তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ ডিফেন্ডার
কাল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার হিসেবে লেস্টার সিটি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন ইংলিশ সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়ার। ম্যাগুয়ারকে আনতে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছে ইউনাইটেড। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডারদের তালিকায় ম্যাগুয়ার ছাড়াও আর কে কে আছেন?
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার কে? দুই দিন আগেও এ প্রশ্নের জবাব ছিল, লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। সাউদাম্পটন থেকে দেড় বছর আগে ফন ডাইককে আনতে লিভারপুলের খরচ হয়েছিল ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড। কিন্তু ফন ডাইককে টপকে কাল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার হয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুয়ার। ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের মিনিময়ে লেস্টার সিটি থেকে ম্যাগুয়ারকে নিয়ে এসেছে ইউনাইটেড। শীর্ষ দশ ডিফেন্ডারের তালিকাটা তাহলে কেমন হলো? আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
১. হ্যারি ম্যাগুয়ার (লেস্টার সিটি থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড)
রক্ষণভাগের সমস্যাটা বহুদিন ধরেই ভোগাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। ক্রিস স্মলিং, মার্কোস রোহো বা ফিল জোন্সের মতো ডিফেন্ডাররা বহুদিন ধরে খেললেও কখনই ইউনাইটেডের জন্য তেমন নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। ভিক্টর লিন্ডেলফ বা এরিক বাইয়ির মতো ডিফেন্ডাররা অসাধারণ খেললেও প্রায়ই চোটের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, ফলে ঝামেলায় পড়েছে ইউনাইটেড। দলটির একজন ডিফেন্ডার লাগতই। সেই হোসে মরিনহোর আমল থেকেই নাপোলির কালিদু কোলিবালি, বায়ার্নের জেরোম বোয়াটেং, অ্যাটলেটিকোর (এখন ইন্টারের) ডিয়েগো গোডিন আর টটেনহামের টবি অল্ডারভেইরেল্ডকে আনার চেষ্টা করেছে ইউনাইটেড। লাভ হয়নি। পরে নতুন কোচ ওলে গুনার সুলশারের মনে ধরে লেস্টার সিটির ইংলিশ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ারকে। বছর দু-এক আগে ১৭ মিলিয়ন পাউন্ডে হাল সিটি থেকে লেস্টারে যোগ দেওয়া এ তারকাকে দলে টানতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। ফলাফল, ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড ঢেলে কিনতে হলো ম্যাগুয়ারকে। ইউনাইটেডের সঙ্গে ম্যাগুয়ারের চুক্তি ছয় বছরের।
২. ভার্জিল ফন ডাইক (সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুল, ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
ইউনাইটেডের এখন যা অবস্থা, বছর দেড়েক আগে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলেরও একই অবস্থা ছিল। রক্ষণভাগের অবস্থা তথৈবচ। ডিফেন্ডারদের হাস্যকর সব ভুলে নিয়মিত গোল খেত লিভারপুল। দেয়ান লভরেন, জল মাতিপ, রাগনার ক্লাভান বা স্টিভেন কোলকারের মতো ডিফেন্ডাররা লিভারপুলকে শক্ত ভিত্তি এনে দিতে পারেননি। সমস্যা সমাধানে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের পছন্দ হলো সাউদাম্পটনের সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইককে। কিন্তু চাইলেই কি আর হয়? ফন ডাইককে আনতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি লিভারপুলকে। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে চেষ্টা করেও প্রিয় খেলোয়াড়কে দলে পাননি ক্লপ। অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ছয় মাস। ধৈর্যের পুরস্কার পেয়েছেন ক্লপ। প্রিয় খেলোয়াড়কে তখনকার সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার বানিয়েই নিয়ে এসেছিলেন লিভারপুলে।
