ড্র করেও জিতল মঙ্গোলিয়া। ড্র করেও হারল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ–মঙ্গোলিয়া ফিফা প্রীতি ম্যাচে এটিই হতে পারে সারকথা। আজ সিলেট স্টেডিয়ামে দুদলের এই ম্যাচে কোনো গোল হয়নি। বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করেও দেশের মাটিতে মঙ্গোলিয়াকে হারাতে ব্যর্থ।
অথচ ২০০১ সালে এই মঙ্গোলিয়াকে সৌদি আরবের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৩–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদশ। সেবার ৭ দিনের ব্যবধানে ফিরতি ম্যাচে মঙ্গোলিয়া আটকে দেয় জর্জ কোটানের বাংলাদেশকে (২–২)। ২১ বছর পর আজ তারা বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মাঠে রুখে দিয়েছে। যা কিনা মঙ্গোলিয়ার ফুটবলে একটা সাফল্যই।
ম্যাচ শেষে তাই পরিতৃপ্তি ছিল মঙ্গোলিয়ার খেলোয়াড়দের চোখেমুখে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য এটি হতাশার সন্ধ্যা। দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় একতরফা খেলেও গোল করতে না পারার জন্য শুধু নিজেদেরই দুষতে পারে বাংলাদেশ। তবে প্রায় ভরে যাওয়া সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে অভ্যর্থনাই পেয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা।
গত ২৪ মার্চ মালদ্বীপের কাছে ২–০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ছক ছিল ৪–৪–২। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে সেটি বদলে ৪–১–৪–১। একাদশের প্রথমে একটি বদলের সিদ্ধান্ত নেন কোচ কাবরেরা। লেফট ব্যাক বিশ্বনাথের জায়গায় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান। আতিক দলে আসায় প্রথাগত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়াকে আজ আক্রমণে সহয়তার দায়িত্ব দেন কোচ।
তবে দল মাঠে আসার পর শেষ মুহূর্তে আরেকটি বদল আসে দলে। মিডফিল্ডার বিপলু আহমেদের জায়গায় রাইট ব্যাক রিমন হোসেনকে আনা হয়। দুই স্টপারে তারিক কাজী ও টুটুল হোসেন। কিন্তু ছক পাল্টেও ভাগ্য পাল্টাল না বাংলাদেশের। কাবেরার অধীনের দুই ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পেল না বাংলাদেশ।
মঙ্গোলিয়ার ফুটবলারদের স্কিল ভালোই। বুদ্ধিদীপ্ত এবং মনপ্রাণ ঢেলে খেলতে ভালোবাসেন তাঁরা। কিন্তু ঘাসের মাঠে তাঁরা যে অভ্যস্ত নন সেটি বোঝা গেছে। তা ছাড়া একটা দল হিসেবে খেলতে না পারায় কিছু সমস্যায় পড়ছিল। সংঘবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় সেসব উতরে গেছে সফরকারিরা। বাংলাদেশের ফুটবলাররা বল পেলে দ্রুত কাভারিং করেছেন তাঁরা। বল কেড়ে নিতে তাঁদের চেষ্টা ছিল দেখার মতো। শেষ দিকে জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে রক্ষণ কাজটা করে গেছে মঙ্গোলিয়া।
প্রথমার্ধের মাঝামাঝি নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের পাসিংয়ের রাস্তাগুলো বন্ধ করেছে মঙ্গোলিয়া। এবং নিজেরা আক্রমণেও এসেছে। তবে প্রতি আক্রমণে বাংলাদেশের ডিফেন্সিভ থার্ডে এসে বল হারিয়ে ফেলেন মঙ্গোলিয়ার ফরোয়ার্ডেরা। বাংলাদেশ দল নিজেদের রক্ষণে কোনো সুযোগই দেয়নি মঙ্গোলিয়াকে। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে এসে প্রথম কর্নার পেয়েছে মঙ্গোলিয়া।
ফলে বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমানকে কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি ম্যাচে। শুরুতেই অবশ্য বিড়ম্বনায় পড়েন আনিসুর। মাঠের ভেতর তাঁর সামনে হঠাৎ এক কুকুরের প্রবেশ। কুকুরকে মাঠ থেকে তাড়াতে খেলা বন্ধ রাখতে হয় মিনিট তিনেক। এরপর খেলা শুরু হলে বেশির ভাগ সময় গোলকিপার আনিসুর সামনে তাকিয়ে তাঁর দলের খেলাই দেখেছেন।
শুরুতে কিছুটা ঝিলিক দিয়ে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি অবশ্য ছন্দ হারায় লাবাংলাদেশ। দুটি পাস ঠিক মতো হচ্ছিল না তখন। নিজেদের সেরাটাও এই সময় দিতে পারেননি সোহেল রানারা। দল হিসেবে ওই সময়টা স্বাগতিকদের এলোমেলো মনে হয়েছে। যদিও বা প্রান্ত দিয়ে রাবিক হোসেন তেড়েফুড়ে ঢোকেন বেশ কবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তারপরও গোল আসতে পারত স্ট্রাইকার সুমন রেজা নিখুঁত থাকলে। । প্রথমার্ধে তাঁর শট লাগে ক্রসবারে। বিরতির ঠিক আগে ছোট ডিয়ের একটু সামনে থেকে বল মারলেন বাইরে। পোস্টে রাখতে পারলে গোল হতে পারত। এটি ছিল এই অর্ধে সহজতম সুযোগ। ৬০ মিনিটে সুমন রেজাকে তুলে মাঠে পাঠানো হলো বাংলাদেশ দলের ’নাম্বার টেন’ নাবিব নেওয়াজকে।
৭৬ মিনিটে জোড়া বদল আনেন কোচ। রাকিব ও জামালের বদলে আসেন জাফর ইকবাল ও বিপলু। বিপুল এসে ভালো সুযোগ পেলেও বল মারেন বাইরে। শেষক্ষণে মাঠে এলেন জুয়েল রানা ও রায়হান। রায়হানকে নামিয়ে চেষ্টা করা হলো লম্বা থ্রো থেকে যদি কিছু করা যায়। কিন্তু এই ঔষধেও কাজ হয়নি। শেষ মিনিটে রায়হানের শট যায় বাইরে। অনেক চেষ্টা করেও বাংলাদেশ গোল আদায় করতে পারেনি।
সিলেটের মাঠে বাংলাদেশ আগে ৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২টি জিতেছে, ২টি হার। এবার তার সঙ্গে যোগ হলো ড্র। তবে এই ড্র বাংলাদেশের জন্য তৃপ্তির নয়, আত্ম জিজ্ঞাসার। গোল করতে না পারার চিরন্তন ব্যর্থতার ফল।