দি মারিয়ার পর আরেক আর্জেন্টাইনে চোখ বার্সার
গুঞ্জনগুলো সত্যি হলে জুভেন্টাস হয়তো একটু বিরক্তই হবে—আবার বার্সেলোনা!
পিএসজি থেকে আনহেল দি মারিয়ার এক বছরের চুক্তিতে জুভেন্টাসে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল কদিন আগে। কিন্তু লা ফিনালিসিমায় দি মারিয়ার আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে ইতালিকে হারিয়ে দিল, তার আগে-পরে দি মারিয়াও বেশ ভালো খেলেছেন, তারপরই আবার দি মারিয়ার বার্সেলোনায় যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হলো। কোনো কিছুই এখনো আনুষ্ঠানিক রূপ পায়নি, তবে নতুন গুঞ্জন, বার্সেলোনায় যেতে আগ্রহী দি মারিয়া আপাতত জুভেন্টাসকে অপেক্ষায় রেখেছেন।
এখন আবার নাহুয়েল মলিনাকে নিয়েও জুভেন্টাস-বার্সার টানাটানির সম্ভাবনা। গত জানুয়ারিতে আবার বার্সায় ফেরা দানি আলভেজ এখনো কাতালুনিয়ায় আছেন, তবে তাঁর বয়স ৩৯ বছর। আরেক দানি আলভেজের খোঁজে তো বার্সা অনেক দিন ধরেই, নির্দিষ্ট করে বললে ২০১৬ সালে আলভেজ প্রথম দফায় বার্সা ছাড়ার পর থেকেই। সে পথে এবার আর্জেন্টিনা দলে মেসির ‘আলভেজ’ মলিনার দিকেই চোখ পড়েছে বার্সার।
মলিনা একদিকে মেসির আলভেজ, অন্যদিকে মেসিকেই আদর্শ মেনে বড় হয়েছেন। একজন রাইটব্যাকের আদর্শ মেসি শুনে একটু খটকা লাগছে? মাসখানেক আগে ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকমে সাক্ষাৎকারে নিজের আদর্শ নিয়ে প্রশ্নে সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন মলিনা, ‘(আমার আদর্শ) মেসি! কারণ যখন ছোট ছিলাম, আমি রাইটব্যাক ছিলাম না। আক্রমণে ওপরের দিকেই খেলতাম। মেসিকেও অনেক ভালো লাগে। এর মানে এই নয় যে আমি তাঁর কাছাকাছি মানের ছিলাম বা এ রকম কিছু, কারণ শুধু এটাই ছিল যে—তিনি কী অসাধারণ একজন খেলোয়াড়! অন্য যে কারও চেয়ে উঁচু মানের।’
সেই মেসিরই সঙ্গে এখন আর্জেন্টিনা দলে খেলা, ১১ মাসের মধ্যে দুটি শিরোপা জেতা মলিনা খেলেন ইতালিয়ান ক্লাব উদিনেসেতে। গত কোপা আমেরিকা থেকেই আর্জেন্টিনা দলে অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছেন। গনসালো মন্তিয়েলের সঙ্গে শুরুর দিকে জায়গা নিয়ে লড়াই চললেও এখন মূলত মলিনারই দখলে সেটি। ইতালির বিপক্ষে লা ফিনালিসিমায়ও তিনিই শুরু থেকে খেলেছেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে।
উদিনেসের জার্সিতে গত মৌসুমটা অসাধারণ কেটেছে মলিনার। লিভারপুলের ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড, চেলসির রিস জেমস, এসি মিলানের থিও হার্নান্দেজ আর ইন্টার মিলানের ইভান পেরিসিচকে (উইঙ্গার হলেও তিনি খেলেন ৩-৫-২ ছকে ফুলব্যাক হিসেবে) দেখে আক্রমণাত্মক ফুলব্যাক হিসেবে আরও ভালো করার চেষ্টা নিয়মিত তাঁর থাকে বলেই জানিয়েছেন।
২৪ বছর বয়সী রাইটব্যাকের সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে ইতালিয়ান লিগের পরিসংখ্যানও উন্নতির স্বাক্ষর রাখে। গোল করেছেন ৭টি, করিয়েছেন আরও ২টি। শুধু সংখ্যাই নয়, নিজের রক্ষণ সামলে প্রতিপক্ষ বক্সে তাঁর সহজাত আক্রমণ-দক্ষতা, ডান পায়ের পাশাপাশি বাঁ পায়েও শট নেওয়ার ক্ষমতা মলিনার ভবিষ্যৎ মলিন না হওয়ারই ইঙ্গিত দেয়।
জুভেন্টাস আর বার্সেলোনার পাশাপাশি আতলেতিকো মাদ্রিদ আর আর্সেনালের নামও যে মলিনার সঙ্গে জড়িয়ে নিয়মিত শোনা যায়, সেটি তো আর্জেন্টিনা আর উদিনেসের জার্সিতে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সেরই পুরস্কার। ফর্মে থাকা, আলোচনায় থাকা তরুণ এমন এক রাইটব্যাকের জন্য তাই উদিনেসেও দাম হাঁকছে ৩ কোটি ইউরো।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ জুভেন্টাসের রক্ষণে তরুণ গতিশীল আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় চাই, তাই জুভেন্টাসের চোখ পড়েছে মলিনার দিকে। বার্সেলোনায় দানি আলভেজের বয়স হয়েছে, সের্হিনিও দেস্ত বার্সা কোচ জাভির চাওয়া মেনে খেলতে পারছেন না, চেলসি থেকে চেজার আসপিলিকেতার বার্সায় যাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে...সব মিলিয়ে বার্সারও ইচ্ছাতালিকায় এসে গেছে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের নাম।
আতলেতিকো মাদ্রিদেও দানিয়েল ভাস, সিমে ভরসালিকো আছেন, কিন্তু আরেকটু ভালো প্রোফাইল খুঁজছেন আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনে। আর্সেনালে তোমিয়াসু, সেদরিক আছেন, বেতিসে ধার শেষে আবার ফেরত যাচ্ছেন এক্তর বেয়েরিন...কিন্তু কারও ওপরই এখনো পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা।
সব মিলিয়েই এই চার ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মলিনার নাম। তবে ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম তুত্তোস্পোর্তসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, দৌড়ে এখনো এগিয়ে জুভেন্টাসই। উদিনেসের ক্রীড়া পরিচালক পিয়েরপাওলো মারিনোই তো কদিন আগে তুত্তোস্পোর্তে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মলিনাকে ঘিরে আগ্রহ অনেক, ওকে আগামী মৌসুমেও আমাদের ক্লাবে রাখা কঠিন হবে। তবে আমি আশায় আছি কোনো ইতালিয়ান ক্লাব যাতে ওকে নেয়, তাতে ওর মূল্য বাড়বে। জুভের সেই ক্ষমতা আছে।’