নিজেও পারিবারিকভাবে ইসলাম ধর্মে অনুসারী। ইসলাম ধর্মকে জড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের কথা বলাতেই নাকি প্রতিবাদ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ফ্রান্স দলের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা।
ইংল্যান্ডের পত্রিকা দ্য সান এ খবর প্রকাশ করার পর দাবানলের মতো সেটা ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গণমাধ্যমেও এই খবরটি প্রকাশ করা হয়। পগবা এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলেন। খবরটি একেবারেই মিথ্যা বলে উল্লেখ করে নিজের খুবই হতাশ হওয়ার কথা বলেছিলেন। সকল ধরনের জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরোধী পগবা এমন ভিত্তিহীন খবরে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।