‘পাঁচ মিনিট পৃথিবীতে ছিলেন না’ এরিকসেন
ভয়, শঙ্কা, দুশ্চিন্তা আর যা যা নেতিবাচক কিছু ভাবা সম্ভব, সেদিন সব ঘিরে ধরেছিল দর্শকদের। জলজ্যান্ত একটা মানুষ, পায়ে বল, কোথায় মাঠ দাপিয়ে খেলবেন, তা না, মাঠে হুট করেই কাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেলেন!
সিমোন কায়েরের মতো উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন একজন ছিলেন বলে রক্ষা। দুই দলের মেডিকেল টিমকেও ধন্যবাদ দিতে হবে। মাঠে তাঁরা ত্বরিতগতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ‘সিপিআর’ না দিলে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনকে ফিরে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ।
শেষ পর্যন্ত সব সন্দেহ ও দুশ্চিন্তা দূর করে আবারও মাঠে ফেরার অপেক্ষায় এরিকসেন। বুকে ‘পেসমেকার’ বসেছে, সে কারণে ইতালিয়ান ফুটবলে আর খেলার সুযোগ পাননি। ছাড়তে হয়েছে ইন্টার মিলান। মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য ডেনিশ মিডফিল্ডারকে দলে টেনেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ব্রেন্টফোর্ড।
প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফেরার প্রহর গোনা এরিকসেন বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, গত ইউরোয় ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে অসুস্থতা থেকে প্রায় সবকিছুই মনে আছে তাঁর শুধু পাঁচটা মিনিট ছাড়া। হ্যাঁ, এরিকসেনের জীবন থেকে মুছে গেছে তখনকার পাঁচ মিনিটের স্মৃতি।
গত ১২ জুন ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এরিকসেন। ডেনমার্ক অধিনায়ক সিমোন কায়েরের সঙ্গে সতীর্থ খেলোয়াড় ও মেডিকেল স্টাফদের চেষ্টায় সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর বুকে বসানো হয় কার্ডিওভারটার ডিফিব্রিলেটর (আইসিডি) যন্ত্র।
সেই হার্ট অ্যাটাকের প্রায় সাত মাস পর আবারও মাঠে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। তবে ব্রেন্টফোর্ড তাঁকে কবে মাঠে নামাবে, তা এখনো জানা যায়নি।
এরিকসেন জানিয়েছেন, সেদিনের সেই ঘটনার প্রায় সবকিছুই তাঁর মনে আছে শুধু ওই পাঁচ মিনিট ছাড়া, যে পাঁচ মিনিট তিনি ‘পৃথিবীতে ছিলেন না’।
সাক্ষাৎকারে এরিকসেন বলেন, ‘পাঁচ মিনিট ছাড়া প্রায় সবকিছু আমার মনে আছে। থ্রো-টা মনে আছে, বল আমার হাঁটুতে লাগে। এরপর কী ঘটল, তা আর মনে নেই। চেতনা ফেরার পর দেখলাম, প্রচুর লোক ঘিরে আছে আমাকে, বুকে চাপ নিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করছে। কী ঘটছে, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, মেরুদণ্ড কিংবা পা ভেঙে গিয়েছে কি না! শরীর নাড়াচাড়া করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, আসলে কী ঘটেছে।’
২৯ বছর বয়সী তারকাকে মাঠ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থাকতে তিনি শুনতে পান, কেউ একজন বলছেন, ‘সে (এরিকসেন) কতক্ষণ অচেতন ছিল?’ উত্তরে অন্য একজন বলেন, ‘পাঁচ মিনিট।’
দুজনের এই কথোপকথন শুনে এরিকসেন প্রথম বুঝতে পারেন, পাঁচ মিনিটের জন্য তাঁর জ্ঞান ছিল না। তাঁর ভাষায়, ‘পৃথিবীতে ছিলাম না।’
তবে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মাঠে ফেরার অপেক্ষাকে এরিকসেন অলৌকিক বলেই মনে করেন। ব্রেন্টফোর্ডের ড্রেসিংরুমে জার্সি ও বুট পরে যখন অ্যাড্রেনালিনের চাপ অনুভব করবেন, তখন এই অলৌকিক বিষয় বাস্তবে রূপ নেবে বলে মনে করেন এরিকসেন এবং এখন তিনি সে সময়ের প্রতীক্ষায়ই আছেন।
মাঠে ফিরলেও এরিকসেন কি নিজের পুরোনো খেলাটা ফিরে পাবেন, এ প্রশ্ন এখন প্রায় সবার। ডেনিশ তারকা নিজে কিন্তু ইতিবাচক, ‘আমি কোনো ঝুঁকি দেখি না। বুকে আইসিডি (ইমপ্লান্টেবল কার্ডিওভার্টার-ডিফিব্রিলেটর) আছে। কিছু ঘটলে নিরাপদেই থাকব। তাই নিজের সেরা ফর্মে না ফেরার কোনো কারণ দেখি না। সত্যি বলতে, সেরে ওঠার প্রক্রিয়াটা তো দীর্ঘমেয়াদি, এখনো অনেক পথ বাকি। তাই সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি।’