কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
পোল্যান্ড দলটাকে ‘রবার্ট লেভানডফস্কি ও বাকি ১০ জন’ বলা হলে খুব বেশি ভুল বলা হবে না। পোল্যান্ড ইউরোতে কতটুকু এগোতে পারবে, সেটা নির্ভর করবে গত মৌসুমে ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের ওপরই। যদিও ‘লেভা’ থাকলেই নিশ্চিত সাফল্যের গ্যারান্টি থাকছে না। গত বিশ্বকাপে লেভাকে নিয়েও তো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল পোলিশরা। এবার ইউরোতে কত দূর যাবে?
দল: পোল্যান্ড
ফিফা র্যাঙ্কিং: ২১
দলে আছেন যাঁরা
গোলরক্ষক
ভয়চেখ সেজনি (জুভেন্টাস), লুকাশ ফাবিয়ানস্কি (ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড), লুকাশ স্কোরুপস্কি (বোলোনিয়া)
সেন্টারব্যাক
ইয়ান বেদনারেক (সাউদাম্পটন), কামিল গ্লিক (বেনেভেন্তো), পাভেল দাভিদোভিশ (হেল্লাস ভেরোনা), মিশাল হেলিক (বার্নসলি), কামিল পিয়াতকোস্কি (রাকু চেস্তচোও)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
বার্তোশ বেরেজিনস্কি (সাম্পদোরিয়া), টমাশ কেজিওরা (দিনামো কিয়েভ)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
মাসিয়েজ রাইবাস (লোকোমোতিচ মস্কো), তিমোতিউশ পুচাশ (লেচ পোজনান)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
গ্রেগর্জ ক্রিচোভিয়াক (লোকোমোতিভ মস্কো), ক্যারল লিনেত্তি (তোরিনো), ইয়াকুব মোদার (ব্রাইটন)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
পিওতর জিলিনস্কি (নাপোলি), মাতেউশ ক্লিখ (লিডস ইউনাইটেড), কাসপের কোজলোস্কি (পোগোন সেজেচিন)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
সেমেজওয়াভ ফ্রাঙ্কোস্কি (শিকাগো ফায়ার), কামিল জোজউইয়াক (ডার্বি কাউন্টি), সেমেজওয়াভ প্লাচেতা (নরউইচ সিটি)
স্ট্রাইকার
রবার্ট লেভানডফস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ), আরকাদিউশ মিলিক (অলিম্পিক মার্শেই), দাভিদ কোওনাচকি (ফরচুনা ডুসেলডর্ফ), ক্যারল সুইদেরস্কি (পিএওকে), ইয়াকুব সুইয়েরজোক (পিয়াস্ত গ্লিভাইজ)
কোচ
পাওলো সোসা
অধিনায়ক
রবার্ট লেভানডফস্কি
ইউরোতে সেরা সাফল্য
কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৬)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
স্লোভাকিয়া (১৪ জুন)
স্পেন (১৯ জুন)
সুইডেন (২৩ জুন)
শক্তি
তর্ক সাপেক্ষে সময়ের সেরা স্ট্রাইকারই পোল্যান্ডের। নিঃসন্দেহে দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা অধিনায়ক রবার্ট লেভানডফস্কি। স্কোয়াডে একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের উপস্থিতিও কোচকে সাহস দেবে। দলের লক্ষ্য থাকবে যত বেশি সম্ভব মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে বল পাঠিয়ে লেভাকে গোল করার সুযোগ করে দেওয়া। সেটা যত ভালোভাবে করতে পারবে পোল্যান্ড, ইউরোতে ভালো করার সম্ভাবনাও তত বাড়বে।
দুর্বলতা
লেভা যেমন দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা, একইভাবে দলের অন্যতম চিন্তার ক্ষেত্রও বটে। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে এই পোলিশ স্ট্রাইকার যতটা ক্ষুরধার, জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে ঠিক ততটা নন। আর এটাই চিন্তায় ফেলতে পারে সোসাকে। আগের কোচের সঙ্গে লেভার সম্পর্ক ঠিক ভালো ছিল না, কোচের কৌশলের সমালোচনাও করেছেন, নতুন কোচ এসেই তাই দলের সবচেয়ে বড় রত্নটির সঙ্গে নিজের সম্পর্ক সুন্দর করায় মনোযোগ দিয়েছেন। পোল্যান্ড চাইবে সেই সুসম্পর্কের প্রভাব যেন মাঠের খেলাতেও পড়ে।
