দুই ভাইয়ের গল্প লেখার রাতে রিয়ালের সামনে হাজির বিলবাও

দলের দ্বিতীয় গোলের পর বিলবাওয়ের নিকো উইলিয়ামসের উল্লাসছবি: রয়টার্স

ইনাকি উইলিয়ামস তো এখন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সবচেয়ে বড় তারকা। সাত বছর আগে বিলবাওয়ের জার্সিতে প্রথম গোল পেয়েছিলেন, এরপর লিভারপুল, বার্সেলোনাসহ অনেক ক্লাবের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে দলবদলের গুঞ্জন তৈরি হলেও বিলবাও আর ছাড়েননি উইলিয়ামস। গত বছর ক্লাবকে স্প্যানিশ সুপার কাপও জিতিয়েছেন।

এবারও পারবেন কি না, কে জানে! তবে এবার জিতলে অন্য রকম এক গল্পই হবে। এবার যে ইনাকির সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই নিকো উইলিয়ামসও আছেন! শুধু দলে থাকাই নয়, আলোও ছড়াচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ছোট ভাই নিকোর ঝলকেই দুই ভাইয়ের এমন অসাধারণ গল্পের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

দুই ভাই ইনাকি ও নিকো উইলিয়ামস
ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে গতকাল পিছিয়ে পড়েও আতলেতিকো মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে উঠে গেছে অ্যাথলেটিক বিলবাও।

৭৭ থেকে ৮২—এই ৫ মিনিটে গোল দুটি পেয়েছে বিলবাও, আর শেষ পর্যন্ত জয়সূচক হয়ে থাকা গোলটি করেছেন নিকো উইলিয়ামস! ক্লাবের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোল! তাঁর গোলেই শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হলো, আগামী পরশু ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হচ্ছে বিলবাও।

সাধারণত স্প্যানিশ সুপার কাপে আগের মৌসুমের লিগ চ্যাম্পিয়ন আর কোপা দেল রে–জয়ী দল মুখোমুখি হতো। কিন্তু সৌদি টাকার ঝনঝনানিতে প্রলুব্ধ স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন শত বছরের ঐতিহ্য একপাশে রেখে এখন স্প্যানিশ সুপার কাপকে বানিয়েছে চার দলের টুর্নামেন্ট। যেখানে আগের মৌসুমের দুই শিরোপাজয়ীর পাশাপাশি খেলে আগের মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় ও কোপা দেল রেতে রানার্সআপ দল।

বিলবাওকে সমতায় ফেরান ইয়েরাই আলভারেজ
ছবি: রয়টার্স

এবারের স্প্যানিশ সুপার কাপে সেমিফাইনালগুলো এমনই হলো যে, এখন ফাইনালটা হচ্ছে ‘অতিথি’ দুই দলের। গতবারের কোপা দেল রে–জয়ী বার্সেলোনাকে পরশুই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, আর লিগ চ্যাম্পিয়ন আতলেতিকোকে কাল সৌদি আরব থেকে স্পেনে পাঠিয়ে দিল বিলবাও।

তা যেভাবেই ফাইনালে উঠুক, গতবার স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতা বিলবাওয়ের জন্য এখন সুযোগ টানা দুবার শিরোপা জেতার। যদিও কাজটা কঠিন হবে না, নামের ভারে অনেক এগিয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ যে এ মুহূর্তে ‘ধারে’ও এগিয়ে—স্পেনে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়ংকর দল তারাই! তবে উইলিয়ামস ভাইদের চোখে হয়তো সে কারণেই ফাইনালটা আরও বড় সুযোগ হয়ে আসছে। সে সুযোগ তাঁদের আবেগপ্রবণ গল্পটাকে আরও মধুর করে নেওয়ার।

