ফুটবলে বাংলাদেশের যত বড় জয়
কাল ভুটানকে ৪-১ গোলে হারিয়েই সবাই একটা তথ্য নিয়ে ভাবতে বসেছিলেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে শেষ কবে বাংলাদেশ তিন বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে কোনো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে। এই ভাবনার নেপথ্যে আছে বাস্তব কারণ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে একটা জয়ই যেখানে দুর্লভ বিষয়ে পরিণত, সেখানে জয়ের ব্যবধান নিয়ে ভাববার সময় কোথায়। ফুটবল পেছাতে পেছাতে এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে যেকোনো ব্যবধানে একটা জয় পেলেই ফুটবলপ্রেমীরা আনন্দে ভেসে যান। সে কারণেই কাল ভুটানের বিপক্ষে বড় জয়টা বাড়তি ভাবনার খোরাক নিয়ে এল। পরিসংখ্যান ঘেঁটে যা পাওয়া গেল, তাতে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে জয় তেমন একটা নেই।
তবে অতীতের পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। একটা সময় ছিল যখন নেপাল, ভুটানের মতো প্রতিপক্ষ নিয়মিতই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে জয় আছে দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও। সাফ অঞ্চলের বাইরের প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও বাংলাদেশ বেশ কয়েকবারই তিন বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে। গতকাল ভুটানের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা উঠেছে, শেষ কবে বাংলাদেশ তিন বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে কোনো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে।
রেকর্ডে চোখ বুলিয়ে দেশের ফুটবলের বড় জয়গুলো ফুটবলপ্রেমীদের নস্টালজিক করে তুলতেই পারে...
৩-০, ভুটান কেরালা, ২০১৫
গতকাল ভুটানকে ৪-১ গোলে হারানোর আগে এটাই বাংলাদেশের সবশেষ বড় জয়। কেরালা সাফে প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের কাছে হারার পর ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সান্ত্বনা খুঁজেছিল দল।
৪-০, নর্দার্ন মারিয়ানা, কাঠমান্ডু, ২০১৩
এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ খেলেছিল দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস খুঁজে নিয়েছিল লোডভিক ডি ক্রুইফের দল। শেষ ম্যাচে নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতে চূড়ান্তপর্বে খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ।
৩-০, পাকিস্তান, ঢাকা, ২০১১
বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাইপর্বের ম্যাচ। বৃষ্টিস্নাত সেই সন্ধ্যায় পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। ৩-০ গোলের সেই জয় বাংলাদেশকে বাছাইপর্বের পরের রাউন্ডের পথে অনেকটা দূর এগিয়ে দিয়েছিল। খেলার ধারা অনুযায়ী সে ম্যাচে বাংলাদেশ যদি আরও বড় ব্যবধানে জিতত, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকত না।
৪-১, ভুটান, ঢাকা, ২০০৯
সেবারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শেষবারের মতো সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল দল। ৪-১ গোলের বড় জয় দিয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে কোচ শহীদুর রহমান শান্টুর বাংলাদেশ।
৩-০, ম্যাকাও, ঢাকা, ২০০৯
এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল সেটি। প্রথম ম্যাচে মিয়ানমারের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও হারতে হয় ২-১ গোলে। ম্যাকাওয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয় দরকার ছিল। দল শেষ পর্যন্ত জেতে ৩-০ গোলে।
৩-০, গুয়াম, ঢাকা, ২০০৬
এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের প্রথম ম্যাচ আসর ছিল সেটি। প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে উড়ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে গুয়ামের বিপক্ষে আরও বড় জয় প্রত্যাশিত ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইন ছিল ৩-০। শেষ ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
৩-০, ভুটান, করাচি, ২০০৫
পাকিস্তানের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। প্রথম ম্যাচেই ভুটানকে ৩-০ গোলে উড়িয়েছিল ডিয়েগো ক্রুসিয়ানির বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমির পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল দল। শেষ ম্যাচে ভারতের সঙ্গে ম্যাচটি ড্র হয় ১-১ গোলে।
৩-০, মঙ্গোলিয়া, দাম্মাম, ২০০১
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সেবার বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল সৌদি আরব, ভিয়েতনাম ও মঙ্গোলিয়া। দুই লেগের খেলাই হয়েছিল সৌদি আরবে। প্রথম লেগে মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করলেও দ্বিতীয় লেগে বাংলাদেশ জয় পায় ৩-০ গোলে।
৪-০, পাকিস্তান, মারগাঁও, ১৯৯৯
