পেয়েও হারানোর দুঃখ রিয়ালের
কাল চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্রতে অভাবনীয় কিছু দেখা গিয়েছিল। একবার ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সব দল তাদের প্রতিপক্ষের নাম জেনেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই খবর আছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে আগের ড্র বাতিল হচ্ছে, নতুন করে ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন করে ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ায় ১৪টি দলের ভাগ্য বদলেছে। এতে অনেক দল খুশি হয়েছে, আবার মন খারাপ হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, সালজবুর্গ ও স্পোর্তিং লিসবনের মতো দলগুলোর। চলুন দেখে নেওয়া যাক কাল দুবারের ড্রতে কোন কোন ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল। আর নতুন করে কোন ম্যাচে উত্তেজনা ছড়াল। পরের ড্র নিয়ে অধিকাংশ বড় দলের উচ্ছ্বাসের কারণটাও জেনে নেওয়া যাক।
গতকাল ঝামেলাটা হয়েছিল ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে কার খেলা হবে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে। ড্রতে ভিয়ারিয়ালের প্রতিপক্ষ হিসেবে নাম উঠে আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। অথচ ড্রয়ের নিয়ম হলো, একই গ্রুপ থেকে উঠে আসা দলগুলো শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হয় না। গ্রুপ পর্বে একই গ্রুপে ছিল ভিয়ারিয়াল ও ইউনাইটেড। তা হলে?
দেরি না করে ইউনাইটেডের নামটা ফেলে নতুন করে ড্র করা হয়। তাতে ম্যানচেস্টার সিটির নাম উঠে এলেও একটা কিন্তু থেকে যায়। ড্রতে যেহেতু ইউনাইটেডের নাম থাকার কথা নয়, সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কোনো প্রতিপক্ষের নাম কি বাদ পড়ে গেল? পরের বিতর্কেও ইউনাইটেড ছিল। আতলেতিকো মাদ্রিদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ইউনাইটেডের বদলে আতলেতিকোর একই গ্রুপ থেকে ওঠা লিভারপুলের নাম দেওয়া হয়েছিল। ড্র অনুষ্ঠান শেষ হতেই শুরু বিতর্ক। বায়ার্ন মিউনিখকে প্রতিপক্ষ পাওয়া আতলেতিকো উয়েফার কাছে জবাবদিহি চায়। নতুন করে ড্রয়ের দাবি তোলা হয়।
বেনফিকাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া রিয়াল নতুন করে ড্রয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই উয়েফা জানিয়ে দেয়, আবার নতুন করে ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
টুইটে উয়েফা জানায়, ‘বহিরাগত একটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা একটি সফটওয়্যার কর্মকর্তাদের কোন দলের আর কোন কোন দলের সঙ্গে খেলার সম্ভাবনা আছে, সেটা জানায়। সফটওয়্যারের কারিগরি ত্রুটির কারণে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্রতে একটা ভুল হয়েছে। এর ফলে এ ড্র বাতিল বলে গণ্য হলো এবং স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় (বাংলাদেশ সময় রাত আটটা) আবার নতুন করে ড্র অনুষ্ঠিত হবে।’
সেই ড্রতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের শেষ ষোলোর ম্যাচ নির্ধারিত হয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদ-পিএসজি
রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল বেনফিকা। পর্তুগিজ লিগের তিনে থাকা দলকে পেয়ে বেশ খুশি ছিল রিয়াল। কিন্তু পরবর্তী ড্রতে রিয়াল পেয়েছে ফ্রেঞ্চ লিগের শীর্ষ দলকে। পিএসজিতে আগ থেকেই নেইমার-এমবাপ্পে-দি মারিয়া-ভেরাত্তিরা ছিলেন। এ মৌসুমেই সে দলে মেসি-রামোস-ভাইনালদম-দোন্নারুম্মা যোগ দিয়েছেন। এ ড্রতে তাই রিয়াল যে অখুশি এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওদিকে ছন্নছাড়া ইউনাইটেডের বদলে ফর্মে ফেরা রিয়ালকে পাওয়াটাও পিএসজিকে স্বস্তি দিয়েছে।
ম্যানচেস্টার সিটি-স্পোর্তিং লিসবন
দুই ড্র শেষেই ম্যানচেস্টার সিটির কিছু আসে–যায়নি। দুর্দান্ত এক স্কোয়াড নিয়ে দারুণ ফর্মে থাকা দলটি প্রথমে ভিয়ারিয়ালকে পেয়েছিল। পরে তারা পেয়েছে স্পোর্তিংকে। এতে স্পোর্তিংয়ের একটু মন খারাপ হতে পারে। কারণ, প্রথমে প্রতিপক্ষকে হিসেবে জুভেন্টাসকে পেয়েছিল তারা। রোনালদোকে হারানো জুভেন্টাসের তুলনায় ম্যানচেস্টার সিটি যে অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ।
আয়াক্স-বেনফিকা
এই ড্রতে লাভ হয়েছে দুই দলের। আয়াক্স প্রথমে পেয়েছিলে ইন্টার মিলানকে। সিরি আ’র শীর্ষ দলের বদলে তারা পেয়েছে পর্তুগিজ লিগের তৃতীয় দল বেনফিকাকে। ওদিকে বেনফিকাও খুশি। রিয়াল মাদ্রিদের সামনে তো পড়তে হলো না তাদের!
