পিএসজি-গুঞ্জনের মধ্যে কোচিং চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জিদানের
জিনেদিন জিদানকে পেতে চায় পিএসজি। দলকে তারকাপুঞ্জ করার কাজটা সেরে ফেলেছে কাতারি মালিকানাধীন ফ্রেঞ্চ ক্লাব। এখন তাদের দরকার তারকাবহুল এই স্কোয়াডকে সামলানোর মতো এক কোচ। যে কাজ গত এক দশকে সবচেয়ে ভালোভাবে করে দেখিয়েছেন দুজন। একজন পিএসজিতেই ছিলেন, কিন্তু তখনো অমন তারকাদ্যুতিসম্পন্ন স্কোয়াড পাননি। পরে রিয়াল মাদ্রিদের ডাক শুনে সেখানে গিয়ে ঠিকই চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিয়েছেন। কে আবার, কার্লো আনচেলত্তি! দ্বিতীয় মেয়াদে রিয়ালকে আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে প্রমাণ করেছেন, এই ট্রফির তাঁর প্রতি বাড়তি টান আছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ সাফল্যে আনচেলত্তিকেও টপকে গিয়েছিলেন জিদান। রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সের্হিও রামোস, গ্যারেথ বেলদের নিয়ে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা এক ক্লাবের জন্য জিদান তাই কাঙ্ক্ষিত এক নাম। এমন সময়ে জিদান যদি বলেন, কোচিং করানোর জন্য মুখিয়ে আছেন, সে কথা পিএসজির কাছে অমৃতসুধা বলেই ঠেকবে।
দেড় বছর পিএসজির দায়িত্বে থেকেও ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে পারেননি মরিসিও পচেত্তিনো। গতবার আধা মৌসুম পেয়েছিলেন, তাতে তবু সেমিফাইনালে উঠিয়েছিলেন পিএসজিকে। এবার পূর্ণ মৌসুমে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছেন পচেত্তিনো। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাঁকে পিএসজি ছাড়তে হয়েছে। সে জায়গায় জিদানকেই পছন্দ পিএসজির। কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে পিএসজি ফুটবলের বড় বড় নামকে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। লিওনেল মেসি, নেইমারদের সঙ্গে কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও যেভাবেই হোক ধরে রেখেছে। সে সঙ্গে জিদানকে কোচ হিসেবে পেলে এর চেয়ে বড় বার্তা আর হয় না।
এ উদ্দেশ্যে জিদানকে কোচ হতে রাজি করাতে স্বয়ং কাতারি প্রিন্স ফ্রান্সে এসে ফরাসি কিংবদন্তির সঙ্গে কথা বলে গেছেন। প্রাথমিকভাবে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন জিদান। গত কয়েক দিন আবার নতুন করে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে আরএমসিস্পোর্ত বলছে, সর্বশেষ প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন জিদান। এমবাপ্পেকে কোচিং করাতে চান, এ কথা আগে বহুবার জানালেও পিএসজির দেওয়া সুযোগটা নিতে চাইছেন না মার্শেইয়ের ঘরের ছেলে।
এমন অবস্থায় তেলেফুত ফ্রেঞ্চ জিদানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে কাল। সেখানেই ফরাসি কিংবদন্তির কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় দেওয়ার এক বছর পার হলেও কেন কোচিংয়ে ফিরছেন না, সে প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। কোচিংয়ে আগ্রহ আর আছে কি না—সে প্রশ্নও করা হয়েছিল তাঁকে। এমন প্রশ্নে হাসতে হাসতে সব সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছেন রিয়াল কিংবদন্তি, ‘আমার এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে, অন্তত কিছুটা তো দেওয়ার আছেই। আমি এ পথে আরও এগোতে চাই। চালিয়ে যেতে চাই। নিজের মধ্যে সেই তাগাদা এখনো পাই। এটাই আমার প্যাশন—ফুটবল।’
কোচিং থেকে দূরে থাকলেও যে খুব একটা অতৃপ্তি নেই, সেটাও জানিয়েছেন, ‘আমার বয়স প্রায় ৫০। আমার জীবন পরিপূর্ণ, আমি সুখী, এটাই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার, বিশ্বকাপ ফাইনাল, ঢুস-কাণ্ড, রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে করা গোল—অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন। রিয়ালকে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো নিয়ে যা বলেছেন, সেটায় একটু মনোযোগ দিতেই পারে পিএসজি, ‘আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। আমাদের দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় ছিল, একটা দল ছিল, যেটা আমাকে অনুসরণ করে। অনেক কিছুর দায়িত্ব আমার কাঁধে ছিল, কিন্তু আমার একটা দারুণ দল ছিল, যারা আমাকে সমর্থন দিত। ওদের ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। আমার এমন লোকজন দরকার, যাদের সঙ্গে কাজ করে আমি স্বস্তি পাই।’
ইঙ্গিতটা কি পিএসজিকেই দিলেন জিদান? শুধু ভালো খেলোয়াড় থাকলেই চলবে না, তাঁর কথা শুনবেন—এমন খেলোয়াড় পেলেই শুধু সেখানে যাবেন জিদান?