দুঃস্বপ্নের ওই ১০ মাস ছাপ রেখেছিল ফন ডাইকের মনেও
গত বছরের অক্টোবরের পর এই প্রথম। ভার্জিল ফন ডাইক আপ্লুত তো হবেনই। ১০ মাস আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে লিভারপুল খেলতে নেমেছিল নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এভারটনের বিপক্ষে। সে ম্যাচে এভারটন গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ডের জঘন্য ট্যাকলে পায়ের লিগামেন্টে মারাত্মক চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ফন ডাইক। সেই যে বেরিয়ে গেলেন ডাচ্ ডিফেন্ডার, ফিরতে পারলেন না গোটা মৌসুমই। কাল নতুন মৌসুমের শুরুতে মাঠে নেমে তাই একটু যেন আবেগাপ্লুত লিভারপুল তারকা।
কাল ফন ডাইকের ফেরাটা মন্দ হয়নি। লিভারপুল প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নরউইচ সিটির মাঠে ৩-০ গোলে জিতেছে। শুরুতে নরউইচ কিছুটা চাপ তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত মানে-সালাহ-জোতাদের অভিজ্ঞতার কাছে পেরে ওঠেনি তারা।
গত লিগে মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলা ফন ডাইকের চোট যেন দুর্ভাগ্য নিয়েই এসেছিল লিভারপুলের জন্য। তাঁর পর চোটে পড়লেন আরও অনেকে, রক্ষণেই ধাক্কাটা বেশি লেগেছে। অন্য দুই ডিফেন্ডার জোয়েল মাতিপ আর জো গোমেজও এর কিছুদিনের মধ্যেই চোটে পড়ে মৌসুমে আর নামতে পারেননি। এমনই অবস্থা ছিল যে লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ প্রথমে দুই মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন ও ফাবিনিওকে রক্ষণে খেলিয়েছেন। কিন্তু তাঁরাও আগে-পরে চোটে পড়ায় একাডেমি থেকে সদ্যই উঠে আসা তরুণ রিস উইলিয়ামস আর অপরীক্ষিত ন্যাট ফিলিপসকে খেলাতে হয়েছে। জানুয়ারির শেষ দিকে শালকা থেকে তুরস্কের ডিফেন্ডার ওজান কাবাককে নিয়ে আসে লিভারপুল।
এ তো গেল রক্ষণ, এর বাইরেও দিয়োগো জোতা, থিয়াগো আলকানতারা, হেন্ডারসন, ফাবিনিওরা চোটে পড়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে ছিলেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ড ও সাদিও মানে। চোট সমস্যাই তো লিভারপুলের টানা দ্বিতীয় লিগ শিরোপার স্বপ্নের সমাধি ঘটিয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরেও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা লিভারপুল জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে লিগে ১২ ম্যাচের ৮টিতেই হেরেছে, জিতেছে ৩টিতে। একসময় তো লিভারপুল সেরা চারে থেকে এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে কি না, সে শঙ্কাই জেগেছিল! তবে মার্চের পর দারুণভাবে ফিরে এসে শেষ পর্যন্ত লিগ ক্লপের দল লিগ শেষ করেছিল তৃতীয় হয়ে।
লিভারপুল তো কোনো রকমে মানিয়ে নিয়েছে, ফন ডাইকের সময়টা কতটা দুঃসহ কেটেছে? ডাচ্ ডিফেন্ডারের চোখে, ১০ মাস আগের সেই চোট ছিল মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত করে দেওয়া, কঠিন এক চোট।
কাল নরউইচকে হারানোর পর স্কাই স্পোর্টসকে ডাচ্ তারকা বলেছেন চোটের পূর্বাপর, ‘১০ মাস আগে আমার চোটটা ছিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেওয়া। এটাই নিয়ম, কোনো দিন আপনি পুরোপুরি ফিট থাকবেন, কখনো কখনো আপনাকে ওষুধ দিয়ে চোটের সঙ্গে লড়তে হবে। গত মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় খেলোয়াড়দের চোট আমাদের ভুগিয়েছে। আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি।’
এবার নতুন মৌসুমে মাঠে নেমে ফন ডাইকের আশা গোটা মৌসুমে দলকে সেবা দেওয়া, ‘মাঠে থেকে এই ছেলেদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা আমার প্রত্যাশা, এটাই চাওয়া আমার। আমার পুরো ফিট হতে এভাবে ম্যাচ খেলে যেতে হবে, কোচ ভালোই জানেন সেটা। শুরুটা ভালোই হলো। আগামী সপ্তাহে ম্যাচের আগে ধকল কাটিয়ে ওঠার সময় পাব।’
ফন ডাইক পুরো ফিট থাকুন, লিভারপুল–ভক্তমাত্রই এ প্রার্থনায়। লিভারপুলের জন্য ফন ডাইক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তো দুঃস্বপ্নের ওই ১০ মাসই বুঝিয়ে দিয়েছে।