৩. লুকাস হার্নান্দেজ (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে বায়ার্ন মিউনিখ, ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড)
ম্যাগুয়ারের মতো এ দলবদলটাও হয়েছে এবার। মৌসুমের শুরু থেকেই বোঝা গিয়েছিল, বর্ষীয়ান ম্যাট হামেলস, জেরোম বোয়াটেং, রাফিনহার মতো ডিফেন্ডারদের জায়গায় তরুণ খেলোয়াড় আনতে চায় বায়ার্ন। সে লক্ষ্যে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের লুকাস হার্নান্দেজের দিকে নজর দেয় দলটি। ফরাসি এ ডিফেন্ডার সেন্টারব্যাক হলেও লেফটব্যাক হিসেবে খেলতে পারেন সমানতালে। গত বছর ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপও জিতেছেন। হার্নান্দেজের বাই আউট ক্লজের পুরোটা পরিশোধ করে তবেই বায়ার্নে আনতে পেরেছেন কোচ নিকো কোভাচ। আর তাতে খরচ হয়েছে ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড। যা তাঁকে বানিয়েছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি ডিফেন্ডার।
৪. ম্যাথিস ডি লিট (আয়াক্স থেকে জুভেন্টাস, ৬৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
যুগ যুগ ধরে বিশ্বমানের ডিফেন্ডার খেলানোর ক্ষেত্রে জুভেন্টাসের জুড়ি নেই। ক্লদিও জেন্টাইল, গায়েতানো চিরেয়া, ফাবিও ক্যানাভারো থেকে শুরু করে এই যুগে আন্দ্রেয়া বারজাগলি, লিওনার্দো বোনুচ্চি ও জর্জো কিয়েল্লিনি—বহু বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার খেলে গেছেন এ ক্লাবে। সে তালিকায় এবার নাম লেখালেন ডাচ তারকা ডি লিটও। কিয়েল্লিনি,বোনুচ্চি, বারজাগলি—ত্রয়ী বহু বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন জুভেন্টাসের হয়ে, বুড়ো হয়েছেন। গত মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসর নিয়ে নিয়েছেন বারজাগলি। জুভেন্টাসের তাই আদর্শ একজন ডিফেন্ডারের বড় দরকার ছিল। ওদিকে মাত্র ১৯ বছর বয়সী আয়াক্সের অধিনায়ক হয়ে মাঠ মাতাচ্ছিলেন ডাচ তারকা ডি লিট। এ ডিফেন্ডারকে কিনতে জুভেন্টাসের খরচ হয়েছে ৬৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
৫. আয়মেরিক লাপোর্তে (অ্যাথলেটিক বিলবাও থেকে ম্যানচেস্টার সিটি, ৫৭ মিলিয়ন পাউন্ড)
ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার পর থেকে কোচ পেপ গার্দিওলা পছন্দসই সেন্টারব্যাক পাচ্ছিলেন না। দুজন সেন্টারব্যাক হিসেবে গার্দিওলা এমন দুজনকে চাচ্ছিলেন, যারা বল পায়ে মিডফিল্ডারদের মতো খেলা গড়ে দিতে পারেন। দুজন সেন্টারব্যাকের মধ্যে একজন বাম পায়ের ও একজন ডান পায়ের খেলোয়াড় চাচ্ছিলেন গার্দিওলা। ডান পায়ের সেন্টারব্যাক হিসেবে গার্দিওলার পছন্দ মতো দলে জন স্টোনস থাকলেও, বাম পায়ের সেন্টারব্যাক ছিল না। নিকোলাস ওটামেন্ডি, এলিয়াকুইম মাঙ্গালারা গার্দিওলার মন ভরাতে পারেননি। যে কারণে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের ফরাসি সেন্টারব্যাক আয়মেরিক লাপোর্তের দিকে নজর দেন গার্দিওলা। লুকাস হার্নান্দেজের মতো পুরো বাই আউট ক্লজ পরিশোধ করে লাপোর্তেকে দলে নিয়ে আসেন গার্দিওলা। খরচ হয় ৫৭ মিলিয়ন পাউন্ড। সেই লাপোর্তে এখন গার্দিওলার অধীনে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
৬. বেঞ্জামিন মেন্ডি (মোনাকো থেকে ম্যানচেস্টার সিটি, ৫২ মিলিয়ন পাউন্ড)
