নিউক্যাসলের সৌদি মালিকানা নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রিমিয়ার লিগের বাকি ক্লাবগুলো
সুদিন ফিরেছে নিউক্যাসলে। অ্যালান শিয়ারার, পল গ্যাসকোয়েন, অ্যান্ডি কোল, কেভিন কিগান, পিটার বিয়ার্ডসলির মতো একাধিক প্রিমিয়ার লিগ কিংবদন্তি যে ক্লাবে খেলেও কখনো লিগ জিততে পারেননি, এবার তাঁরাই সবকিছু জেতার স্বপ্ন দেখছেন। ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, সৌদি মালিকানাধীন কনসোর্টিয়াম সৌদি পাবলিক ইনভেস্ট ফান্ড (পিআইএফ), পিসিপি ক্যাপিটাল পার্টনার্স এবং আরবি স্পোর্টস মিডিয়া নিউক্যাসল কিনে নিয়েছে। পিআইএফ-এই তহবিলের প্রধান সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
এতে শুধু প্রিমিয়ার লিগেরই নয়, বিশ্ব ফুটবলেরই অন্যতম পরাশক্তি হয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন এ ক্লাব। ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লিভারপুল, জুভেন্টাসের মতো আগামী দলবদলের বাজারেই হয়তো টাকার বস্তা নিয়ে নামবে নিউক্যাসল। ঝুলিতে পুরবে ফুটবলের নামকরা ও প্রতিভাবান একেক খেলোয়াড়কে।
গত ১৪ বছর কিপটে মালিক মাইক অ্যাশলির কারণে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী নিউক্যাসল ধুঁকছিল ইংলিশ ফুটবলে। সেদিন আর নেই, এটা এখন বলাই যায়।
নিউক্যাসলের মালিকানায় এমন রাতারাতি পরিবর্তন আসবে, আর লিগের বাকি দলগুলো চুপচাপ সহ্য করে যাবে, তা কি হয়?
লিভারপুল, সিটি, ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনালসহ প্রিমিয়ার লিগের অন্য ক্লাবগুলোও হঠাৎ নিজেদের লিগে সৌদি রাজপরিবারের এই ‘দাদাগিরি’ মানতে পারছে না। আগামী সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে জরুরি সভার আয়োজন করে প্রিমিয়ার লিগের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে চাইছে তারা। তবে এই সভা করে যে নিউক্যাসলের মালিকানা বদল আটকানো যাবে না, সেটা অন্য ক্লাবগুলো বেশ ভালোই বোঝে। বরং এভাবে মালিকানা বদল হওয়ায় তারা যে কতটা ক্ষিপ্ত, এই সভায় মূলত তার বহিঃপ্রকাশই দেখা যাবে বলে জানিয়েছে ইংলিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
তবে সৌদি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হাতে নিউক্যাসলকে তুলে দেওয়া নিয়ে সতর্ক করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা দাবি করেছিল, সৌদি আরবের রাজতন্ত্র এই ক্লাবকে ব্যবহার করে অতীত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করবে, খেলাধুলার ভাষায় যা ‘স্পোর্টসওয়াশিং’। নিউক্যাসলে বিলিয়নিয়ার মালিক আসার কারণে খেলোয়াড়দের বেতনকাঠামো ও দলবদল ফি যে আরও বেড়ে যাবে, এ ব্যাপারটা নিয়েও অসন্তুষ্ট প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো।
লিগের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্স ও সভাপতি গ্যারি হফম্যান নিউক্যাসলের মালিকানা বদল নিয়ে এর মধ্যেই অনেক ক্লাবের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। বলা হয়েছে, নিউক্যাসলে যে পালাবদল আসতে চলেছে সে ব্যাপারে ওসব ক্লাব কিছুই জানত না।
এমনকি এ বিষয়টি সম্প্রতি হওয়া শেয়ারহোল্ডারদের সভাতেও উত্থাপিত হয়নি। গত বছর মালিকানা বদলের কথা থাকলেও প্রিমিয়ার লিগের মালিক ও পরিচালকদের পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না এই শঙ্কায় সৌদি মালিকানাধীন কনসোর্টিয়াম নিজেদের প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়।
বলা হচ্ছে, লিগের অধিকাংশ ক্লাব মিডিয়ার মাধ্যমেই গত বুধবার এ খবর জানতে পেরেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে লিগের পক্ষ থেকে মেইল দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। একই বিবৃতিতে প্রিমিয়ার লিগ নিশ্চিত করে, সৌদি রাজতন্ত্র এই ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করবে না, সে বিষয়ে ‘আইনগত প্রতিশ্রুতি’ পেয়েছে তারা।
সৌদি আরব নিজেদের দেশে কাতারি চ্যানেল বিইন স্পোর্টসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিশ্চিত করেছে তাদের দেশে যেন কোনো পাইরেটেড চ্যানেলের মাধ্যমে ফুটবল খেলা দেখানো না হয়। বলা হচ্ছে, নিউক্যাসলের কীভাবে চলবে না চলবে, এ নিয়ে সৌদি প্রতিনিয়ত মাথা ঘামাবে না। তবে প্রিমিয়ার লিগের বাকি ক্লাবগুলো ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে এমনটা না-ও হতে পারে।