পিএসজিতে থাকলে রিয়ালকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবেন এমবাপ্পে
পিএসজিতে থাকছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ইউরোপের ফুটবলে দলবদলের বাতাসে কান পাতলে এখন এটাই শোনা যাচ্ছে। এক বছর ধরে নানাভাবে ইঙ্গিত দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন, এটাই বুঝিয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে তাঁর কণ্ঠে ভিন্ন সুর শোনা গেছে। সে সুর এখন আরও জোর পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহের কলকাকলি বলছে, বহু নাটকের পর পিএসজিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমবাপ্পে।
এতে চার বছর ধরে রিয়াল মাদ্রিদের করা সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার দশা। কিলিয়ান এমবাপ্পে একদিন ক্লাবে যোগ দেবেন, সে আশাতেই যে বসে ছিলেন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ! এমবাপ্পের ক্লাবে যোগদান নিশ্চিত করতে ক্লাবের অর্থনৈতিক মডেলে পরিবর্তন এনেছেন। ক্লাবের প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়দের বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করেছেন। গত দুই মৌসুমে দলবদলের বাজারে প্রায় কোনো খরচ করেননি। এই অবস্থায় এমবাপ্পে ‘না’ বলে দেওয়া মানেই তো সব আয়োজন অযথা বলে প্রমাণিত হওয়া। পেরেজ সেটা মেনে নিতে রাজি নন। তাই এমবাপ্পে যদি পিএসজিতে থেকে যান, তাঁর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন পেরেজ!
শুনে হাস্যকর ঠেকতে পারে। একজন খেলোয়াড়ের মত বদলাতেই পারে। অন্য ক্লাবের এক খেলোয়াড় ক্লাবে না গেলে কীভাবে তাঁর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন পেরেজ? কিন্তু স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম কাদেনা সারের অনুষ্ঠান কারুসেল দেপোর্তিভোতে তেমন দাবিই করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়েছে, ‘রিয়াল মাদ্রিদের কাছে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছের ব্যক্তির স্বাক্ষরিত দলিল আছে। সেখানে একটি শর্ত আছে—যদি এমবাপ্পে রিয়ালে যোগ না দেন, তাহলে রিয়াল মাদ্রিদকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে!’
মজার ব্যাপার, ক্লাব সভাপতির নাম ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেই এমন খবরকে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ২০০০ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার অধিনায়ক লুইস ফিগোকে কিনেছিলেন পেরেজ। রিয়ালের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন পেরেজ। সে সময়কার সভাপতি লরেঞ্জো সাঞ্জ তিন বছরের মধ্যে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনে হারার সম্ভাবনা কেউ দেখছিলেন না।
কিন্তু পেরেজ রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের অহমকে কাজে লাগিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে বার্সেলোনার লুইস ফিগোকে নিয়ে যাবেন মাদ্রিদে। আর তিনি যদি নির্বাচিত হওয়ার পর সে প্রতিজ্ঞা রাখতে না পারেন, তবে রিয়ালের সে সময়কার ৮৩ হাজার ৯৬৭ সদস্যের সবার সদস্য ভাতা নিজ পকেট থেকে দেবেন! সে সময়ে যা প্রায় ৮৫ লাখ ডলার!
পেরেজের মতো ব্যবসায়ী এমন প্রতিজ্ঞা করার আগে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে নেন। বার্সেলোনাতেও তখন সভাপতি নির্বাচনের ডামাডোল। ফলে ফিগোর বেতন বাড়ানো বা চুক্তি নবায়নের কাজটা করার মতো দায়িত্বশীল কেউ ছিলেন না ওদিকে। পেরেজ শুধুই সভাপতিপ্রার্থী, রিয়ালের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িত নন। ফলে অন্য ক্লাবের খেলোয়াড়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করায় ফিফার আইন ভঙ্গের দায়ও তাঁর ওপর পড়ত না।
ফিগোর এজেন্ট জোসে ভেইগাকে তাই একটা টোপ দেন পেরেজ। সাবেক ফুটবলার পাওলো ফুত্রের মাধ্যমে ফিগোর এজেন্টের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন পেরেজ। শর্ত ছিল, পেরেজ যদি নির্বাচনে জয় পান, সে ক্ষেত্রে ফিগোর রিলিজ ক্লজ ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়ে ফিগোকে নিয়ে যাবেন এবং ক্লাবের সবচেয়ে বেতনভোগী খেলোয়াড় বানাবেন। আর যদি পেরেজ নির্বাচনে জিততে না পারেন, অর্থাৎ ফিগোকে ক্লাবে নিতে না পারেন, তাহলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৬ লাখ ডলার দেওয়া হবে।
কিন্তু যদি উল্টোটা হয়, পেরেজ নির্বাচনে জিতলেন, কিন্তু ফিগোর তখন রিয়ালে যাওয়ার ইচ্ছা আর হলো না? সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাবেন পেরেজ। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিতে হবে!
ভেইগা ভেবেছিলেন, পেরেজের পক্ষে নির্বাচনে জেতা অসম্ভব। তাই এমন এক শর্তে রাজি হয়েছিলেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সব অস্বীকার করেছিলেন ফিগো। কিন্তু খুব স্বল্প ব্যবধানে পেরেজ নির্বাচিত হতেই বিপদ টের পান ভেইগা। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রিয়ালের সভাপতি নির্বাচিত হন পেরেজ।
২২ জুলাই বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন হোয়ান গাসপার্ত। তাঁর দাবি, পেরেজের সঙ্গে করা চুক্তিটা যেন ভেঙে দেন, এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন ফিগো। ভেইগাও শেষ চেষ্টা করেছিলেন, পেরেজের কাছ থেকে পাওয়া অর্থও ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পেরেজের শর্ত তো আরও বড় অঙ্কের।
ফিগোকে বার্সেলোনায় ধরে রাখতে হলে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিতে হতো পেরেজকে। সে ক্ষেত্রে রিয়ালের সব সদস্যের মৌসুমের সব খরচ বহন করার খরচ দিয়ে আরও তিন গুণ অর্থ থাকত পেরেজের পকেটে। এবং এই অর্থটা যেত বার্সেলোনার কাছ থেকে! সদ্য নির্বাচিত সভাপতি এই কাজ করলে বার্সেলোনার কোনো সদস্যই তাঁকে ক্ষমা করতেন না।
২৪ জুলাই রিয়ালে যোগ দেন ফিগো।