প্রযুক্তির কাটাছেঁড়া : আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ
>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র অষ্টম পর্বে থাকছে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ
স্নায়ুক্ষয়ী! অবিশ্বাস্য! আর কী কী বিশেষণে বিশেষায়িত করবেন আপনি কালকের ম্যাচকে? বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে যেতে হলে জয় ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ছিল না আর্জেন্টিনার সামনে। ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচটি আর্জেন্টিনার দিকে টেনে নিয়ে এলেন একজন ডিফেন্ডার! মার্কোস রোহোর সেই গোলে একরকম অগ্নিপরীক্ষায় সফল হলো মেসি বাহিনী। কিন্তু কেমন খেলেছে আর্জেন্টিনা? আসুন, পুরো ম্যাচের বিভিন্ন দিক প্রযুক্তির চোখ দিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রথম দুই ম্যাচে ‘অ-মেসিসুলভ’ ছিলেন মেসি। এ জন্য সমালোচনাও কম হয়নি। মেসি অধিনায়কের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না, প্রয়োজনের সময় জাতীয় দলের হয়ে জ্বলে উঠতে পারেন না, পাহাড়সম চাপে ভেঙে পড়েন—এমন কত কথা! সব সমালোচনার জবাব তিনি দারুণভাবেই দিলেন এই ম্যাচে—নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই। রক্ষণ, আক্রমণ, মাঝমাঠ—কোথায় ছিলেন না মেসি? ছিলেন সর্বত্রই। এমনকি নাইজেরিয়া দল যাতে ভালোভাবে খেলতে না পারে, এ জন্য তিনি নিজেই ওপরে থেকে প্রেস করেছেন, ট্যাকল করেছেন অনবরত! এমন উদ্যমী মেসিকেই তো খুঁজছিল এই বিশ্বকাপ! হিটম্যাপ দিয়েই দেখে নিন গত রাতের ম্যাচে মেসি কেমন ছিলেন!
পুরো ম্যাচে গোল বরাবর পাঁচটা শট নিয়েছেন মেসি, যার মধ্যে গোল হয়েছে একটি। গোল সহায়তা করার জন্য ‘কি পাস’ দিয়েছেন দুটি। মেসির মতো একজন স্ট্রাইকার, যাঁর মূল কাজ খেলা গড়ে দেওয়া আর গোল করা, তাঁর সফল ট্যাকলের হার শতভাগ! হামেলস, পিকে, রামোসের মতো দুঁদে ডিফেন্ডাররাও লজ্জা পেয়ে যাবেন এই পরিসংখ্যান দেখলে! পুরো মাঠে জান বাজি রেখে লড়েছেন মেসি। যেমনটা সবাই চেয়েছিলেন।
এবার দেখে নিন মেসির গোলটা—
কাল দুর্দান্ত খেলেছেন মিডফিল্ডার এভার বানেগা। সব সময় সাধারণ মানের পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচিত বানেগা কাল নিজেকে চিনিয়েছেন। মেসির প্রথম গোলে তাঁর সহায়তার কথা কীভাবে ভুলবেন আপনি? মাঝমাঠ থেকে অমন নিখুঁত পাস দিতে বানেগাকে এর আগে কবে দেখেছেন? দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তেই বানেগা দেখালেন নিজের ঝলক। শতকরা ৮৮ ভাগ সফল পাস দেওয়া বানেগার পা থেকেই দলের আক্রমণের সূচনা হয়েছে।
দেখে নিন তাঁর পরিসংখ্যান -
হাভিয়ের মাচেরানোর কথা ভুললে চলবে কেন? তাঁর খেলায় বয়সের ছাপ এখন স্পষ্ট। তবে এই বয়সেও দলের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন অসাধারণ। বেশ কিছু ভুল করেছেন তিনি কাল। ভুল পাস দিয়ে দলের বিপদ ডেকে এনেছিলেন, কিন্তু সেটিকে পুষিয়ে দেওয়ার জন্য বহুবার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বিপজ্জনক আক্রমণের রাশ টেনে ধরেছেন।
দেখে নিন তাঁর হিটম্যাপ -
কোনোমতে প্রথম রাউন্ডের বাধা পর হয়েছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে অপেক্ষা করছে বিশাল পরীক্ষা, ফ্রান্সের সঙ্গে দেখা হচ্ছে তাদের। মেসি-বানেগা-পাভোনদের জাদুই এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার বড় ভরসা!