নেইমার? ব্রাজিলের সেরা তো এখন ভিনি-আন্তোনি

ভিনিসিয়ুস ও আন্তোনি, ব্রাজিলের নতুন দিনের দুই কাণ্ডারিছবি : রয়টার্স

গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রাজিলীয় ফুটবলের ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে সবাই একবাক্যে নেইমারের নামই উচ্চারণ করেন। হ্যাঁ, এই সময়টায় ফিলিপ কুতিনিও, রবার্তো ফিরমিনো, গাব্রিয়েল জেসুস কিংবা কাসেমিরোরা নিয়মিত খেলে গেলেও নেইমারকে সেই অর্থে ছুঁতে পারেননি কেউই। সেটা মাঠের ভেতরে পায়ের কারুকাজ দেখানোর দিক দিয়ে হোক, কিংবা মাঠের বাইরে বিপণনের জগতে।


সেই নেইমার নামের সূর্যটাও ঢলে পড়ছে আস্তে আস্তে। কিছুদিন আগে পিএসজির এই তারকা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বিশ্বকাপেই হয়তো শেষবারের মতো দেখা যাবে তাঁকে। আগামী বিশ্বকাপ তো দূর, এখনই মাঠের খেলায় আগের মতো নেইমারের সেই ঔজ্জ্বল্য দেখা যায় না। বিভিন্ন চোটাঘাতে মাঠের বাইরেই সময় কাটান বেশি।

পিএসজি তারকা নেইমার
ছবি: এএফপি

বর্তমান বিশ্বের সেরা ১০ জন কার্যকর খেলোয়াড়ের নাম বলতে বললে অনেকে হয়তো নেইমারকে রাখবেনও না। তাই বলে কি ব্রাজিলীয় ফুটবলকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার জন্য কেউ নেই এখন? ভুল!


ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আর আন্তোনি আছেন না!

একজন খেলেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে, আরেকজন আলো ছড়ান আয়াক্স আমস্টারডামে। ভিনিসিয়ুসের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পরপরই যে সাফল্য পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়েছিল তাঁর, বলা যাবে না। জিনেদিন জিদান, সান্তিয়াগো সোলারি কিংবা হুলেন লোপেতেগি—কারও অধীনেই মূল একাদশে নিয়মিত হতে পারেননি। পায়ের তলায় খুঁজে পাননি জমিন। শুধু তাই নয়, গত মৌসুমে একটা এমন ভিডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়, যেখানে শোনা যায় করিম বেনজেমা লেফটব্যাক ফারলাঁ মেন্দিকে বলছেন, ‘ওকে বল দিয়ো না। ওর যেভাবে খুশি ও সেভাবে খেলছে। ও আমাদের বিপক্ষে খেলছে!’


অবস্থার পরিবর্তন ঘটে মৌসুমের শুরুতে কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলত্তি আসার পর। করিম বেনজেমার পাশাপাশি রামোস-ভারান-রোনালদোহীন রিয়ালকে এখন যে টানছেন ভিনিসিয়ুসই! এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এর মধ্যেই ২৩ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তাঁর। গোল করেছেন এক ডজন, করিয়েছেন ৯টা। গত রাতের কথাই ধরুন। আতলেতিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে শহরে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ভিনি
ছবি : রয়টার্স

দুটি গোলই বানিয়ে দিয়েছেন ভিনিসিয়ুস। শিষ্যের খেলা দেখে মুগ্ধ আনচেলত্তিও, ‘ও প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে। আমি সব সময়ই বলেছি ও আমাদের কাজে দেবে। ও খামোখাই ড্রিবল করে না। ওর যদি মনে হয় ড্রিবল করা উচিত, ও করবে। ও যদি মনে হয় পাস দেওয়া উচিত, ও দেবে। ওর যদি মনে হয় শট নেওয়া উচিত, ও নেবে।’ ওদিকে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা তো এর মধ্যেই ভিনিসিয়ুসকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের তকমা দিয়ে দিয়েছে।


ওদিকে আন্তোনিও ডাচ লিগে আলো ছড়াচ্ছেন সমানে। চ্যাম্পিয়নস লিগের কথাই ধরুন। তুলনামূলক সহজ গ্রুপে থেকেও আর্লিং হরলান্ডের ডর্টমুন্ড যে এবার গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারল না, তা তো আন্তোনির আয়াক্সের দুর্দান্ত ফর্মের কারণেই! গ্রুপ পর্বের ছয় ম্যাচে তিন গোল করেছেন, পাঁচটা করিয়েছেন। সেবাস্তিয়েন আলার, ডেভিড নেরেস, স্টিভেন বের্গুইস ও দুসান তাদিচের মতো ফরোয়ার্ডরা তাঁর আশপাশেই থেকেই আরও কার্যকর ফুটবলার হয়ে উঠছেন। ব্রাজিলও যার সুফল পাচ্ছে। গত কয়েক ম্যাচেই আন্তোনি মাঠে নামার পর খেলায় ছন্দ ফিরে পেয়েছে ব্রাজিল। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে গোলও পেয়েছেন এই উইঙ্গার।

আন্তোনিও কম আলো ছড়াচ্ছেন না
ছবি : রয়টার্স

আয়াক্সের কোচ এরিক টেন হাগ তো স্বীকার করেই নিয়েছেন, ব্রাজিলের জাতীয় কোচ তিতের পরিকল্পনায় যে খেলোয়াড় চলে এসেছেন, তাঁকে আয়াক্সে ধরে রাখার সাধ্য তাঁর নেই! এর মধ্যেই বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসির মতো দলগুলো আন্তোনির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে।


বলা যেতেই পারে, নেইমার নন, সময় তো এখন ভিনি-আন্তোনিরই!