বায়ার্ন মিউনিখ-রেড বুল সালজবুর্গ
বায়ার্নের সাবেক মিডফিল্ডার ডিডি হামান তিন দিন আগেই বলেছিলেন, তাঁর কাছে আতলেতিকো মাদ্রিদ বা চেলসিকে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে হয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে নকআউট পর্বে সবশেষ দেখায় জিতেছিল স্প্যানিশরাই। কাল প্রথম ড্রতে আতলেতিকোকে পেয়েছিল বায়ার্ন। পরে সে জায়গা নিয়েছে অস্ট্রিয়ান ক্লাব সালজবুর্গ। তাই পরের ড্রতে সন্তুষ্ট বায়ার্ন। ওদিকে আতলেতিকো পেয়েছে ইউনাইটেডকে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা থাকা বায়ার্নের তুলনায় নিজেদের হারিয়ে খোঁজা ইউনাইটেডকে সহজ প্রতিপক্ষ মনে হতেই পারে আতলেতিকোর। ওদিকে সালজবুর্গের এদিক থেকে কোনো লাভ বা ক্ষতি হয়নি। লিভারপুলের বদলে বায়ার্নকে পেয়েছে তারা।
লিভারপুল-ইন্টার মিলান
দ্বিতীয় ড্র লিভারপুলের সমস্যা একটু হলেও বাড়িয়েছে। সালজবুর্গের বদলে তারা পেয়েছে ইন্টার মিলানকে। মৌসুমের শুরুতে রোমেলু লুকাকু ও কোচ আন্তোনিও কন্তেকে হারিয়েছে ইন্টার। তবু সে ধাক্কা কাটিয়ে সিরি ‘আ’তে শীর্ষে উঠে এসেছে দলটি। ওদিকে ইন্টার মিলানের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল আয়াক্স। দুর্দান্ত ফর্মে আছে আয়াক্স। তবু লিভারপুলের চেয়ে আয়াক্সকে পেলেই খুশি হতো দলটি।
জুভেন্টাস-ভিয়ারিয়াল
একেবারে অদলবদল যাকে বলে। জুভেন্টাস পেয়েছিল স্পোর্তিংকে, ম্যানচেস্টার সিটি পেয়েছিল ভিয়ারিয়ালকে। স্পোর্তিং এখন সিটির প্রতিপক্ষ। আর জুভেন্টাসের প্রতিপক্ষ এখন ভিয়ারিয়াল। এতে ভিয়ারিয়ালের লাভ হলেও জুভেন্টাসের জন্য দ্বিতীয় ড্র একটু হলেও অস্বস্তি বাড়িয়েছে। লিগে যত বাজে অবস্থাতেই থাকুক, ইউরোপে উনাই এমেরি ও তাঁর দল বরাবরই কঠিন প্রতিপক্ষ।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-আতলেতিকো মাদ্রিদ
এ ড্রতে ইউনাইটেড নিশ্চিতভাবেই খুশি হয়েছে। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পের পিএসজির বদলে আতলেতিকো যে অনেকটাই সহজ প্রতিপক্ষ। আর দলে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যিনি আতলেতিকোর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুটি হ্যাটট্রিক করেছেন। আতলেতিকোও বায়ার্নের বদলে ইউনাইটেডকে পেয়ে খুশি।
লিল-চেলসি
একমাত্র ড্র যাতে কোনো অদলবদল হয়নি। দুই ড্রতেই দুদল একই প্রতিপক্ষ পেয়েছে।