ফরাসি লেফটব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডি তখন মোনাকোর হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন। খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেও। এদিকে গার্দিওলারও তখন একজন গতিশীল লেফটব্যাকের বড় দরকার। আলেক্সান্দার কোলারভ, ফাবিয়ান ডেলফদের দিয়ে কাজ হচ্ছে না। মিলে গেল দুইয়ে দুইয়ে চার! বিশ্বের সবচেয়ে দামি লেফটব্যাক হিসেবে মেন্ডিকে দলে টানলেন গার্দিওলা। এ জন্য মোনাকোকে দিয়ে দিলেন ৫২ মিলিয়ন পাউন্ড।
৭. কাইল ওয়াকার (টটেনহাম থেকে ম্যানচেস্টার সিটি, ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
গার্দিওলা সিটিতে আসার পর সবার আগে যে কাজটা করেন, সিটির বর্ষীয়ান রক্ষণভাগকে একদম ঢেলে সাজান। এ প্রকল্পের আওতায় দলে আসেন ইংলিশ রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার। পাবলো জাবালেতা, বাকারি স্যানিয়াদের বয়স হয়ে যাচ্ছিল। সিটির একটা লেফটব্যাক বড় দরকার ছিল। তখন টটেনহামের হয়ে আলো ছড়ানো রাইটব্যাক কাইল ওয়াকারকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে দলে আনতে তাই কার্পণ্য করেননি গার্দিওলা।
৮. অ্যারন ওয়ান-বিসাকা (ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
বছর দু-এক আগে বর্ষীয়ান রক্ষণভাগ নিয়ে যে সমস্যায় পড়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি, এখন সেই একই সমস্যায় পড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দল ছেড়েছেন পুরোনো যোদ্ধা আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া। ইতালিয়ান রাইটব্যাক মাত্তেও দারমিয়ানও প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। দলে পর্তুগিজ রাইটব্যাক দিওগো দালোত থাকলেও তিনি এখনো বেশ তরুণ। কোচ ওলে গুনার সুলশার তাই এমন একজনকে খুঁজছিলেন যার বয়সও কম, আবার প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। সে কারণে কিছুদিন আগে ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে টানেন ইংলিশ রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকাকে। ওয়াকারের পর সবচেয়ে দামি রাইটব্যাক এখন তিনিই।
৯. ডেভিড লুইজ (চেলসি থেকে পিএসজি, ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড)
২০১৪ সালে ব্রাজিল তারকা ডেভিড লুইজ যখন চেলসি থেকে পিএসজিতে যোগ দিলেন, সবার চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। লুইজ কখনোই বিশ্বসেরা ডিফেন্ডারদের একজন ছিলেন না, ব্রাজিলের হয়ে জার্মানির কাছে বিশ্বকাপে ৭-১ গোলের হার সে কথাটাই যেন জোরে জোরে বলছিল! তাও লুইজের পেছনে পিএসজির টাকা ওড়ানো থামায়নি। ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে এ তারকা ডিফেন্ডারকে দলে নিয়ে আসে দলটি।
১০. জন স্টোনস (এভারটন থেকে ম্যানচেস্টার সিটি, ৪৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)
ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে যোগদান করার ঠিক পর পরই জন স্টোনসকে এভারটন থেকে নিয়ে আসেন পেপ গার্দিওলা। তৎকালীন সময়ে এভারটনের হয়ে খেলা এই তরুণের জন্য সিটি খরচ করে ৪৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। এতেই প্রমাণ হয়, খেলোয়াড় হিসেবে স্টোনসের সামর্থ্যের প্রতি গার্দিওলার কতটা আস্থা ছিল। স্টোনসকে চেয়েছিল চেলসিও। কিন্তু তাদের শত চেষ্টার পরেও সিটিতেই যোগ দিয়েছিলেন স্টোনস। তিন বছর পর সেই স্টোনস এখন গার্দিওলার দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।