ফেসবুক, টুইটার বন্ধ করেই হবে বর্ণবাদের প্রতিবাদ
পৃথিবীতে যতগুলো ফুটবল দল বা ক্লাব রয়েছে, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সমর্থকগোষ্ঠীও আছে। সবাই এক দল বা ক্লাব সমর্থন করেন না, এটা সম্ভবও নয়। ফলে নানা ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে ফুটবল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা, ঝগড়াঝাঁটির কমতি নেই। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, নিজের পছন্দের দল বা খেলোয়াড়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে অন্য দলের খেলোয়াড় বা সমর্থকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, ঘৃণা ছড়ানো হয়, লেপ্টে দেওয়া হয় বর্ণবাদের কালিমা। এর বেশির ভাগ হয় অনলাইনেই, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা ফুটবলের মতো দুর্দান্ত খেলার মর্যাদা ক্ষুণ্নই করে।
বছরের পর বছর ধরে এই বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করতে বিভিন্ন ফুটবল সংস্থা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সে পদক্ষেপগুলোর কোনোটাকেই শতভাগ সফল বলা যাবে না। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদের কথা জানানোর জন্য এখনো ম্যাচ শুরুর আগে হাঁটু গেড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন খেলোয়াড়েরা। তাতে কি কোনো লাভ হচ্ছে? হয়তো হচ্ছে, হয়তো হচ্ছে না। থিয়েরি অঁরির কথাই ধরুন। আর্সেনাল ও বার্সেলোনার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই ফরাসি স্ট্রাইকার ভাবেন, এসব পদক্ষেপে কোনো লাভ হচ্ছে না। অনলাইনে ঘৃণা ছড়াচ্ছেই, মানুষ মানুষের সঙ্গে বর্ণবাদী-বৈষম্যমূলক আচরণ করছেই, যার প্রতিবাদ হিসেবে তিনি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন। অঁরির দেখানো পথ ধরে এবার প্রতিবাদ জানাতে চায় ইংলিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ইংলিশ ফুটবল। ইংল্যান্ডের যতগুলো ফুটবল সংস্থা আছে, সবাই এককাট্টা হয়েছে এই লক্ষ্যে। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার লিগ, ইএফএল, এফএ উইমেনস সুপার লিগ, এফএ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ, প্রফেশনাল ফুটবলারস অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ), লিগ ম্যানেজার্স অ্যাসোসিয়েশান (এলএমএ), ফুটবল সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফএসএ), অর্থাৎ ইংল্যান্ডে ফুটবলবিষয়ক যতগুলো প্রধান সংস্থা আছে, সব কটিই অনলাইনে ছড়ানো ঘৃণা, বৈষম্য ও বিদ্বেষ আটকানোর জন্য হাতে হাত মিলিয়েছে। অনলাইনে ঘৃণা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষজনকে শিক্ষিত করার ভূমিকা যে কতটা বেশি, এই প্রতিবাদের মাধ্যমে সেটাই আরও ভালো করে সবার কাছে ফুটে উঠবে বলে আশা করছে সংস্থাগুলো।
কিন্তু প্রতিবাদটা কেমন হবে? এপ্রিলের ৩০ তারিখ থেকে শুরু করে মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে আরও কড়াকড়িভাবে অনলাইন নিরাপত্তা বিল প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই কয়দিনে ইংল্যান্ডে ছেলে ও মেয়েদের খেলা যখনই হবে, তখন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফেসবুকে, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক পরিচালক এডলিন জন বলেছেন, ‘ইংলিশ ফুটবল আর সমাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে এমন বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণের শিকার হচ্ছেন, অনলাইন বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করছে, তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন চাই আমরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক সব প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ব্যাপারে নজর দিন। আমরা এই ব্যাপারে কথা বলা থামাব না, প্রতিবাদ করা থামাব না।’
প্রিমিয়ার লিগের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্স বলেছেন, ‘বর্ণবাদী আচরণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। খেলোয়াড়েরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন ঘৃণার শিকার হন, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ও সব ক্লাব তাই এই প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন এই ঘৃণা ছড়ানো রোধে ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ফুটবল খেলাটা সবার জন্য। খেলাটা বিশ্বের সব গোষ্ঠী ও সংস্কৃতিকে একত্র করে, যারা একেকজন একেক জায়গা থেকে আসে। আর এই বৈচিত্র্যই খেলাটাকে আরও অভিনব করে তুলেছে, আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করেছে। এখানে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।’
যুক্তরাজ্য সরকারের এখন টনক নড়লে হয়।