‘দ্য কিউরিয়াস কেস অব ইব্রা’
‘দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন’ নামের সিনেমার কথা মনে আছে? জন্ম নেওয়ার সময় সিনেমাটির প্রধান চরিত্র বেঞ্জামিন বাটনকে বয়স্ক একজন মানুষের মতো দেখতে লাগে। বছর যত গড়ায় বাটন তত তরুণ হতে থাকেন। খেলার খবর লিখতে গিয়ে সিনেমার গল্প বলা কেন? এটা ইব্রাহিমোভিচের কারণে। এসি মিলানের সুইডিশ স্ট্রাইকারের বয়স যত বাড়ছে, দিনে দিনে যেন তরুণ হচ্ছেন তিনি!
ইব্রা নিজেই নিজেকে বেঞ্জামিন বাটন বলে দাবি করেছেন! সিরি ‘আ’তে গতকাল বোলোনিয়ার বিপক্ষে এসি মিলানের ২-০ গোলের জয়ে দুটি গোলই করেছেন ইব্রা। বয়স ৩৯ ছুঁই ছুঁই, এই বয়সেও এমন পারফরম্যান্স কীভাবে উপহার দেন সুইডিশ স্ট্রাইকার? এর রহস্য জানাতে গিয়ে ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, ‘আমি আসলে বেঞ্জামিন বাটনের মতো। জন্মেছি বয়স্ক হয়ে, মারা যাব তরুণ হয়ে।’
ইব্রার যে বয়স, বেশির ভাগ ফুটবলারই এই বয়সে অবসরে চলে যান। খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় জানিয়ে আয়েশি জীবন কাটাতে ভালোবাসেন অনেকে। কিন্তু ইব্রা এখনো শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলে যাচ্ছেন। সুইডেনের মালমো এফসি দিয়ে ইব্রা তাঁর পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৯৯ সালে। নিজের শহরের ক্লাবটিতে এক মৌসুম খেলার পর পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডসে। সেখানে তিন বছর খেলেছেন আয়াক্স আমস্টারডামে।
এরপর ঠিকানা করেন ইতালি। সেখানে জুভেন্টাস ও ইন্টার মিলানে পাঁচ মৌসুম কাটানোর পর চলে যান স্পেনের বার্সেলোনায়। দুবছর পর আবার ইতালিতে ফিরে যোগ দেন এসি মিলানে। সেখান থেকে চলে যান ফ্রান্স অভিযানে। চার মৌসুম পিএসজির হয়ে খেলার পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের স্বাদও নেন ইব্রা।
আসলে আমি যদি সেই ২০ বছরের ইব্রা থাকতাম তাহলে আরও দুটি গোল পেতাম।
টানা ২০ বছর ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলে ইব্রা ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। মেজর লিগ সকারের দল এলএ গ্যালাক্সিতে দুই মৌসুম কাটিয়ে আবার ফেরেন ইতালিতে। গত মৌসুমে নাম লেখান এসি মিলানে। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে খেলে আসলেও ইব্রা যে সেই আগের মতোই আছেন সেটা গত মৌসুমে তো দেখিয়েছেনই, দেখাচ্ছেন এ মৌসুমের শুরু থেকেও। এ মৌসুমে দুটি ম্যাচ খেলেছেন—একটি ইউরোপা লিগে, আরেকটি গতকাল সিরি ‘আ’তে। দুই ম্যাচেই গোল পেয়েছেন।
তবে ইব্রা কিছুটা হলেও টের পাচ্ছেন, সত্যিই বয়স হয়েছে তাঁর! জোড়া গোল করে কাল দলকে জিতিয়েছেন। তবে সহজ দুটি গোলের সুযোগ কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। গতি আর রিফ্লেক্স ঠিক আগের মতো নেই। সেটা যদি থাকত তাহলে একটি রেকর্ডও হয়তো গতকাল গড়ে ফেলতেন। দুটি সুযোগের একটি কাজে লাগাতে পারলেই হয়ে যেতেন সিরি ‘আ’র সবচেয়ে বেশি বয়সী হ্যাটট্রিক করা ফুটবলার। ম্যাচ শেষে ইব্রা বয়স বাড়ার বিষয়টিই যেন মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমরা জিতেছি। আমি আরও গোল করতে পারতাম। আসলে আমি যদি সেই ২০ বছরের ইব্রা থাকতাম তাহলে আরও দুটি গোল পেতাম।’
আরেকটা বিষয়ও বলেছেন ইব্রা। ফিটনেস ধরে রাখতে সেই আগের মতোই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, ‘আমি ঠিক আছি। ফিটনেস ধরে রাখতে কাজ করছি। এটা তো মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেললাম। গত মৌসুমের শেষ দিক থেকেই দারুণ ছন্দে আছে এসি মিলান। আগের মৌসুমের সেই ছন্দ নিয়েই যেন শুরু করেছে নতুন মৌসুম। তবে এই ছন্দটা ধরে রাখতে ইব্রাকে খুব প্রয়োজন মিলানের দলটির।
গত মৌসুমের শেষ দিকে মিলান যে ছন্দে ছিল সে তো ইব্রার কল্যাণেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে সিরি ‘আ’তে ১৮ ম্যাচ খেলে ১০টি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন পাঁচটি গোল। এ মৌসুমেও তো ছুটছে তাঁর গোলের রথ! সব মিলিয়ে ইব্রার ক্যারিয়ার নিয়েও হতে পারে একটি সিনেমা। আর তার নাম হতে পারে ‘দ্য কিউরিয়াস কেস অব ইব্রা’!