পেলের পাশে বসেও নির্বিকার ছেত্রী
মাত্র তিনটি ছোঁয়ায় বল চলে গেল জালে। পেছন থেকে ব্র্যান্ডনের লম্বা বল এল নেপালের বক্সের একটু সামনে। তারপর ফারুখের মাথা হয়ে সুনীল ছেত্রী। বল বাতাসে রেখেই বাঁ পায়ের দুরন্ত ভলিতে ভারতের বুকের ওপর চেপে বসা পাথর সরিয়ে দিলেন ৩৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। বেঁচে রইল ভারতের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার আশা।
অন্য কোনো খেলোয়াড় হলে উদ্যাপনের ভঙ্গিটা হতো বাঁধভাঙা। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে গতকাল রাতে জয়সূচক গোল করেও সুনীল ছেত্রী ছিলেন অনেকটাই নির্বিকার। ৮২ মিনিটে গোল করে শুধু হাতটা তুললেন ওপরের দিকে। একটা গোলই তো, এ আর এমন কী ভাব করলেন। কিন্তু মালে জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা দল তখন আনন্দে আত্মহারা।
ম্যাচ শেষে ভারতীয় দল স্টেডিয়াম থেকে যখন বেরোল, মালের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা পেরিয়েছে। বাসের জন্য অপেক্ষারত ভারতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার নিরঞ্জন দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনীল বরাবর এমনই। গোল করে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না। নীরবেই করে যায় নিজের কাজটা।’
নীরবে আরেকটি গোল করে ছেত্রী ভারতকে ফাইনালের রাস্তাতেই শুধু নিয়ে গেলেন না, তাঁর এই গোল একটা মাইলফলকও। এই গোল এমন একজনের পাশে তাঁকে বসাল, যিনি বিশ্ব ফুটবলে অনেকের মতে সর্বকালের সেরা—পেলে। হ্যাঁ, ফুটবলসম্রাট পেলের পাশে বসলেন ছেত্রী। দুজনেরই জাতীয় দলের হয়ে গোলসংখ্যা এখন ৭৭।
কত বড় কীর্তি গড়লেন ছেত্রী, তা শুধু ইতিহাসই বলবে। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে তিনি নিজেকে নিয়ে গেলেন কিংবদন্তি পর্যায়ে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে দুই কোচই প্রশংসায় ভাসান ছেত্রীকে। নেপালের কুয়েতি কোচ আবদুল্লাহ আল মুত্তারি বলেন, ‘ওকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সে তার নিজের কীর্তিতেই নিজেকে পরিচিত করছে। সে অনন্য এক খেলোয়াড়। ছেত্রীকে নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তার গোলের সংখ্যাই তার হয়ে কথা বলছে।’
ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচের কথা, ‘আমরা সবাই ওর এই অর্জনে খুশি। সে এখনো অনেক পরিশ্রম করে এবং তারই ফল পেয়েছে।’ ছেত্রীই নেপালের বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভারতের একমাত্র গোলটি তাঁর। টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচে ভারতের ২ গোলই ছেত্রীর। এমন খেলোয়াড় থাকলে যেকোনো কোচই খুশি থাকবেন। ইগর স্টিমাচও ম্যাচের পর প্রকাশ করলেন উচ্ছ্বাস, ‘এমন নয় যে ছেত্রী শুধু নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেই পার্থক্য গড়েছে; এর আগেও সে ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে দারুণ এক খেলোয়াড়!’