পাঁচ বছর আগে ফুটবলই ছাড়তে চেয়েছিলেন লিভারপুলের ৭৩০ কোটির স্ট্রাইকার
ইতিহাস গড়েছেন দারউইন নুনিয়েজ। ২২ বছর বয়সী এ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে সাড়ে ৭ কোটি ইউরোর বিনিময়ে দলে টেনেছে লিভারপুলে, এক ভার্জিল ফন ডাইক ছাড়া এত বেশি টাকা দিয়ে কোনো খেলোয়াড় কেনেনি অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি। নুনিয়েজের পেছনে আপাতত বাংলাদেশের মুদ্রার হিসেবে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে লিভারপুলের। অথচ বেনফিকার হয়ে আলো ছড়ানো এ স্ট্রাইকার পাঁচ বছর আগেও ফুটবলার হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ের দোলাচলে ছিলেন!
উরুগুয়ের অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে খেলার সময় হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল নুনিয়েজের। সে চোট কাটিয়ে আদৌ ফুটবলার হতে পারেন কি না, অনেক সন্দেহের জন্ম নিয়েছিল নুনিয়েজের মনে। এতটাই যে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন।
উরুগুয়ের যুবদলের কোচ ফাবিয়ান কোইতোর অনুপ্রেরণায় আর সে সিদ্ধান্ত নেননি নুনিয়েজ। কোইতোকে লিভারপুল তাই একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে!
আর দশজন উঠতি উরুগুইয়ান ফুটবলারের মতো নুনিয়েজের পরিবারও বেশ দরিদ্র ছিল। কিন্তু নুনিয়েজের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি অর্থাভাব। ব্রাজিল-উরুগুয়ের সীমান্তবর্তী ছোট্ট শহর আর্তিগায় ভাই জুনিয়রের দেখাদেখি নুনিয়েজও ফুটবলার হওয়ার পাঠ নেন।
জুনিয়র বেশ প্রতিভাবান ছিলেন, উরুগুয়ের বিখ্যাত ক্লাব পেনিয়ারলের যুবদলের কোচ হোসে পারদোমোর নজরে পড়ে যান। আর্তিগা থেকে ৪০০ মাইল দূরে দেশের রাজধানী মন্টেভিডিওতে জুনিয়রকে নিয়ে যান পারদোমো। পেনিয়ারলের যুবদলে জুনিয়রকে ভর্তি করিয়েই নজর দেন ছোট ভাই নুনিয়েজের দিকে। এক সন্তানকে ফুটবলার বানানোর জন্য কয়েক শ মাইল দূরের এক শহরে পাঠিয়েছেন, কিন্তু ছোট ছেলেকেও একইভাবে দূরে সরিয়ে দিতে চাননি নুনিয়েজের মা সিলভিয়া। কিন্তু শেষমেশ পারদোমোর আগ্রহের কাছে পেরে ওঠেননি।
পরিবারের টান উপেক্ষা করে পেনিয়ারলের হয়ে প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করেছেন কি করেননি নুনিয়েজ, এমন সময়ে বাদ সাধল হাঁটু। পেনিয়ারলের যুবদলের হয়ে খেলতে গিয়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে ফেলেন এ স্ট্রাইকার।
চোটের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল, ভবিষ্যতে আদৌ ফুটবলার হবেন কি না, সেটি নিয়েই সংশয় দেখা দেয়। যে চোট ছয় মাসে সারার কথা, সে চোট সারতে সময় লাগে আঠারো মাস। তত দিনে বড় ভাই জুনিয়র ফুটবল বাদ দিয়ে পুলিশ হওয়ার জন্য চেষ্টা করা শুরু করেছেন। বড় ভাইয়ের পথ ধরে ফুটবল ছেড়ে দেবেন কি না, সেই চিন্তাই ছিল নুনিয়েজের মনে। তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন কোইতো।
ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোইতোর অবদান নিয়ে বলতে গিয়ে পারদোমো বলেন, ‘চোটের কথাটা নুনিয়েজের মাথা থেকে বেরই করা যাচ্ছিল না। মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিল সে। চোট থেকে ফিরে ফর্মে ছিল না। তবু মানুষের সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে উরুগুয়ের অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ কোইতো ওকে বারবার দলে ডাকতে থাকে।’
পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের সেই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে গোল করেছেন মাত্র দুটি, তবে পায়ের ঝলকে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন নুনিয়েজ। ওই বিশ্বকাপের পর থেকে ক্রমেই আলো ছড়ানো ক্যারিয়ারে পেনিয়ারল থেকে আলমেরিয়া ঘুরে বেনফিকা হয়ে নুনিয়েজের লিভারপুলে পদার্পণ বলে, কোইতো পাকা জহুরিই ছিলেন।