কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
আগে হারেইদে নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন।
বর্ষীয়ান এই নরওয়েজিয়ান কোচ ডেনমার্ককে ইউরোয় নিয়ে যাবেন, এমনটাই কথা ছিল। টানা চব্বিশ ম্যাচ অপরাজিত থেকে দলকে ইউরোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতও করেছিলেন তিনি। হ্যাঁ, চব্বিশ ম্যাচের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেই ম্যাচও আছে, কিন্তু সে ম্যাচে ডেনমার্ক হেরেছিল শুটআউটে, নব্বই মিনিটের খেলায় নয়। এমন দুর্দান্ত রেকর্ডের পরও এই কোচের সঙ্গে চুক্তি বাড়ায়নি ডেনমার্ক। এতে করোনা মহামারির জন্য ইউরো না হলেও ২০২০ সালেই চুক্তি শেষ হয়ে যায় হারেইদের। তাঁর জায়গায় কোচের দায়িত্ব পেয়ে যান ক্যাসপার হিউলমান্দ। তরুণ হিউলমান্দের ওপরেই এখন ডেনমার্কের ইউরো-স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব।
ডেনিশ ফেডারেশনের পছন্দ যে খারাপ নয়, তা বোঝা যায় হিউলমান্দের রেকর্ড দেখলে। তাঁর অধীনে ২৩ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে হেরেছে ডেনমার্ক, দুটিই এবারের গ্রুপসঙ্গী বেলজিয়ামের বিপক্ষে। বেলজিয়ামের পাশাপাশি এবার ডেনমার্কের গ্রুপে আছে রাশিয়া ও ফিনল্যান্ড। শক্তিতে বেলজিয়াম এগিয়ে থাকলেও বাকি দুই দলকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আশা করছে ১৯৯২ ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হয়ে রূপকথা গড়া ডেনমার্ক।
দল: ডেনমার্ক
ফিফা র্যাঙ্কিং: ১০
দলে আছেন যাঁরা
গোলকিপার
ক্যাসপার স্মাইকেল (লেস্টার সিটি), ফ্রেদেরিক রোনোউ (শালকে ০৪), ইয়োনাস লোয়েসল (মিতিউলান)
সেন্টারব্যাক
সিমোন কায়ের (এসি মিলান), ইয়ানিক ভেস্টারগার্ড (সাউদাম্পটন), আন্দ্রেয়া ক্রিস্টিয়ানসেন (চেলসি), জোয়াকিম অ্যান্ডারসেন (ফুলহাম), ম্যাথিয়াস জর্গেনসেন (কোপেনহেগেন)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
ড্যানিয়েল ওয়াস (ভ্যালেন্সিয়া), জোয়াকিম মায়েলে (আতালান্তা)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
নিকোলাই বোইলেসেন (কোপেনহেগেন), ইয়েন্স স্ট্রিগার লারসেন (উদিনেসে)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
পিয়েরে এমিল হইবিয়া (টটেনহাম হটস্পার), টমাস ডেলেনি (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড), ক্রিস্টিয়ান নরগার্ড (ব্রেন্টফোর্ড), ম্যাথিয়াস ইয়েনসেন (ব্রেন্টফোর্ড), অ্যান্ডার্স ক্রিস্টিয়ানসেন (মালমো)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন (ইন্টার মিলান)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
রবার্ট স্কভ (হফেনহেইম), আন্দ্রেয়া স্কভ ওলসেন (বোলোনিয়া), মিকেল ডামসগার্ড (সাম্পদোরিয়া)
স্ট্রাইকার
মার্টিন ব্রাথওয়াইট (বার্সেলোনা), ক্যাসপার ডলবার্গ (নিস), ইয়োনাস উইন্ড (কোপেনহেগেন), ইউসুফ পোলসেন (আরবি লাইপজিগ), আন্দ্রেয়া করনেলিয়াস (পারমা)
কোচ
ক্যাসপার হিউলমান্দ
অধিনায়ক
সিমোন কায়ের
ইউরোয় সেরা সাফল্য
চ্যাম্পিয়ন (১৯৯২)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
ফিনল্যান্ড (১২ জুন)
বেলজিয়াম (১৭ জুন)
রাশিয়া (২১ জুন)
শক্তি
রক্ষণ ও মাঝমাঠ—এ দুটি জায়গায় ডেনমার্ক শক্তিশালী। গোলকিপার ক্যাসপার স্মাইকেল বহু বছর ধরেই প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা গোলকিপার। ছোটবেলায় বাবা পিটার স্মাইকেলকে দেখেছেন দেশের হয়ে ইউরো ও প্রিমিয়ার লিগ জিততে। ক্যাসপার প্রিমিয়ার লিগ জিতলেও বাবার মতো ইউরো জিততেও এবার বেশ ভালোই চেষ্টা করবেন ডেনমার্কের এই সহ-অধিনায়ক।