দলের অন্যতম চিন্তার জায়গা রক্ষণভাগ। সোসা আসার পর এ নিয়ে তিন ম্যাচে পাঁচ গোল খেয়েছে পোল্যান্ড, যার তিনটি হাঙ্গেরির মতো দলের বিপক্ষে। দলের রক্ষণকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আঁটসাঁট করে তোলার দায়িত্বও সোসার সামনে।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৩-৫-২)
পাওলো সোসা আসার পর নিজের কৌশল দেখানোর জন্য মাত্র তিনটি ম্যাচ পেয়েছেন। মূলত ৩-৪-১-২ ছকে খেলিয়েছেন দলকে। কিন্তু যখন বল নিজেদের পায়ে থাকে না, তখন ৪-৪-২ ছকে চলে যায় সোসার পোল্যান্ড। ছকের কাঠামো বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাইট সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা বার্তোশ বেরেজিনস্কি, লেফট উইংব্যাক মাসিয়েজ রাইবাস, আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার পিতর জিলিনস্কি ও রাইট উইংব্যাক কামিল জোজউইয়াকের।
বল যখন নিজেদের পায়ে থাকে, মূলত রাইটব্যাক হিসেবে খেলা বেরেজিনস্কি তিন সেন্টারব্যাকের ডান দিকের জায়গাটা নেন। তখন উইঙ্গার জোজউইয়াক হয়ে যান উইংব্যাক, সাইডলাইন ঘেঁষে দলের কাঠামোর প্রশস্ততা বজায় রাখতে হয় তাঁকে। ওদিকে এই ছকে লেফট উইংব্যাক রাইবাসকে আক্রমণের লাইসেন্স দিয়েছেন সোসা। রাইবাস ওপরে উঠে গেলে জিয়লিনস্কি ভেতরে ঢুকে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দুই স্ট্রাইকারের পেছনে ‘হাফস্পেস’গুলোতে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে গোলের সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
বেরেজিনস্কির পাশে আরও দুই সেন্টারব্যাক হিসেবে অভিজ্ঞ কামিল গ্লিক ও সাউদাম্পটনের বেদনারেকের খেলার সম্ভাবনা বেশি। মাঝমাঠে সাবেক পিএসজি তারকা ক্রিচোভিয়াক নেবেন আদর্শ রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকা, রক্ষণ সামলে মাঝমাঠের সঙ্গী লিডস তারকা মাতেউশ ক্লিখকে আক্রমণ করার সুযোগ করে দেন তিনি। মার্সেলো বিয়েলসার মতো কোচের অধীনে লিডসে আলো ছড়ানো ক্লিখ জাতীয় দলের জার্সিতে একই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে পোল্যান্ডের পোয়াবারো।
ওপরে রবার্ট লেভানডফস্কির পাশে আরেক স্ট্রাইকার হিসেবে ক্রিস্তফ পিওন্তেককে পোল্যান্ড পাচ্ছে না চোটের কারণে, সে জায়গায় খেলবেন নাপোলির সাবেক স্ট্রাইকার ও বর্তমানে মার্শেইর হয়ে খেলা আরকাদিউশ মিলিক।
এ তো গেল আক্রমণ, বল পায়ে না থাকার সময়গুলোতে পোল্যান্ড ৪-৪-২ ছকে চলে গেলে বেরেজিনস্কি হয়ে যান রাইটব্যাক। তখন জোজউইয়াকের ভূমিকা হয়ে যায় রাইট মিডফিল্ডারের। রাইবাস পেছনে চলে এসে তখন লেফট মিডফিল্ডারের জায়গা ছেড়ে দেন জিলিনস্কির জন্য।
আমি নিজের ওপর, আমার কোচিং দলের ওপর, আমাদের ফেডারেশন, আমার খেলোয়াড় ও তাঁদের সামর্থ্যের ওপর ভরসা রাখি। ম্যাচ জিততে হলে দলের খেলোয়াড়দের মান থাকতে হবে। পোলিশ খেলোয়াড়দের সেটা আছে।
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
গত ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার পর আরও যেন পিছিয়ে গেছে পোল্যান্ড। ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে। নতুন কোচের অধীনে নতুন কৌশলেও মানিয়ে নেওয়ার সময়ও তেমন পাননি লেভা-জিলিনস্কিরা। তবু তাঁদের প্রত্যাশা থাকবে অন্তত প্রথম রাউন্ডের বাধা পার হয়ে নকআউট পর্বে ওঠা। পোল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই দলের জন্য লক্ষ্যটা তেমন কঠিনও নয়।