নিজের আসল পরিচয় জানালেন স্টুটগার্টের ফুটবলার
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে খেলার স্বপ্ন দেখেন না কোন ফুটবলার! বিশ্বের নানা প্রান্তের উঠতি কিশোরদের আরাধ্য ইউরোপের ফুটবল মাঠ। সাইলাম ওয়ামানগিতুকার স্বপ্নও আলাদা কিছু ছিল না।
কঙ্গোর কিনশাসায় খেলার সময় স্বপ্ন দেখেছেন ফরাসি ফুটবলে খেলার। এত দিন পর জানা গেল ইউরোপে খেলার স্বপ্নপূরণের পথে তাঁকে ভয়ানক ‘দুঃস্বপ্ন’ও দেখতে হয়েছে। তাঁর বর্তমান নাম ও জন্মতারিখ ভুয়া!
ওয়ামানগিতুকার পরিচয়টা আগে দেওয়া যাক। ১৭ বছর বয়সে কঙ্গোর কিনশাসায় স্থানীয় ক্লাব অলিম্পিক মাতেতের হয়ে খেলতেন তিনি। এরপর উড়াল দেন ফ্রান্সের পথে, ডাক পান সেখানকার নিচু লিগের দল অ্যালেস এফসিতে।
এরপর ফরাসি লিগে দ্বিতীয় বিভাগীয় দল প্যারিস এফসি ঘুরে ২০১৯ সালে বুন্দেসলিগায় স্টুটগার্টে যোগ দেন ওয়ামানগিতুকা। গত বছর নভেম্বরে বুন্দেসলিগায় মাসের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনি। ৫৪ ম্যাচে ১৮ গোল করা ২২ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ডকে স্টুটগার্ট তাদের ভবিষ্যত হিসেবেও দেখছে। গত মৌসুমে ১১ গোল করে তিনি ক্লাবটির সর্বোচ্চ গোলদাতা।
স্টুটগার্ট আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওয়ামানগিতুকার নাম ও জন্মতারিখ ভুয়া। খেলোয়াড়টি নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন ক্লাবকে। অনেক বছর আগেই নিজের আসল নাম ও জন্মতারিখ গোপন করে এত দিন খেলছিলেন তিনি। এই কাজ করেছিলেন তাঁর-ই এক সাবেক ফুটবল এজেন্ট। ওয়ামানগিতুকা কিশোর থাকতে সেই এজেন্ট তাঁর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
স্টুটগার্টের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে ওয়ামানগিতুকা বলেছেন, ‘নিজের গল্প বলাটা ছিল আমার জন্য কঠিন এক পদক্ষেপ। শুধু আমার নতুন উপদেষ্টার জন্যই এ কাজটা করতে সাহস পেয়েছি।’
১৭ বছর বয়সে ফ্রান্সের পথে পা বাড়ানোর পর থেকেই ওয়ামানগিতুকা নিজের পরিচয় গোপন করা নিয়ে ভীত ছিলেন বলে জানিয়েছেন। ওয়ামানগিতুকা জানিয়েছেন, তাঁর আসল নাম সাইলাস কাতোম্পা এমভুম্পা। আগে তাঁর জন্মের সাল সবাই জানত ১৯৯৯, কিন্তু আসল জন্মসাল এক বছর আগে—১৯৯৮।
অর্থাৎ ২১ বছর নয়, তাঁর বয়স আসলে ২২ বছর। স্টুটগার্টের এই ফরোয়ার্ড জানিয়েছেন, বেলজিয়ামে থাকতে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তন করেন খেলোয়াড়দের এক এজেন্ট। তাঁর ব্যাংক হিসাব এবং পাসপোর্টও নাকি এজেন্টের দখলে ছিল—জানিয়েছেন খেলোয়াড়টি।
এদিকে স্টুটগার্ট জানিয়েছে, তারা নিজেদের খেলোয়াড়ের পাশেই আছে এবং পূর্ণ সমর্থন দেবে। ক্লাবটির পরিচালক টমাস হির্টজপেরেগের সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সাইলাস জানানোর পর আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, তিন বছর আগে খেলোয়াড়টিকে প্যারিসে নিজের কাছে রেখেছিলেন সেই এজেন্ট।
স্টুটগার্ট মনে করছে, সেই এজেন্ট নাম ও জন্মসাল পাল্টেছে কঙ্গোর স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কচ্ছেদ করতে। খেলোয়াড়টি যেন তাঁর ওপর মানসিকভাবে নির্ভর হয়ে পড়েন—এই কৌশলে হেঁটেছেন সেই এজেন্ট।
স্টুটগার্ট জানিয়েছে, জার্মান ফুটবল লিগ (ডিএফএল) ও জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) সঙ্গে তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। এ বিষয়ে যেকোনো পরিণতি মেনে নিতে ক্লাবটি প্রস্তুত বলে জানানো হয়।
গোটা বিষয়টির আইনি দিকগুলো যাচাইয়ের পর ‘সাইলাসের খেলার ছাড়পত্র এখনো বৈধ’ বলে বিবৃতি দেওয়া হয় স্টুটগার্টের পক্ষ থেকে। নতুন পরিচয়ে সাইলাস খেলার নতুন ছাড়পত্র পাবেন বলেও আশা করছে ক্লাবটি।