নির্ধারিত সময় শেষ হতে তখন মিনিট দুয়েক বাকি। করেতিঁ জ্যাঁর গোলে লাঁস যখন সমতা ফেরাল, পার্ক দে প্রিন্সেসে পিএসজি সমর্থকেরা হঠাৎই কেমন চুপ হয়ে গেলেন! সের্হিও রামোস-কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সঙ্গে সঙ্গেই দেখাল ক্যামেরায়। দুজনেরই মুখ অন্ধকার।
তবে পিএসজি গোল খেয়ে সমর্থকদের সেই নীরবতা আর রামোস-এমবাপ্পেদের মন খারাপ ভাবটা বেশিক্ষণ থাকল না। এ ম্যাচে আসলে জয় তাদের খুব একটা দরকারও ছিল না। ড্র করলেই লিগ আঁ-র ট্রফি আবার ঘরে ফিরবে, এমন সমীকরণ নিয়েই আজ লাঁসের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল পিএসজি। সমর্থকেরাও এসেছিলেন উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েই।
৬৮ মিনিটে লিওনেল মেসির এক দুর্দান্ত গোলের পর মনে হচ্ছিল, জয় দিয়েই শিরোপা-উৎসবটা রাঙাবে পিএসজি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতা হয়নি মেসি-নেইমারদের, লাঁসের সঙ্গে ১-১ ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তবে তাতেই ঘরে ফিরেছে গত মৌসুমে লিলের কাছে হারিয়ে ফেলা লিগ আঁ-র ট্রফিটা। শেষ বাঁশির পর তাই সঙ্গে সঙ্গেই স্টেডিয়ামে আলোর ঝর্ণা ছুটল, বাজির রোশনাইয়ে ছেয়ে গেল আকাশ।
এ নিয়ে দশমবার ফরাসি লিগের চ্যাম্পিয়ন হলো পিএসজি। সবচেয়ে বেশিবার ফ্রান্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডে এখন সেঁত এতিয়েনের সঙ্গে পিএসজিও অংশীদার। পিএসজির এই দশটা ট্রফির আটটাই এসেছে কাতারের ধনকুবের নাসের আল খেলাইফি ক্লাবটি কিনে নেওয়ার পর।
পিএসজির খেলোয়াড়েরা অবশ্য মাঠে খুব একটা হই-হুল্লোড় করলেন না। ম্যাচ শেষে একে অন্যকে হাসি মুখে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্রেফ। খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি পিএসজির কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর মধ্যেও। অথচ কোচিং ক্যারিয়ারে এই প্রথম লিগ শিরোপা জিতলেন আর্জেন্টাইন এই কোচ। গত বছর জানুয়ারিতে পিএসজির দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমে জিতেছিলেন শুধু ফরাসি কাপ ও ফরাসি সুপার কাপ।
তবে খেলোয়াড়দের মতো সমর্থকেরা উচ্ছ্বাসে লাগাম টেনে ধরেননি কোনো। কোরাস গাইতে গাইতে মাঠ ছেড়েছেন, তারপর প্যারিসের রাস্তা মুখরিত করে তুলেছেন বিজয়-উৎসবে।
ম্যাচটা আসলে জিততে পারত পিএসজি। কিন্তু আগের ৪ ম্যাচে ৭ গোল করা কিলিয়ান এমবাপ্পের ভাগ্যই বোধ হয় এদিন খারাপ ছিল। একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেছেন। পিএসজি সমর্থকদের সেই আক্ষেপ ঘুচাতেই যেন ৬৮ মিনিটে নেইমারের পাস থেকে ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে বাঁ পায়ের দারুণ শটে চোখ জুড়ানো এক গোল করলেন মেসি। লিগ আঁ-তে ২২ ম্যাচে এটি মেসির ৪ নম্বর গোল, এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০ ম্যাচে তাঁর গোল ৯টি।
ওই গোলটাই যখন দুই দলের ব্যবধান হয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছিল, ঠিক তখনই ৮৮ মিনিটে জ্যাঁ ফেরালেন সমতা। তাতে অবশ্য পিএসজির শিরোপা-উৎসব পেছায়নি। মন খারাপ করে মাঠ ছাড়তে হয়নি মেসিকেও। বার্সেলোনার হয়ে ১০টি লিগ জেতার পর পিএসজির হয়ে জিতলেন এই প্রথম। ক্লাব ক্যারিয়ারে এটি তাঁর ৩৬তম ট্রফি। ইউরোপের শীর্ষ লিগের খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি ট্রফি জেতার অভিজ্ঞতা নেই অন্য কারও!