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল ইরাকি কোচ সামির শাকিরের বাংলাদেশ। পাকিস্তান সে ম্যাচে দাঁড়াতেই পারেনি। ৪-০ গোলের সে জয়টি আন্তর্জাতিক ফুটবলে গত ২০ বছরে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
৩-০, শ্রীলঙ্কা, দুবাই, ১৯৯৩
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জাপান আর আরব আমিরাতের গ্রুপে পড়াটা খুব সুখকর বিষয় নয়। এই দুই দলের বাইরে বাংলাদেশ সেবার একই গ্রুপে খেলেছিল থাইল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুই লেগের খেলা অনুষ্ঠিত হয় জাপানে আর আমিরাতে। জাপানের টোকিওতে প্রথম লেগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে দুবাইয়ে দ্বিতীয় লেগে জয় তুলে নেয় ৩-০ গোলের ব্যবধানে।
৩-০, শ্রীলঙ্কা, ইসলামাবাদ, ১৯৮৯
ইসলামাবাদের চতুর্থ সাফ গেমসের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। ৩-০ গোলে জিতে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ রাখে বাংলাদেশ। সেবার বাংলাদেশের কোচ ছিলেন ইরানের নাসের হেজাজি। অধিনায়ক ছিলেন ইলিয়াস হোসেন।
৩-০, ভুটান, কলকাতা, ১৯৮৭
কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাফ গেমসে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। নেপাল ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে ব্রোঞ্জটাও জেতা হয়নি সেবার। তবে কলকাতা গেমসের একমাত্র সান্ত্বনা ছিল ভুটানের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়। কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয়।
৩-০, পাকিস্তান, করাচি, ১৯৮৫
কায়েদে আজম ট্রফি ছিল এক সময় পাকিস্তানের মাটিতে নিয়মিত আয়োজিত আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ ১৯৮৫ সালে এই টুর্নামেন্টে মূল জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ছাড়াই খেলতে গিয়েছিল। তরুণদের নিয়ে গড়া দ্বিতীয় সারির দলই পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ৩-০ গোলে।
৮-০, মালদ্বীপ, ঢাকা, ১৯৮৫
দেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টি এসেছিল ডিসেম্বরের সেই হিমেল সন্ধ্যায়। ঢাকা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সাফ গেমসের সে ম্যাচে মালদ্বীপকে ৮ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মালদ্বীপকেই এরপর আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
৫-০, মালদ্বীপ কাঠমান্ডু, ১৯৮৪
প্রথম সাফ গেমসের প্রথম ম্যাচেই মালদ্বীপকে ৫-০ গোল হারায় বাংলাদেশ। সেবার সাফ গেমসের ফুটবল অংশ নিয়েছিল কেবল চারটি দেশ বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে ছিল না আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কারণ, তখনো পর্যন্ত ফিফার সদস্য হতে পারেনি ভুটান।
৫-০, নেপাল, কাঠমান্ডু, ১৯৮৪
প্রথম সাফ গেমসে গ্রুপপর্বে নেপালকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম সাফ গেমসেও জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন তারকাকে ছাড়াই খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
৫-০, মালদ্বীপ, কাঠমান্ডু, ১৯৮৪
প্রথম সাফ গেমস ফুটবলে গ্রুপ পর্বে নেপাল ও মালদ্বীপের সঙ্গে দুইবার করে খেলেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেও মালদ্বীপ হেরেছিল ৫-০ গোলে।
৫-০, নেপাল, কাঠমান্ডু, ১৯৮৪
ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর ড্রেস রিহার্সাল ছিল বাংলাদেশ ও নেপালের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি। এটাতেও বাংলাদেশ জেতে ৫-০ গোলে। তবে দুঃখের বিষয় ফাইনালে বাংলাদেশ এই নেপালের কাছেই হেরে যায় ৪-২ গোলে। ভুতুড়ে সে ফাইনালে অনেকটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে।
ফল | প্রতিপক্ষ | বছর | ম্যাচের ধরণ |
৪-১ | ভুটান | ২০১৯ | প্রীতি ম্যাচ |
৩-০ | ভুটান | ২০১৫ | সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ |
৪-০ | নর্দান মারিয়ানা | ২০১৩ | এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ |
৩-০ | পাকিস্তান | ২০১১ | বিশ্বকাপ বাছাই |
৪-১ | ভুটান | ২০০৯ | সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ |
৩-০ | ম্যাকাও | ২০০৯ | প্রীতি ম্যাচ |
৩-০ | গুয়াম | ২০০৬ | এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ |
৩-০ | ভুটান | ২০০৫ | সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ |
৩-০ | ভুটান | ২০০৩ | সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ |
৩-০ | মঙ্গোলিয়া | ২০০১ | বিশ্বকাপ বাছাই |
৪-০ | পাকিস্তান | ১৯৯৯ | সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ |
৩-০ | শ্রীলঙ্কা | ১৯৯৩ | বিশ্বকাপ বাছাই |
৩-০ | শ্রীলঙ্কা | ১৯৮৯ | সাফ গেমস |
৩-০ | ভুটান | ১৯৮৭ | সাফ গেমস |
৮-০ | মালদ্বীপ | ১৯৮৫ | সাফ গেমস |
৩-০ | পাকিস্তান | ১৯৮৫ | কায়েদ-ই-আজম |
৫-০ | মালদ্বীপ | ১৯৮৪ | সাফ গেমস |
৫-০ | নেপাল | ১৯৮৪ | সাফ গেমস |
৫-০ | নেপাল | ১৯৮৪ | সাফ গেমস |
৫-০ | মালদ্বীপ | ১৯৮৪ | সাফ গেমস |