তাঁর শরীর যেন একটা ক্যানভাস! উল্কির শিল্পে তাতে ফুটে উঠেছে জীবন আর ইতিহাসের গল্প। ডান হাতের কবজির ওপর আঁকা উল্কিতে বড় ছেলে মিগেল নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে ঘুমোচ্ছে।
বাহুতে স্ত্রীকে উৎসর্গ করে আঁকা গোলাপ। কাঁধ থেকে হাত বেয়ে নেমে এসেছেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। স্ত্রীকে একটু বেশিই ভালোবাসেন বলেই কিনা বাঁ হাতে শুধু তাঁরই ঠাঁই হয়েছে। বাহুতে ইংরেজি ভাষায় খোদাই করে লেখা তাঁর নাম—সোফিয়া ব্লাজুদাকিস।
শরীরে উল্কি আঁকা আবাহনী লিমিটেডের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগুস্তোর নেশাই বলা যায়। সেসব উল্কিও আবার বিশেষ অর্থবহ। বেশি চোখে পড়ে হাতের উল্কিগুলোই।
৩১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার যখন বল নিয়ে ছোটেন, তাঁর ডান পায়ের মোজার আড়ালে থেকে যায় তিন ‘সপ্তাশ্চর্য’। পায়ের পেছনের মাংসপেশিতে আগ্রার তাজমহল। সম্রাট শাহজাহানের তৈরি ভালোবাসার নিদর্শনের পাশেই দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত যিশুখ্রিষ্টের মূর্তি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। পায়ের সামনের দিকে শোভা পাচ্ছে রোমের কলোসিয়াম।
এই পায়েরই ঊরুতে ইংরেজিতে লেখা ‘বিলিভ’, বাংলায় যার অর্থ ‘বিশ্বাস’। বিশেষ এই উল্কি তাঁকে সব ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখবে বলে বিশ্বাস আগুস্তোর। বাঁ পায়ে ছোট ছেলে মার্কোস, পেছনের মাংসপেশিতে আঁকা দুহাতের তালুতে সে ঘুমোচ্ছে। তালুর মধ্যে ঘুমানোর অর্থ, সন্তান থাকবে সুরক্ষিত। প্রতিটি উল্কির সঙ্গেই যেন জড়িয়ে তাঁর জীবনের গল্প।
সেদিন আবাহনী ক্লাবের জিমে বসে একে একে উল্কিগুলো দেখিয়ে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলা রাফায়েল বলছিলেন, ‘১০টি উল্কি আছে। এগুলো আমার জীবনকে বহন করে, একই সঙ্গে এটা স্টাইলও। আমার কাছে উল্কিগুলোর গুরুত্ব আছে। যা কিছু ভালো লাগে, তার সবকিছুই থাকে আমার সঙ্গে।’
২০১২ সালে আগুস্তোর উল্কি আঁকা শুরু ‘বিলিভ’ লেখার মধ্য দিয়ে। সেই গল্প শোনালেন রাফায়েল, ‘বড় একটা চোট কাটিয়ে ফেরার পর প্রথমে “বিলিভ” কথাটা লিখি। এটা আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। আমি বিশ্বাস করি, এটা আমাকে সব ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখবে।'
প্রথম সন্তান মিগেলের জন্মটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১৫ সালে দ্বিতীয় উল্কিটি আঁকা। এর পরই থেকেই শরীরে উল্কি আঁকাটা নেশার মতো হয়ে যায় আগুস্তোর। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এঁকেছেন উড়ন্ত বিমান। বিমানে যাতায়াত করতে ভালো লাগে বলেই বিমান উড়ছে আগুস্তোর শরীরে।
ভারতের আইএসএল লিগে খেলেছেন টানা ছয় বছর। ২০১৫ সালে চেন্নাইয়িন এফসিতে খেলার সময় ঘুরতে গিয়েছিলেন তাজমহলে। সে বছর দেশে ফিরেই শরীরে আঁকেন তাজমহল। ইতালির কলোসিয়াম আঁকার গল্পটিও সে রকমই।
নিজের জন্মস্থান রিও ডি জেনিরোতে নির্মিত ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার সম্পর্কে আগুস্তো বলছিলেন, ‘যিশুর ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকায় তাঁর মূর্তি এঁকেছি।’ সিনেমায় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের বীরত্ব দেখে তাঁকে বরাদ্দ করেছেন শরীরের সবচেয়ে বড় জায়গাটি।
তবে সব ছাপিয়ে আগুস্তোর গায়ে সবচেয়ে বড় উল্কিটি বসবে এবার তিনি ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার পর এবং সেটি তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর। ‘স্ত্রীকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি বলে ওর দুটি উল্কি এঁকেছি। এবার দেশে ফিরে এখানে (বাঁ পায়ের ঊরুতে) ওর মুখের বড় একটি উল্কি আঁকব’—বলছিলেন আগুস্তো। তার নিচে থাকবে একমাত্র কন্যাসন্তানের উল্কিও।
তা উল্কিমানব আগুস্তো এবার বাংলাদেশ থেকে কি তুলবেন তাঁর গায়ে? কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ডান পায়ের উরুর ওপর হাত রেখে বললেন, ‘ভেবেছি এই জায়গায় রিকশার উল্কি আঁকব। রিকশা আমার খুব ভালো লাগে।’
তাজমহল, কলোসিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশের রিকশা—রাফায়েল আগুস্তো যেন এক চলমান জাদুঘর!