সেন্টারব্যাক হিসেবে এসি মিলান অধিনায়ক সিমোন কায়েরের সঙ্গে খেলতে লড়বেন চেলসির ক্রিস্টিয়ানসেন, ফুলহাম ও সাউদাম্পটনের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো অ্যান্ডারসেন ও ভেস্টারগার্ড। ওদিকে হারেইদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত আক্রমণাত্মক কোচ হওয়ায় হিউলমান্দ দলে এমন কিছু ফুলব্যাক খেলিয়ে থাকেন, যাঁরা নিয়মিত আক্রমণ করতে পছন্দ করেন। ঠিক তেমনই কিছু ফুলব্যাক দলে পেয়েছেন হিউলমান্দ—মায়েলে, ওয়াস, স্ট্রিগার লারসেনের প্রত্যেকেই রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণে পারদর্শী।
মাঝমাঠে খেলা ডেলেনি ও হইবিয়া দুজনই নিজ নিজ ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডর্টমুন্ড ও টটেনহামের কৌশলের অনেকটাই এ দুজনের ফর্মের ওপর নির্ভর করে। আক্রমণ গড়ে দেওয়ায় এক দশক ধরেই ডেনমার্কের মূল ভরসা ইন্টার মিলান মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। এই টুর্নামেন্টে ডেনমার্ক আদৌ ভালো কিছু করতে পারছে কি না, সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করছে এরিকসেনের নৈপুণ্যের ওপর। অবশ্য শুধু এসব খেলোয়াড়ই নয়, এই দলে অনেক খেলোয়াড়ই আছেন যাঁরা নিয়মিত ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে খেলে থাকেন। সম্মিলিত এই অভিজ্ঞতা ডেনমার্কের শক্তির জায়গা।
গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচই ডেনমার্ক খেলবে নিজেদের মাটিতে, কোপেনহেগেনে। এই ইউরোয় যে ঘটনাকে নির্দ্বিধায় ‘চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য’ বলা যেতে পারে।
দুর্বলতা
ধারাবাহিকভাবে গোল করতে পারেন এমন স্ট্রাইকার বা উইঙ্গারের অভাব রয়েছে । বেশ কিছু আক্রমণভাগের খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা ইউরোপে বড় ক্লাবে খেললেও (বার্সেলোনায় আছেন ব্রাথওয়েট, লাইপজিগে পোলসেন, নিসে ডলবার্গ, হফেনহেইমে স্কভ) কেউই ক্লাবে নিয়মিত গোল করতে পারেন না। এটা ভোগাতে পারে দলটাকে।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৪-৩-৩/৩-৪-২-১)
ডেনমার্কে প্রতিভাবান ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডারদের ছড়াছড়ি। যে কারণে কোচ হিউলমান্দ চাইলেই ৪-৩-৩ ও ৩-৪-২-১; দুই ছকেই খেলাতে পারেন দলকে। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে চারজনের রক্ষণ আর দুর্বল দলের বিপক্ষে তিনজন—আপাতত ডেনমার্কের কৌশল এটাই।
৪-৩-৩ ছকে খেললে গোলকিপার স্মাইকেলের সামনে জুটি বাঁধবেন অধিনায়ক কায়ের ও ক্রিস্টিয়ানসেন, দুই ফুলব্যাক হিসেবে খেলবেন ওয়াস ও মায়েলে। মাঝমাঠে ডেলেনি ও হইবিয়া নিশ্চিত করবেন কোনো ধরনের রক্ষণ চিন্তা ছাড়াই যেন এরিকসেন আক্রমণ করতে পারেন। দুই উইঙ্গার ব্রাথওয়াইট ও ওলসেনের সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারেন পোলসেন।
৩-৪-২-১ ছকে খেললে উইঙ্গার ওলসেনের জায়গায় তৃতীয় সেন্টারব্যাক হিসেবে মাঠে নামবেন সাউদাম্পটনের ভেস্টারগার্ড। মিডফিল্ডার থেকে তখন ইনসাইড ফরোয়ার্ড হয়ে যাবেন এরিকসেন। আন্তোনিও কন্তের ৩-৪-৩ ছকে বছরখানেক খেলার পর এরিকসেন এখন এই কৌশলেও খেলা শিখেছেন।
‘আমাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখা উচিত। ১৯৯২ সালেও আমরা জিতেছিলাম, আর আমার মনে হয় খেলোয়াড়দের সেই সামর্থ্য আছে (শিরোপা জেতার)। তাই বলে আমরা কি নিজেদের ফেবারিট ভাবছি? অবশ্যই নয়। আমরা কি শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখছি? অবশ্যই’
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
ডেনমার্কের ১৯৯২ সালের চমক জাগানো সেই দলটির পর তর্কাতীতভাবে এই দলে সবচেয়ে বেশি প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। সবাই যদি নিজ প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারেন, কোচের কৌশলের ঠিকঠাক প্রতিফলন ঘটাতে পারেন, তাহলে আগের সেই কীর্তি ছোঁয়ার পথে থাকতে পারে দলটি। যদিও বাস্তবতা বলছে, কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারে ডেনিশরা।