আবেগের কমতি তো কালও ছিল না! ১৯ বছর বয়সী নিকো উইলিয়ামস কাল যখন ৮১ মিনিটে গোলটা করেন, অপত্য স্নেহ আর দারুণ গর্বে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন বড় ভাই ইনাকি। মুহূর্তটা আবেগের তারে আরও বেশি টোকা দিয়ে গেল, যখন জানা গেল, গ্যালারিতে বসে মুহূর্তটার সাক্ষী হয়েছেন ঠিক ওই মুহূর্তের বিশ্বের সবচেয়ে গর্বিত নারী—উইলিয়ামস ভাইদের মা। এ ম্যাচের জন্য বাস্ক অঞ্চল থেকে রিয়াদে চলে এসেছিলেন তিনি।

নিকোর গোলের পর বিলবাও গ্যালারির সামনে গিয়ে উদ্‌যাপন নিকো ও ইনাকি উইলিয়ামসের। গ্যালারিতে ছিলেন তাঁদের মা
ছবি: রয়টার্স

প্রায় অর্ধেক ফাঁকা কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে উপস্থিত গুটিকয়েক বিলবাও সমর্থকদের জন্যও রাতটা দারুণ কেটেছে। যদিও ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগেও তাঁদের রাতটাকে দারুণ মনে হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।

ম্যাড়মেড়ে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৬২ মিনিটে বিলবাও গোলকিপার উনাই সিমনের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় আতলেতিকো। টমাস লেমারের কর্নারে জোয়াও ফেলিক্সের হেড পোস্টে লেগে ফেরে ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়া সিমনের পিঠে লেগে বল আবার জালেই ঢোকে। কিন্তু শেষ দিকে পাঁচ মিনিটের ঝড়ে গল্পটা বদলে দেয় বিলবাও।

৭৭ মিনিটে বিলবাওয়ের সমতাসূচক গোলেরও উৎস একটা কর্নার, গোল করেন ইয়েরাই আলভারেজ। এরপর আতলেতিকো গোলকিপার ইয়ান অবলাক টানা তিনটি দুর্দান্ত সেভ না করলে ম্যাচ তখনই জিতে যায় বিলবাও। তবে ৮১ মিনিটে আর বিলবাওকে—নিকো উইলিয়ামসকে—ঠেকাতে পারেননি অবলাক। এবারও গোলের উৎস কর্নার, সেটি থেকে বল বক্সে পড়লে দারুণ ভলি করেন নিকো। বল জড়িয়ে যায় জালে।

‘ভাইয়ের সঙ্গে এমন একটা মুহূর্তের স্বপ্ন কতশতবার দেখেছি!’—ম্যাচ শেষে নিকোর অনুভূতি। দল যেভাবে ফিরে এসেছে, তা নিয়েও অনেক গর্ব তাঁর, ‘ওদের গোলটা বড় ধাক্কা হয়েই এসেছে, তবে আমরাও ছেড়ে দিইনি। আমরা জানি, কীভাবে ফিরে আসতে হয়।’

ফাইনালে চোখ রেখে রিয়ালকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ছোট উইলিয়ামস, ‘আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি। (ফাইনালে) রিয়াল মাদ্রিদের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে পড়তে যাচ্ছি। সবটুকু নিয়েই ঝাঁপাব আমরা। আশা করি, আরেকটা সুপার কাপ জিততে পারব।’

অ্যানফিল্ডে গ্রানিত জাকা লাল কার্ড দেখায় ২৪ মিনিটেই দশজনের দল হয়ে যায় আর্সেনাল
ছবি: রয়টার্স

স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ওঠার লড়াই শেষ হয়েছে। এদিকে ইংল্যান্ডে লিগ কাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের প্রথম কিস্তিতে কাল নেমেছিল আর্সেনাল ও লিভারপুল। তবে অ্যানফিল্ডে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে কাল ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ই হলো!

গোলশূন্য ড্র হয়েছে ম্যাচ, ৬৬ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলা আর্সেনালের বিপক্ষে লিভারপুল গোলে শটই নিতে পেরেছে মাত্র একটি! ২৪ মিনিটে গোলের পথে ছুটতে থাকা লিভারপুলের দিয়োগো জোতাকে নিজেদের বক্সের বাইরে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার গ্রানিত জাকা।